আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পার্স এখন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরে বেরোবার জন্যে যা-যা কিছু প্রয়োজন যেমন টাকা পয়সা, মেক-আপের প্রোডাক্টস, চাবি, চশমা, সেল ফোন ইত্যাদি আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা পার্সে ভরে নিয়ে বেরোতে ভুলি না। ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতেও পার্সের অবদান অনেকখানি। নানা ধরনের পোশাক যেমন আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি পার্স-ও ব্যক্তিত্বের গভীরতাকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

বহু প্রাচীনকাল থেকেই হাতে ব্যাগ নেওয়ার প্রচলন রয়েছে। পার্স নামটি ইংরেজি শব্দ। আগে বটুয়া, ঝুলি বহু নামেই ব্যাগের ব্যবহার হতো। পুরুষেরা জামা অথবা ফতুয়ায় লুকোনো পকেটে, বটুয়ায় ভরে মূল্যবান সামগ্রী রাখত। মেয়েরা অনেকে টাকা পয়সা বটুয়ায় ভরে কোমরে বেঁধে রাখত।

কাপড়-চোপড় সঙ্গে নেওয়ার জন্যে আগে কাপড়ের মধ্যে একসঙ্গে সব বেঁধে নেওয়া হতো। মুখটাতে গাঁট বাঁধা হতো বলে গাঁটরি বলত লোকে। এটা পিঠে ঝুলিয়ে বা কাঁধে করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া যেত। পরে বড়ো থলিতে করে হাতে ঝুলিয়ে, জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া শুরু হল। দেখতে যাতে খারাপ না-লাগে তার জন্যে নানা কারুকার্যে সজ্জিত করে ব্যাগ বা থলিকে সুন্দর দেখাবার চেষ্টা করা হতো।

এরপর ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য প্রভাবে সাজের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাক্সেসরিস-এও পরিবর্তন আসতে থাকল। হাতে জায়গা করে নিল নানা বাহারের পার্স। আর এখন তো বাজার ছেয়ে গেছে নানা ধরনের ডিজাইনার পার্সে। পোশাকের সঙ্গে মিলমিশ খাইয়ে পার্স নেওয়ার প্রচলন এখন। এছাড়াও কোথায় যাওয়ার জন্যে পার্স ব্যবহার হচ্ছে, সেটা মাথায় রেখেও নানা সাইজের, নানা মেটেরিয়ালের তৈরি পার্স এখন পাওয়া যায় মার্কেটে। লেডিজ শপিং ব্যাগ, বিডেড পার্স, ডিজাইনার ক্লাচ ব্যাগ, ফ্যান্সি ক্লাচ ব্যাগ, স্ট্র্যাপড ক্লাচ ব্যাগ এবং ওয়েডিং ক্লাচ ব্যাগ নানা রঙের এবং স্টাইলের পাওয়া যায়।

কাঁধ থেকে সাইডে ঝোলানো স্লিংগ ব্যাগও এখন অল্প বয়সি মেয়েরা এবং মহিলারা উভয়েই পছন্দ করছেন ব্যবহার করতে। এগুলি দেখতেও যেমন আধুনিক তেমনি ব্যবহার করাও খুব সুবিধা। ব্যাগগুলিতে জায়গাও থাকে যথেষ্ট। বর্তমানে আধুনিকাদের পছন্দের ফ্যাশনে রয়েছে বক্স ক্লাচার্স, নিয়ন ক্লাচার্স এবং বিগ সাইজ ক্লাচার্স।

বক্স ক্লাচার্স – সাধারণত চ্যাপটা এবং বক্সের আকারে হয় এই ক্লাচার্সগুলি। লেদার এবং অনেক ধরনের মেটেরিয়ালেই বক্স ক্লাচার্স পাওয়া যায়। এগুলিতে ক্রেডিট কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, টাকা ক্যারি করা খুব সুবিধে।

নিয়ন ক্লাচার্স – পিংক, ইয়েলো, অরেঞ্জ ইত্যাদি ব্রাইট এবংঞ্জভাইব্র্যান্ট কালারে ব্যাগগুলি কিনতে পওয়া যায়, যা রং অনুযায়ী পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে নিতে অল্পবয়সি মেয়েরা পছন্দ করে। লেদার এবং কাপড়ের তৈরি দুই ধরনেরই পাওয়া যায়।

বিগ সাইজ ক্লাচার্স – এই ব্যাগগুলি আকারে একটু বড়ো হয়। যার মধ্যে মেক-আপের জিনিস, সারাদিনের প্রয়োজীয় কাগজপত্র, জিনিস, বই-খাতা খুব সহজে জায়গা করে নেয়। অফিসে যাঁরা কাজ করেন এবং কলেজ ছাত্রীরা এই ব্যাগগুলি নিতে পছন্দ করেন।

আজকাল যাঁরা ব্যাগ অথবা ক্লাচ ব্যাগ ডিজাইন করছেন তাঁরা বিশেষ করে অকেশন, পার্টি এবং ওয়েডিং মাথায় রেখে ব্যাগের স্টাইলাইজিং-এর কাজ করছেন। অনেক ডিজাইনার-রা আবার পুরোনো ফ্যাশনকেই মর্ডানাইজ করে তুলতে বেশি আগ্রহী। এদের মধ্যে প্রখ্যাত পার্স ডিজাইনার নিনাদ রাণে-র নাম করতেই হয়।

রাণে-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, পুরোনো ফ্যাশনকেই মডার্ন করার কথা কেন ভাবলেন তিনি? তাঁর উত্তর ছিল, একজন গ্রাহকের চাহিদা মতো লেদারের জায়গায় শাড়ির বর্ডার দিয়ে তিনি পার্স বানিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রাহকের পছন্দ তো হয়েইছিল, নিনাদেরও জিনিসটা এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে তিনি ওই ধরনের পার্স বানানো শুরু করেন। তবে সবথেকে গ্রাহকরা যেটি বেশি পছন্দ করেন সেগুলি হল ওয়ারলি প্রিন্ট পার্স, ফ্যান্সি পার্স, পৈঠানি বর্ডার (ব্রোকেড) পার্স, বেনারস ফ্যাব্রিক পার্স এবং খণ্ড ফ্যাব্রিক পার্স।

ওয়ারলি প্রিন্ট পার্সঃ  প্রাচীনকালে পাথরের গায়ে খোদাই করা যে-ধরনের আঁকা পাওয়া গেছে তার উপরেই বেস করে এই প্রিন্ট করা হয়। এই ফেব্রিক দিয়ে অফিস ব্যাগ, ক্লাচাস, স্যাক এবং স্মল প্যাকেট পার্স তৈরি করা হয়।

ফ্যান্সি পার্সঃ  এর মধ্যে আছে ক্লাচার্স, শোল্ডার অফিস ব্যাগ, ট্র্যাভলিং এবং স্লিংগ ব্যাগ।

পৈঠানি বর্ডার ক্লাচার্সঃ  পৈঠানি টিসু ফ্যাব্রিক এবং জামেওয়ার ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি এই পার্সগুলি অনুষ্ঠান এবং বিয়েতে বেশি ব্যবহার হয়। শাড়ি বা ড্রেসের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে এই ব্যাগ ব্যবহৃৎ হয়।

বেনারস ফেব্রিক পার্সঃ  বেনারসি কাপড় দিয়ে তৈরি এই ফ্যান্সি পার্সগুলি সাধারণত অনুষ্ঠান এবং বিয়ের পারপাসেই ব্যবহার করা হয়।

খন্ড ফ্যাব্রিক পার্সঃ  ছোটো ছোটো নানারকমের কাপড় জুড়ে জুড়ে আকর্ষণীয় এই ব্যাগগুলি তৈরি করা হয়। কন্ট্রাস্ট অথবা ম্যাচিং পোশাকের সঙ্গে এই ধরনের ব্যাগ বেশি ব্যবহার হয়।

আপনার সাজগোজ ও ব্যক্তিত্বের অনেকটাই নির্ভর করে আপনার পোশাক ও অ্যাক্সেসরির উপর। তাই পার্স বাছাইয়েও আপনার রুচির পরিচয় দিন এবং তৈরি করুন আপনার ফ্যাশন স্টেটাস।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...