প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রযোগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।

ভুজঙ্গাসন

ভুজঙ্গ একটি সংস্কৃত শব্দ। যার অর্থ সাপ। অনেকের মতে, ভুজঙ্গ আসলে কোবরা সাপ। তাই ভুজঙ্গাসন-কে ইংরেজিতে বলা হয় কোবরা পোজ। এই আসনটি অনুশীলন করলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

পদ্ধতি : প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ভুজঙ্গাসন করার প্রস্তুতি নিন। এর জন্য একবার বাম দিকে, একবার ডান দিকে ঘাড় ঘোরাবার পর, মাথা সোজা রেখে থুতনি মাটিতে ছোঁয়ান। এরপর দুই হাতে ভর করে, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। এক্ষেত্রে নাভি থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে ছুঁইয়ে রাখতে হবে। দৃষ্টি থাকবে আকাশের দিকে কিন্তু শরীরি ভঙ্গিমাটি তৈরি হবে ঠিক সাপের ফণা তোলার অবস্থার মতো। এই বিভঙ্গে ৩০ সেকেন্ড থাকার পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে দশ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় করতে হবে আসনটি। এভাবে অন্তত পাঁচবার আসনটি অভ্যাস করুন।

উপকারিতা : এটি মেরুদণ্ডকে নমনীয় এবং সুস্থ রাখে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গলা এবং পিঠের ব্যথা নিরাময় করে। লিভার সচল ও স্বাভাবিক রাখে। পেটে মেদ জমতে দেয় না। হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শ্বাসকষ্ট কমে এবং শরীর থাকে প্রাণচঞ্চল।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না। আর যাদের শরীরে কোথাও সার্জারি হয়েছে কিংবা যাদের হার্নিয়া আছে, তারা এই আসন করার ঝুঁকি নেবেন না।

Health
Dhanurasana                                                         Model Anusua Das

ধনুরাসন

এই আসনটি সম্পূর্ণ হলে শরীর ঠিক ধনুকের মতো রূপ পায়, তাই এটিকে ধনুরাসন বা বো-পোজ বলা হয়। নিয়মিত এই আসন করলে প্রায় হাফ ডজন উপকার পাবেন।

পদ্ধতি : উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুটি পা মাটি থেকে উপরের দিকে তুলুন এবং দুটি হাত দিয়ে দুটি পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ধরুন। এবার হাতের সাহায্য নিয়ে ধীরে ধীরে পা দুটিকে মাথার দিকে টেনে নিয়ে যান। আর এই হাত দিয়ে পা টানলেই, মাথা এবং বুকও খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে পায়ের দিকে এগোবে। তখন দেখা যাবে, কোমরের নীচের অংশটুকুই শুধু মাটির সংস্পর্শে আছে, আর হাত, পা, মাথা এবং বুকের সাহায্যে শরীর ঠিক ধনুকের রূপ নিয়েছে। এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকার পর, আগের অবস্থায় ফিরে যান। কুড়ি সেকেন্ড বিশ্রামের পর আসনটি পুনরায় করুন। অন্তত পাঁচবার করা চাই ধনুরাসন।

উপকারিতা : এই আসন করলে পেটে মেদ জমবে না। হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস ভালো কাজ করবে। শ্বাসকষ্ট কমবে। রক্ত-সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কোমরে, পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা থাকবে না। শরীরের সমস্ত মাংসপেশী নমনীয় থাকবে। মানসিক চাপ কমবে। মহিলাদের পিরিয়ডকালীন ব্যথা-যন্ত্রণা লাঘব হবে।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিালারা এই আসন করবেন না। শরীরের কোথাও কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন না করাই ভালো।

Health
Halasana                                                                 Model Anusua Das

হলাসন

হাল বা লাঙল ব্যবহার করা হয় কৃষি কাজে। অর্থাৎ, এই যন্ত্রটি দিয়ে জমির মাটিকে চাষের উপযুক্ত করে তোলা হয়। আর এই আসনটিও দেখতে লাগে ওই লাঙল বা হালের মতো। তাই এটিকে হলাসন বা প্লাও-পোজ বলা হয়। প্রতিদিন দুবার (সকাল-বিকেলে) এই আসন করলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে।

পদ্ধতি : শবাসনে থাকুন প্রথমে। এরপর পা দুটিকে জোড় করে উপরে তুলুন এবং ধীরে ধীরে মাথার পিছনে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ছোঁয়ান দুই পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ। এই ভঙ্গিমায় আসতে অসুবিধা হলে, দুই হাতের সাহায্য নিন। অর্থাৎ, হাত দুটি দিয়ে কোমরের পিছনে সাপোর্ট রেখে পা-সমেত পুরো শরীরটাকে উপরে তুলুন। আর দুই পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ যখন মাথার পিছনের মাটি স্পর্শ করবে, তখন হাত দুটিকে কোমরের পিছনের দিকে ছড়িয়ে দিন মাটিতে। এই ভাবে হাল বা লাঙলের শেপ-এ থাকুন ৩০ সেকেন্ড। তারপর শবাসন-এ ফিরে এসে ২০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় করুন আসনটি। অন্তত পাঁচবার অনুশীলন করুন এই হলাসন।

উপকারিতা : পিঠ, কোমর এবং পায়ের মাংসপেশী নমনীয় এবং মজবুত থাকবে। দূর হবে ব্যথা-যন্ত্রণা। মেরুদণ্ড থাকবে সুস্থ ও স্বাভাবিক। ক্লান্তি হ্রাস পাবে। মানসিক চাপ কমবে। স্নাযুরোগ থেকে মুক্তি পাবেন। থাইরয়েডের সমস্যা কমবে অনেকটাই। মেনোপজ-এর পরেও মানসিক অবসাদ থেকে মুক্ত করবে এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সতর্কতা : গর্ভবতী মহিলারা এই আসন করবেন না এবং শরীরে কোনও সার্জারি থাকলেও এই আসন করা থেকে বিরত থাকুন।

মডেলঃ অনুসূয়া দাস।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...