সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের মতো চোখেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। আর সেই কারণেই কলেজ পড়ুয়া থেকে মধ্যবয়সি, কমবেশি প্রায় সব মহিলারাই রোদে বেরোনোর সময় সানগ্লাস পরতে ভোলেন না। বর্তমানে এটি একটি ফ্যাশন অ্যাকস্সেরিও বটে।
তবে শুধুমাত্র সানগ্লাস পরলেই চলবে না, এর গুণগত মানের দিকটাও খেয়াল রাখা উচিত, নয়তো চোখের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সানগ্লাস কেনার আগে কতকগুলি বিষয় মাথায় রাখা উচিত।
চোখের উপর প্রভাবঃ
সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রে-এর প্রভাবে চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। শুধু তাই নয়,চোখে সানবার্ন-এর কারণে ফোটোক্যারাটাইটিস নামক রোগেরও শিকার হতে পারেন আপনি। এমনকী ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাই চোখের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হন।
চোখের সুরক্ষাঃ
সূর্যের এই ক্ষতিকারক রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে আমরা ইউভি প্রোটেকশন নিয়ে থাকি অথচ চোখের সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা এখনও অনেকেই তেমন ভাবে সচেতন নই। রোদ থেকে চোখ বাঁচাতে বা ফ্যাশন অ্যাকস্সেরি হিসাবে সানগ্লাস তো অনেকেই কিনে পরে ফেলেন, কিন্তু তার কার্যকারিতা কতটা? সেটা আদৌ ইউ ভি প্রোটেক্টেড কিনা, সে বিষয়ে তারা বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল নন। আল্ট্রাভায়োলেট লাইট রেজ যাকে আমরা ইউভিএ অথবা ইউভিবি বলে থাকি– সেটি রেটিনা আর কর্নিয়ার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারে। চোখকে যথাযথ সুরক্ষা দিতে হলে ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস তো বটেই, পাশাপাশি রোদে বেরোনোর আগে ইউভি প্রোটেক্টেড আন্ডারআই ক্রিমও ব্যবহার করতে হবে।
সানগ্লাস কেনার আগে
অনেকের মনে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, সানগ্লাস নাকি গ্রীষ্মের অ্যাকস্সেরিজ। সুতরাং বছরের অন্যান্য সময়ে ব্যবহার না করলেও চলে। তাদের উদ্দেশ্যে বলি— শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা প্রতিটি মরশুমেই আল্ট্রাভায়োলেট রে-র প্রকোপ সমান। গ্রীষ্মের তুলনায় এর ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা কোনও অংশে কম নয়। অতএব সানগ্লাসকে নিজের বন্ধু মনে করে সারাবছর সঙ্গে রাখা দরকার। তবে সঠিক সানগ্লাস বাছতে হলে প্রথমেই লেন্সটি পরখ করে নিতে হবে। চশমাটিকে চোখের ঠিক আধফুট দূরে ধরে কোনও একটি বস্তুকে লক্ষ্য করে এদিক-ওদিক হেলাতে হবে। যদি বস্তুটির আকার স্পষ্টভাবে দেখতে পান, তবে বুঝবেন চশমাটির লেন্স একেবারে পারফেক্ট। আর যদি অস্পষ্ট দেখেন, বুঝবেন লেন্সটি সঠিক নয়।
বাজারে বহু নামিদামি কোম্পানির ইউভি প্রোটেক্টেড সানগ্লাস পাওয়া যাচ্ছে। ৯টি লেয়ার বিশিষ্ট পোলারাইজড্ প্লাস চশমাও বাছতে পারেন আপনি, যেটি ৯৯.৯ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করতে পারে আপনার চোখকে। এছাড়াও চোখের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সানগ্লাস কোম্পানিগুলি মূলত তিনধরনের ভ্যারিয়েশনের কথা মাথায় রাখেন। সেগুলি হল অ্যাভিয়েটর, ওয়েফেরর এবং স্পোর্টস। যদিও বেশিরভাগ মানুষ পছন্দের তালিকায় রাখেন অ্যাভিয়েটর এবং ওয়েফেরর সানগ্লাসই। ফাস্টট্র্যাক পেয়ে যাবেন ৭৯৯-৩,০০০ টাকার মধ্যে। আইডি-র পোলারাইজড্ মডেলগুলি পাবেন ১,৪৪৯-২৫০০ টাকার মধ্যে আর রে-ব্যানের অ্যাভিয়েটর মডেলগুলির দাম পড়বে ৮৪৯-১২,৯৯০ টাকা এবং ওয়েফেরর মডেলগুলি দাম ৫,৭৯০-১১,০০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া পেয়ে যাবেন ভোগ ব্র্যান্ড। এই কোম্পানিটি মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করেছে কিছু সানগ্লাস, যেগুলো রাউন্ড বা ওভাল শেপ-এ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। কখনও কখনও হালকা নীল বা ব্রাউন ট্রিনটেড গ্লাসও থাকছে। রেঞ্জ শুরু হচ্ছে ৬৯৯-৫,৩১০ টাকা পর্যন্ত।
যদি নতুন কিছু ট্রাই করতে চান সেক্ষেত্রে স্প্রি-এর পোলারাইজড্ উয়োমেন সানগ্লাসের রেঞ্জ দেখতে পারেন। ব্ল্যাক, ভায়োলেট, স্প্লিট, গ্রে, টরটয়েজ, ব্রাউন, ব্ল্যাক লেগুন রঙের নানা আধুনিক ফ্রেমে পাওয়া যায় এই সানগ্লাসগুলি। এটি ক্রমশ স্ট্রিট ওয়্যার হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এগুলো একটু কস্টলি।
যদি মনে করেন আপনার জন্য কস্টলি হয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে ফাস্টট্র্যাক বা আইডি কোম্পানির ৭০০-৮০০ টাকার মডেলগুলি বাছতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন কখনওই ফুটপাথ থেকে লোকাল কোম্পানির জিনিস ভুলেও কিনবেন না। চোখের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ একেবারেই নয়। তাই চোখ বাঁচাতে চশমা কিনুন দেখেশুনে।
তাছাড়া ফ্রেম-এর দিকটাও নজর দেওয়া জরুরি। এমন ফ্রেম বাছুন যা আপনার পুরো চোখকে কভার করবে। এটি শুধু সূর্যরশ্মি-ই নয়, ধুলোবালি থেকেও রক্ষা করবে আপনার চোখ। সুতরাং এমন চশমা বাছুন যা আপনার চোখকে সুরক্ষা প্রদান করার সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষণীয়ও করে তুলবে।
সানগ্লাসের যত্ন
- ব্যবহার করার আগে প্রথমে হালকা গরম জলে চশমা ধুয়ে নিন।
- কয়েক ফোঁটা লোশন-ফ্রি ডিসওয়াশ দিয়ে হালকা হাতে রাব করে নিন।
- আবার হালকা গরম জলে ভালো করে ধুয়ে শুকনো কটন কাপড়ে মুছে নিন।
- কটন কাপড়ের পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার লেন্স ক্লথও ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব তাড়াতাড়ি ড্রাই হয়ে যাবে।