একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার অগ্নিদেব মিত্র। মনের মতো একটা বড়োসড়ো বাড়ি তাঁর অনেকদিনের স্বপ্ন। যদিও সাজানো তিন কামরার একটা ফ্ল্যাট তার বর্তমান ঠিকানা। তবু বাড়ি করার যে বাসনা বাঙালির চরিত্রগত, তা থেকে তিনি বাদ পড়েন না। ছোটো পরিবার আর আবাল্য বন্ধুকে নিয়ে বেহালার একটু ভিতর দিকে বেশ বড়ো একটা প্লট একদিন দেখেই এলেন। সকলেরই পছন্দ নিরিবিলি, খোলামেলা এই জমি। জমি কেনা ও রেজিস্ট্রিও তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। কিন্তু কিছুদিন পর জমি দেখতে গিয়ে অগ্নিদেব দেখেন, সেখানে দুটি সাইনবোর্ডে দুজনের নাম লেখা, যারা দুজনেই দাবি করছেন এই জমির মালিক তারাই। জিজ্ঞাসাবাদ করায় জানা গেল, এরা দুজনেই এই জমি কিনেছেন এবং বর্তমানে প্রকৃত মালিকানা নিয়ে আদালতে কেস চলছে। সমস্ত ঘটনা জানার পর অগ্নিদেব বুঝতে পারেন তিনিও এই ষড়যন্ত্রের শিকার, তাকেও জমি বিক্রি করে ঠকানো হয়েছে।
একই জমি বিভিন্নজনকে বিক্রির নামে মানুষকে ঠকানো কোনও নতুন ঘটনা নয়। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হল, প্রত্যেকের কাছেই বিক্রয়বাবদ সমস্ত কাগজপত্র সঠিকই ছিল কিন্তু বিক্রয়কারীর ভুয়ো ঠিকানা ছিল। জানা যায়, এর আগেও ওই ডিলার একইরকমভাবে একই জমি বহুবার বিক্রি করেছে। তাই, অগ্নিদেবের মতো যাতে ঠকতে না হয়, তার জন্য জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকানঘর ইত্যাদি কেনার আগে বিশেষভাবে খোঁজ খবর নেওয়া উচিত।
অনুসন্ধান
যে-কোনও স্থাবর সম্পত্তি কেনার আগে এটা জানা দরকার যে, ওই সম্পত্তির বর্তমান ব্যবহারিক মালিক কে? সম্পত্তিটি যে এলাকায় অবস্থিত, সেখানকার রেকর্ড অফিস থেকে এটা জানা উচিত যে, কার নামে আছে সম্পত্তিটির মালিকানা, কোনও আদালতে বিচারাধীন হয়ে আছে কিনা বিষয়টি, কোনও ব্যাংক, সোসাইটির কোনও লোন আছে কিনা কিংবা শরিকি বিবাদ আছে কিনা– প্রভৃতি বিষয়গুলি। সম্পত্তিটির কোনও ট্যাক্স যেমন ভূমিকর, জলকর বাকি পড়ছে কিনা, এই বিষয়টিও জানা উচিত। এই সমস্ত তথ্য জানার সবচেয়ে সরল পন্থা হল, সমস্ত বিবরণ সম্বলিত কাগজ এবং নিজেকে একজন ক্রেতা বলে গণ্য করে লিখিত দাবিপত্র সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে এবং মিউটেশন হয়ে গিয়ে থাকলে ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমা দিয়ে নিজে অনুসন্ধান করা এবং ওই একই তথ্য সম্বলিত যাবতীয় নথি কোনও প্রথম শ্রেণির দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা এবং পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা যে, এই সম্পত্তির অন্য কোনও মালিক আছেন কিনা, থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করুন।