আকাশ মেঘলা থাকায় সামনের সবুজ ঢেউয়ের মতো পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা ছোটো ছোটো জনপদ, আঁকাবাঁকা পথরেখা, ইউক্যালিপটাস, সাইপ্রাস আর পাইন বনের শোভা উপভোগ করা যাচ্ছিল না। আচমকা পাহাড়ের ওপর থম মেরে দাঁড়ানো মেঘেরা সরে গেল। নাটকের মঞ্চের মতো কোনও এক অদৃশ্য আলোক পরিকল্পকের অমোঘ ইশারায় মেহগনি ছোপ পড়তে শুরু করল পালানি হিলসের গায়ে। গাঢ় ছায়া সরে গিয়ে ঝলমল করে উঠল কোদাইকানালের পাহাড়।
ঝেড়েঝুড়ে একটা বেঞ্চে বসলাম। পাশের বেঞ্চে মিলিটারি গোঁফওলা এক প্রবীণ খবরের কাগজ পড়ছেন। পাখির দল এসে বসছে গাছে। একটা গাঢ় নিস্তব্ধতার ছায়া চারদিকে। পাহাড়ি অর্কিড আর পাইন গাছের পাতায় লেগে আছে ভেজা শিশির আর মেঘবাষ্প। এখানে গাড়ির মিছিল নেই, মর্নিংওয়াকারের কলরব নেই, হকারের উৎপাত নেই, বাচ্চাদের প্র্যামগাড়ির অত্যাচার নেই– এই পার্ক যেন কোলাহলবিহীন প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য।
রুনুদার হার্টের আর্টারিতে একটা ব্লকেজ ধরা পড়ায় তড়িঘড়ি চলে আসা হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। রিন্টির এখন উঁচু ক্লাস, প্রাইভেট টিউশন থাকে সপ্তাহ জুড়ে। রিন্টি আসেনি ওর বাবা মায়ের সঙ্গে। তবে অসুবিধে কিছু হয়নি, মা রুনুদাদের ফ্ল্যাটে এসে রিন্টির সঙ্গে আপাতত থাকছে। বেঙ্গালুরুতে ডক্টর আয়েঙ্গার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করলেন দু’দিন পর। যতটা সময় লাগবে ভাবা হয়েছিল তার আগেই সব মসৃণভাবে হয়ে গেল। ডাক্তারবাবু ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দিলেন রুনুদাকে। বলে দিলেন ফ্যাট-ফ্রি ডায়েট চলবে এক বছর আর সামনের বছর চেক-আপের জন্য একবার আসতে হবে তাঁর কাছে।
রুনুদা বেড়াতে ভালোবাসে। ওর ইচ্ছেতে সায় দিয়ে আমরা এসেছি কোদাইকানালে। হোটেলের পাশেই কোদাই লেক। গতকাল একটা গাড়ি ভাড়া করে সিলভার ক্যাসকেড, পিলার রকস আর গ্রিন ভ্যালি ভিউ দেখে বিকেলে আমরা এলাম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মানমন্দির সোলার অবজারভেটরিতে। ফেরার পথে ড্রাইভার জানাল সিজন টাইমে কোদাই নাকি টুরিস্টে গিজগিজ করে। নেহাত বর্ষাকাল বলে এখন লোকজন একটু কম।