ধর্মান্ধতা যেমন নারীর ক্ষতি করে চলেছে, ঠিক তেমনই কিছু ক্ষেত্রে আইনের অনুশাসনও নারীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করছে। আর এই দমননীতির পরিবর্তনের জন্য সরকার আইন পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিলেও, তা এতটাই ধীরগতিতে চলছে, যা সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা আইন ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন এবং তার চড়া মূল্যও দিতে হচ্ছে তাদের।

আবার এমন এক আইন তৈরি হতে চলেছে, যেখানে টেস্ট টিউব বেবি-র বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে মেডিকেল প্রক্রিয়ার দ্বারা। অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন টেকনোলজি (রেগুলেশন) বিল ২০২১ এমন এক আইন, যা আইভিএফ বা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন-কে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এতদিনে এই আইভিএফ-এর বিষয়টি সাধারণ আইনের অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। অথচ এতদিন এই নিয়ে কিন্তু কোনও সমস্যাই তৈরি হয়নি। বরং আইভিএফ-কে মাধ্যম করে লক্ষ লক্ষ সন্তানহীন দম্পতির সন্তানলাভের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিন্তু এখন  আইভিএফ সেন্টারগুলিকে বড়ো বড়ো সমস্যার আঁতুড়ঘর মনে করা হচ্ছে। অবশ্য নতুন এই আইন বলবৎ হলে কী হবে, তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে।

দুঃখের বিষয় এই যে, আজকাল সরকারি আইনের পরিণাম কৃষি আইনের মতো হিতে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তো আবার আইনের সুফল ভোগ করে সুবিধেবাদীরা। এর মধ্যে ভণ্ড ধার্মিক থেকে অসাধু ব্যবসাযী, অনেকেই আছে স্বার্থান্বেষীর তালিকায়। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল এই যে- এই আইন চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত স্পেশাল আইভিএফ ক্লিনিকের রমরমা বাজার বন্ধ করার জন্য হতে চলেছে, নাকি কর্পোরেট হাসপাতালগুলির ব্যবসাযিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য!

মনে রাখা দরকার, প্রত্যেক আইনেরই একটা উলটো পিঠ আছে। অর্থাৎ, কুফল আছে। সারোগেসি, গর্ভপাত, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রভৃতিতে আইন করে চিকিৎসকদের হাত বাঁধার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল পাওয়া যাবে তো? যারা প্রকৃত চিকিৎসক, তারা সরকারি হুকুম তামিল করতে বাধ্য হবেন না তো? আইনের অনুশাসনে গোপনীয়তা রক্ষা হবে তো?

এই প্রশ্ন উঠে আসছে আইনের বিরোধিতা করার জন্য নয়। আসলে, স্বাস্থ্যজগৎ তো নিষ্কলুষ নয়, তাই ভয় জাগে মনে। এই এআরটি আইন নারীর শরীর-মনে নতুন ভাবে যন্ত্রণা দেবে না তো? সমাজে নতুন করে অন্ধ বিশ্বাস  জাঁকিয়ে বসবে না তো?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...