সদ্যোজাত শিশু যখন পৃথিবীর আলো দেখে, তখন নার্সরা তাদের ধবধবে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে মায়ের কোলে তুলে দেন। পৃথিবীতে পদার্পণ করার পর এটাই তার প্রথম পোশাক। কিন্তু দু-একদিন বাদেই প্রয়োজন পড়ে বাচ্চার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের।
বাচ্চার যথাযথ লালনপালনের জন্য প্রথম দিন থেকেই জামা, ন্যাপি, ডাইপার, টাওয়েল, টিস্যু পেপার, কটন বল, শোওয়ানোর জন্য ছোট্ট গদি, বালিশ, স্নানের জন্য টাব, মগ, সাবান, মালিশের জন্য বেবি অয়েল এবং পাউডার থাকাটা ভীষণ জরুরি। সেই কারণে পরিকল্পনামাফিক শিশুদের প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক জিনিসগুলি আগে থেকেই কিনে রাখা উচিত।
কিনুন আরামদায়ক পোশাক –
বাচ্চার জন্য জামাকাপড় কেনার সময় খুব সাবধানে, দেখেশুনে তবেই কেনা উচিত। বাজারের বিভিন্ন বিপণিতে সহজলভ্য সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের স্টাইলিশ পোশাকের দিকে না ঝুঁকে, নরম, আরামদায়ক পোশাকই বাছুন। এই সময়ে বাচ্চারা সর্বদা শোয়া অবস্থাতেই থাকে। বড়ো বড়ো বাটনওয়ালা ঝাঁ চকচকে মেটেরিয়াল বাচ্চার অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই এমন পোশাক নির্বাচন করুন, যাতে আপনার বাচ্চা কমফর্ট ফিল করবে।
শীতকালের কথা মাথায় রেখে, সুতির কাপড়ের পাশাপাশি পশমের তৈরি টুপি, ফুলপ্যান্ট, মোজা, সোয়েটার কিনে রাখুন এখন থেকেই। এছাড়াও ফ্লানেল-এর পোশাকও কয়েক সেট অবশ্যই নিয়ে রাখুন। এগুলো বেশ হালকাও। বর্ষাবাদলের দিনে ফ্লানেল কাপড় ভীষণ কাজে আসে। একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন, টুপি কেনার সময় দেখে নেবেন, যাতে এতে আপনার বাচ্চার মাথার সঙ্গে সঙ্গে কান দুটিও যেন ঢাকা থাকে। কারণ ঠান্ডাটা কান থেকেই বেশি লাগে।
ন্যাপি এবং ডাইপার –
পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সারাদিনের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ন্যাপি আর ডাইপার থাকাটাও জরুরি। বর্তমানে ব্যবহারের সুবিধার কারণে ডাইপার এতটাই অত্যাবশ্যক জিনিস হয়ে পড়েছে যে, প্রতি দু-দিন অন্তর অন্তর মায়েদের মনে হয় আরও কয়েকটা কিনে নিলে ভালো হতো। তাই সারা সপ্তাহের হিসাবে মোটামুটি কয়েকটা প্যাকেট কিনে রাখা ভালো।
পোশাক-আশাক, ন্যাপি, ডাইপার ছাড়াও বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে বাচ্চাদের জন্য। যেমন– বেবি পাউডার, বেবি ক্রিম, বেবি লোশন, বেবি অয়েল, বেবি শ্যাম্পু, বেবি হেয়ার ব্রাশ ইত্যাদি। বাজারে এমন অনেক প্রসাধন সামগ্রীর কোম্পানি আছে, যাদের উপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়। এগুলির পুরো সেটও পেয়ে যাবেন। মালিশের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন, তবে ক্রিম বা লোশনের ব্যাপারে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা জিনিস বাছাই যুক্তি সাপেক্ষ, কারণ বাচ্চাদের ত্বক ভীষণ সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
বোতল এবং টাম্বলর
সাধারণত নবজাত শিশুদের আলাদা করে জলপানের প্রয়োজন পড়ে না। তারা মায়ের দুধের উপরই নির্ভরশীল। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়ের অসুস্থতার কারণে বা যথাযথ দুধ তৈরির অভাবে বাচ্চাকে কৌটোর দুধও দেওয়া হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠা বাচ্চার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে ফিডিং বোতল এবং বড়ো আকারের পাত্র সবকিছুরই সাফসাফাইয়ের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয় মায়েদের। এই ধরনের জিনিসপত্রকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত জলে অন্তত আধঘন্টা ডুবিয়ে রাখা উচিত। আজকাল ফিডিং বোতল, দুধের বাটি, চামচ জীবানুমুক্ত করার জন্য ইলেকট্রনিক স্টেরেলাইজারও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর ব্যবহারও বেশ সুবিধাজনক। চাইলে বাচ্চার কথা ভেবে আপনিও একটা নিয়ে রাখতে পারেন।
নবজাত শিশুরা প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা ঘুমিয়েই থাকে। কাজেই তাদের জন্য আমারদায়ক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিছানা থাকাটা মাস্ট। শুধু তাই নয়, বাচ্চারা তাদের কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। সমস্তটাই মায়েদের বুঝে নিতে হয়। এর অন্যথা হলে বাচ্চারা ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে। কমফর্টের ব্যাপারে বালিশ একটা বড়ো ফ্যাক্টর। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠারা তুলো বা স্পঞ্জের বালিশের ঘোর বিরোধী। কিন্তু বাচ্চার মাথার সঠিক গঠনটাও জরুরি। বাজারে বিশেষ প্রকারের বেবি পিলোরও অভাব নেই। কিন্তু বাংলায় চলে আসা সেই পুরোনো রীতি অনু়যায়ী সরষে ভরা বালিশ আজও প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এতে নাকি মাথার গঠন সঠিক হয়।
আজকাল গ্রাম কিংবা শহর, সর্বত্রই মশার প্রকোপ। তাই আনুষঙ্গিক জিনিসের পাশাপাশি বেবি কাটের মশারি নিতে ভুলবেন না।
নবজাত শিশুর জন্য উপহার –
আমাদের দেশে নবজাত শিশুর মুখ দেখার একটা রেওয়াজ আছেই। আত্মীয়পরিজনরা দলে দলে এসে বাচ্চাকে দেখে যান। সঙ্গে গিফট হিসাবে আনেন বাচ্চার ব্যবহারের কিছু জিনিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই জিনিস হয়তো তিন-চার সেট হয়ে গেল। এসব ব্যাপারে বিদেশ সত্যিই আমাদের থেকে খানিক এগিয়ে। বিয়ে হোক কিংবা বাচ্চার মুখ দেখার অনুষ্ঠান, তারা পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজন মতো গিফট দেন। এই কনসেপ্ট সত্যিই দারুণ। এটা আমাদের দেশেও শুরু করা যেতে পারে।
টুকটাক আরও কিছু –
বাচ্চা জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে আনুষাঙ্গিক আরও কিছু জিনিসের দরকার হয়। দুধ খাওয়াবার জন্য বোতল, বাটি, ঝিনুক, চামচেরও প্রয়োজন। দুধের বোতল দুটো সাইজের রাখা উচিত, একটি ২০০ মিলি এবং অপরটি ২৫০ মিলি। এছাড়া বোতল পরিষ্কার করবার ব্রাশ, বড়ো একটা পাত্র, যাতে সাবানজল করে কিছু জিনিস ডুবিয়ে রাখা যায় এবং সাবানজলে ফোটানোও যায়। সঙ্গে স্টেরিলাইজার, ফ্লাস্ক, বাইরে যাওয়ার জন্যে ইনসুলেটেড পিকনিক বক্স এবং মেজারিং স্পুন (চামচ)। অবশ্যই দুটি ফ্লাস্ক রাখুন। ওয়াটার কেটল একটি জরুরি জিনিস যা যখনতখন দুধ গোলার জন্য বা জল ফোটানোর কাজে লাগে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে রাখুন, প্রতিবার বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার আগে নিজে ব্যবহার করার জন্য।
এগুলি ছাড়াও আরও বেশ কিছু জিনিসেরও প্রয়োজন হয়। যেমন গেলাস, রাবার নিপল, বোতলের সঙ্গে ডিসপোজেবল লাইনার, মেজারিং জাগ, প্যাকেট কাটার জন্য ছোটো কাঁচি, ছোটো প্লাস্টিকের ছুরি, বোতলে দুধ ঢালবার জন্য একটি ফানেল, গলায় লাগাবার জন্যে কয়েকটি বিব্, বড়ো তুলোর প্যাকেট এবং পুরোনো সুতির শাড়ি কেটে নরম কাপড়ের চৌকো করে কাটা বেশ কিছু টুকরো। আর বাড়িতে তৈরি কাঁথার তো কোনও জবাব নেই। মা-দিদিমার আদরের ছোঁয়া সেই সব কাঁথায় যেন মিশে থাকে। প্রয়োজনে, আগে থাকতেই ক’টা তৈরি করিয়ে নিন।