প্রজাপতি বিস্কুট-এর ‘শাওন’ থেকে সোয়েটার-এর ‘টুকু’ — এই কন্যাকে হঠাৎই ভালোবেসে ফেলেছেন বাংলা ছবির দর্শকরা।ঠিক এক মাস পরে অর্থাৎ আগামী ১৩ আগস্ট রুপোলি পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা দেব ও ইশা অভিনীত ছবি ‘গোলন্দাজ’।ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে, ইশা সাহা এখন খুবই জনপ্রিয় মুখ। নেক্সট ডোর গার্ল-এর সাফল্য আর বাঙালি মেয়ে লাবণ্য নিয়ে মন কেড়েছেন সবার। লকডাউন-এর পরিস্থিতিতে টেলিফোনে আড্ডা দিলেন ইশা। শেয়ার করলেন নানা কথা।
পড়ছিলেন আইন, সেখান থেকে একেবারে সিরিয়ালে অভিনয়। এই ঘটনাটা ঘটল কী করে?
ঘটনাটা একটু অদ্ভুত-ই। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। কারণ আমার পরিবারে লইয়ার-ও কেউ নেই আবার অ্যাক্টরও কেউ নেই। ২০১৫-তে কলেজের ফাইনাল ইয়ার হয়ে যাওয়ার পর, মনে হয়েছিল পার্টটাইম কিছু কাজ করি। সেই হিসেবে একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে জয়েন করি। সম্ভবত একটা ইভেন্ট-এ, একটি চ্যানেলের একজন পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি আমায় কিছু ছবি পাঠাতে বলেন। এর কিছুদিন পর, আমার হঠাৎ অডিশন-এর ডাক পড়ে। অডিশন কী জিনিস তখন সেটাই জানতাম না। আমায় বলা হয়েছিল, ওটা কঠিন কিছু নয়, একটা স্ক্রিপ্ট দেওয়া হবে, সেটা অনুযায়ী পারফর্ম করতে হবে।
বলাইবাহুল্য খুব খারাপ অডিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে হঠাৎ একদিন ফোন এল। আমি সিলেক্টেড। বাবা বললেন, কী দরকার বেশ তো পড়াশোনা করছ। আমি বললাম, সেই তো কোর্টেই যাব একমাস পরে, একটু দেখে নিই না। এরপর ওয়ার্কশপ এবং শেষ পর্যন্ত আমার প্রথম সিরিয়ালে অভিনয়, ঝাঁঝ লবঙ্গফুল। একটু দেখি, একটু দেখি করতে করতে আমার আর কোর্টে যাওয়া হল না, হয়ে গেলাম অভিনেত্রী।
প্রথম দিন ক্যামেরা ফেস করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সমস্ত ফিলিংস যেন বন্ধ হয়ে যায় ওই মুহূর্তটা-তে (হাসি)। সিরিয়াসলি যারা কোনও দিন ক্যামেরা ফেস করেনি, তাদের জন্য দুম করে ক্যামেরা ফেস করাটা সত্যি খুব ডিফিকাল্ট কাজ। বড়ো ইউনিট, চারপাশে লোকজন, সহঅভিনেতা, ডায়লগ বলার প্রেশার, আলো নেওয়ার প্রেশার সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত অনুভতি। তবে কী, ওই যে নার্ভাসনেস, ওটাই একটা সময় গিয়ে জেদটাও বাড়িয়ে দিয়েছিল হয়তো। মনে হয়েছিল, পারতেই হবে আমায়। আমার মনে আছে, শুটিং চলাকালীনও, আমায় ডায়ালগ বলতে বলতে রান্না করতে হতো। ওই সিনগুলোতে, কিছুতেই আমি দুটো কাজ একসঙ্গে করতে পারতাম না। ডায়ালগ বললে হাত থেমে যেত, বা উলটোটা। তো এটাও শিখেছি কাজ করতে করতে। তখন ওটা লার্নিং প্রসেসের মধ্যেই ছিল।
পরিবারের সাপোর্ট কতটা ছিল?
প্রাথমিক ভাবে বাধা পাইনি ঠিকই কিন্তু বাবা দ্বিধায় ছিলেন স্বাভাবিক কারণেই। আসলে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বাইরে থেকে মানুষের একরকম ধারণা থাকে। কখনও সেটা ভালো, কখনও খারাপ। এর কিছুটা সত্যি, কিছুটা হয়তো আবার সত্যিও নয়। সেই জায়গা থেকে একটা প্রোটেক্টিভ ফিলিং আমার মা-বাবারও ছিল। কিন্তু আমি জাস্ট একটা ট্রাই করব বলে এসেছিলাম। পরবর্তীকালে কাজটা ভালো লেগে গেল বলে ওঁরা আপত্তি করেননি।
প্রজাপতি বিস্কুট আপনার জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। ছবির অফার কী ভাবে এল?
না, আমি মনে করি টেলিভিশন-ই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, আর বড়ো ব্রেক হল প্রজাপতি বিস্কুট। ঝাঁঝ লবঙ্গের কাজ তখন সবে শেষ হয়েছে। এটা ঠিক, সে অর্থে মেগা-সিরিয়াল ছিল না। ফলে অন্যান্য মেগার মতো এটা তিন-চার বছর ধরে চলেনি। আট মাসেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরকম একটা সময়ে একদিন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় আমায় ফোন করেন। অবাক হয়ে গিয়ে আমি কিছুক্ষণ চুপ করেছিলাম। পরে আনন্দে লাফিয়ে উঠি। তবে উনি তখন আমায় ডেকেছিলেন একটি জুয়েলারির অ্যাড-এর জন্য। এর কিছুদিন পর আবারও ফোন করে বলেন, উনি একটা ছবি করছেন প্রজাপতি বিস্কুট এবং আমি তাতে আছি। ওনার স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে জানতে চাই, কবে দিলাম স্ক্রিন টেস্ট! অনিন্দ্যদা বলেন, কেন ওই যে টেলিভিশন কমার্শিয়াল! এভাবেই আমার বড়ো পর্দায় কাজের শুরু।
এই কাজটার অন্যতম প্রাপ্তি কী বলে আপনার মনে হয়?
এই কাজটার দরুণ শিবুদার (শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে প্রথম আলাপ। কাজ শেখার সময়টাতে অনেক সাহায্য পেয়েছি। এই ছবিতে আমার বিপরীতে ছিল আদিত্য, যে খেয়ালি দস্তিদার ও অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ে পুত্র। ফলে পারিবারিক কাজের সূত্রেই ও টেকনিকালি খুব স্ট্রং ছিল। ও অফ ক্যামেরায় ভুলত্রুটিগুলো দেখা প্রভৃতি বিষয়ে খুব পারফেক্ট ছিল। ওর সঙ্গে রেসিপ্রোকেশন খুব ভালো হতো। ফলে ছবিটায় দেখে মনে হয়নি যে, আমরা সে অর্থে নতুন।
টেলিভিশন ও সিনেমায় কী তফাত অনুভব করেছেন?
টেলিভিশনে একটা প্রেশারে কাজ করতে হয়। আমার মনে আছে আমি টেলিভিশনের জন্য টানা সাতাশ ঘন্টা কাজ করেছি এরকমও হয়েছে। প্লাস তখন আমি একেবারেই নতুন ছিলাম, ফলে শেখাটাও পাশাপাশি চলত। কিন্তু ছবিতে কাজ করতে এসে অনেক রিল্যাক্সড ছিলাম, বিশেষ করে অনিন্দ্যদার সেট-এ। প্লাস টিভিতে একটু লাউড শট দিতে হয়। সিনেমাতে একদম নর্মাল। সে অর্থে আমি অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি।
গুপ্তধনের সন্ধানে–তে আবির চট্টোপাধ্যায়–এর মুখোমুখি। কেমন ছিল অনুভূতিটা?
অরিন্দমদা (অরিন্দম শীল) ছিলেন ছবিটার লাইন প্রোডিউসার। হঠাৎই আমায় ডেকে পাঠান ওনার অফিসে। আমায় আবিরদার সঙ্গে কাজ করতে হবে শুনে তো আমি দারুণ নার্ভাস হয়ে গেলাম, আবার একই সঙ্গে এক্সাইটেড-ও। কারণ আমি আবিরদার দারুণ ফ্যান। যাইহোক, প্রথম দিনই সেট-এ গিয়ে আবিরদার সঙ্গে আমার ক্লাইম্যাক্স সিন শুট করার কথা। কিন্তু আবিরদার স্পেশালিটি হল সেট-এ মজা করেন আবার ক্যামেরা অন হলেই অন্য মানুষ। এই সুইচ অন অফ করার ব্যাপারটা আমি তখন পারতাম না। এটা শিখেছি আবিরদার থেকে।
পরে দুর্গেশগড়ে কাজ করাটা খুব সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ অর্জুন ও আবিরদার সঙ্গে বন্ডিং-টিউনিংটা দারুণ ভালো হয়ে গিয়েছিল। অফ স্ক্রিন আমরা খুব মজা করেছি। তাই সেই রসায়নটা স্ক্রিনে দেখা গেছে।
সোয়েটার ছবিটা দেখে আপনার কাজের অনেকেই খুব তারিফ করেছেন। কিন্তু বুড়ো সাধু তেমন প্রশংসা পেল না। এটা কেন?
আসলে এটা অনেকেই জানেন না, বুড়ো সাধুর শুটিং কিন্তু হয়েছিল প্রজাপতি বিস্কুটের পরে আর গুপ্তধনের সন্ধানের মাঝে একটা স্টপ গ্যাপ-এ। তখন আমি নিজেও বেশ নতুন ছিলাম। কিন্তু ঋত্বিকদার (ঋত্বিক চক্রবর্তী) সঙ্গে কাজের সুযোগ মিস করতে চাইনি। ওই ছবিটা রিলিজ হয়েছিল অনেক পরে। ফলে এখন আমি নিজেও ওটা দেখলে নিজের কাজের ভুলত্রুটিগুলো বুঝতে পারি।
আউট অফ স্ক্রিন ইশা ঠিক কেমন?
আমি ছোটোবেলা থেকেই একটু চুপচাপ। স্কুলে-কলেজে অভিনয়ের সঙ্গে যোগ ছিল না। পড়াশোনা নিয়ে থাকতাম। বইয়ে পোকা ছিলাম। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় খুব প্রিয় লেখক। আরও অনেক পছন্দের লেখক আছেন। প্রিয় বললে যে-কোনও জিনিসই আমি অন্তত তিনটে করে বলি (হাসি)। পরিবারের সকলকে নিয়ে থাকতে ভালোবাসি। লকডাউনেও একসঙ্গে বসে লুডো খেলেছি। কোনও রিগ্রেট নেই লাইফ-এ। ভয়ও না।
কোনও উইশ লিস্ট আছে?
হুঁ… সোলো বেড়াতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে আছে আমার। ইস্তাম্বুল যাব একা। আর যাব লন্ডন এবং সাউথ ইন্ডিয়াও সোলো ট্রিপ করব। দার্জিলিং-ও খুব প্রিয় জায়গা। প্রেমে পড়ে গেছি এই জায়গাটার।