এই করোনা-আবহেও কেরিয়ারের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী রাখার প্রয়াস জারি রাখতেই হবে আপনাকে। তাই, রক্তচাপও বাড়তে পারে। বসের রক্তচক্ষু, দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করবে নিরন্তর। মুসিক দৌড়ে ‘এ’, ‘ও’, ‘সে’– সবার মতো শামিল হবেন আপনিও। এই প্রতিযোগিতার যুগোপযোগী না হয়ে উঠতে পারলে, আপনাকে খেসারত গুনতে হবে। আবার, এখেলায় পা দিলে মাসুল দিতে হবে তারও। স্ট্রেসের কারণে আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে রোগ, মাথায় চাপবে পিছিয়ে পড়ার ভয়, কপালে পড়বে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এছাড়াও শরীরে জমবে কোলেস্টেরলের স্তর, রক্তে বাড়বে শর্করা, হৃদয়ে রক্তস্রোত। কখনও কখনও ভুলে যেতে পারেন প্রিয়জনের মুখ, নাম কিংবা অবশ্যকরণীয় কোনও কাজ। আপনার প্রফেশনাল মুভ আপনাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে যেতে, প্রতিবর্ত ক্রিয়াস্বরূপ দিয়ে যাবে নানা অসুখ। সুখের ঠিকানা অধরাই থেকে যাবে হয়তো। তাই শুরু থেকেই খুঁজে নিতে হবে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের পথ। না হলে ফল হতে পারে মারাত্মক।

কী করে বুঝবেন আপনি স্ট্রেস্ড?

সুস্পষ্ট লক্ষণ

স্মৃতি বিভ্রম, মনঃসংযোগে সমস্যা, বিবেচনা ক্ষমতা লোপ পাওয়া, নেতিবাচক মনোভাব, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার প্রাবল্য, নিরন্তর উৎকণ্ঠা।

শারীরিক লক্ষণ

ব্যথা-বেদনার অনুভূতি, ডায়ারিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য, নসিয়া ও মাথাঘোরা, বুকে ব্যথা, হৃদপিণ্ডের দ্রুতগতি, যৌনতা বিমুখতা, বারবার ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি।

আবেগজনিত লক্ষণ

মুডের তারতম্য, চট করে রেগে যাওয়া, বিরক্ত হওয়া, খিটখিটে স্বভাব, আবেগের আতিশয্য, একাকীত্ববোধ ও বিচ্ছিন্নতাবোধ, ডিপ্রেশন ও আনন্দের অভাব।

আচরণগত লক্ষণ

অতিরিক্ত বা স্বল্প আহার, অতিরিক্ত ঘুমোনো বা ঘুম কম হওয়া, সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, দায়িত্ব থেকে পশ্চাদপসরণ, মদ-সিগারেট-ড্রাগ্স-এর শরণাপন্ন হওয়া, স্নায়ুর দুর্বলতাজনিত আচরণ, যেমন- নখ খাওয়া, হাঁপানো প্রভৃতি।

কীভাবে করবেন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ?

  • জীবনের কোনও পর্যায়ে হঠাৎই অনুভব করতে পারেন আপনি অসম্ভব ক্লান্ত। ভীষণ টেনশনের মুহূর্ত, হয়তো সবচেয়ে তৎপর হয়ে কাজ করার সময় সেটা– অথচ আপনার মস্তিষ্ক, হাত, পা কিছুই যেন ঠিক সায় দিচ্ছে না পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে। এই সংকটময় সময়টাই হল বুঝে নেওয়ার যে, আপনি কমপ্লিটলি স্ট্রেস্ড-আউট। এরকম সিচুয়েশন যাতে তৈরিই না হয় তার জন্য নীচের পয়েন্টগুলি মাথায় রাখুন।

ইংরেজি বর্ণমালার নিরিখে চারটে ‘এ’ মেনে চলুন।

অ্যাভয়েড, অল্টার, অ্যাডাপ্ট এবং অ্যাকসেপ্ট।

  • অ্যাভয়েডঃ  সেই সব মানুষজন বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন যারা বা যা আপনাকে অযথা স্নায়ুর চাপের শিকার হতে বাধ্য করে।
  • অল্টারঃ  যদি একান্তই স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন-এ এসে পড়েন, চেষ্টা করুন আপনার বুদ্ধি বিবেচনার সাহায্যে পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে। প্রায়োরিটি সেট করে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবলেম সল্ভ করা শুরু করুন। দরকার হলে বিশ্বস্ত কারও কাছে সমস্যা শেয়ার করুন! নিজের আবেগকে রুদ্ধ করে না রেখে, বলে হালকা হোন। একান্তই যদি সমস্যা হাতের বাইরে চলে গেছে মনে হয়, কিছুটা কমপ্রোমাইজ করুন। কিছু কিছু আপোস, কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবেও দেখা যেতে পারে।
  • অ্যাডাপ্টঃ  যে-ব্যক্তির দ্বারা স্ট্রেস তৈরি হচ্ছে, তাকে বদলানো যখন আপনার পক্ষে সম্ভবপর নয়, তখন নিজেকে বদলান। জীবনের সদর্থক দিকগুলি বিবেচনা করুন। আপনার কাজটা যতই কেন-না আপনার টেনশনের কারণ হয়ে থাকুক, চেষ্টা করুন সেটির ভালো দিকগুলি খুঁজে দেখতে। কাজটা এনজয় করতে শিখুন।
  • অ্যাকসেপ্টঃ  যে-জিনিসগুলি আপনি পরিবর্তন করতে পারছেন না, সেগুলিকে অ্যাকসেপ্ট করে নেওয়াই বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ। বিদগ্ধজনেরা বলেন ‘ইভন দ্য মোস্ট স্ট্রেসফুল সারকামস্ট্যান্স ক্যান বি অ্যান অপারচুনিটি ফর লার্নিং অর পার্সোনাল গ্রোথ’। সুতরাং যে-কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিকেই ব্যবহার করুন নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসাবে।

এছাড়া আরও কিছু নিয়ম মেনে চললে তবেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ হবে। যেমন—

রিল্যাক্সঃ  কিছুটা সময় অবশ্যই রাখুন নিজের রিল্যাক্সেশন-এর জন্য। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, ডিপ ব্রিদিং প্রভৃতি নিয়মিত করুন, ভেতর থেকে রিল্যাক্সড্ হবার জন্য।

এক্সারসাইজঃ  প্রতিদিন ব্যায়াম করুন, কারণ ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে প্রভূত সাহায্য করে। স্ট্রেস কমাতে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ-এর কোনও বিকল্প নেই।

হেলদি ডায়েটঃ  পুষ্টিকর খাদ্য আপনাকে স্ট্রেস-এর সঙ্গে লড়ার শক্তি দেবে। তাই দিনের শুরুটা করুন হেলদি ব্রেকফাস্ট দিয়ে। ক্যাফিন ও সুগার ইনটেক কমান। অ্যালকোহল ও নিকোটিনের প্রভাবমুক্ত হয়ে মদ্যপান ও সিগারেট সেবনে নিয়ন্ত্রণ আনুন।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ  শরীরের শ্রান্তি এবং স্নায়ুর চাপ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোনো অভ্যাস করুন। ঘুমের আগে কোনও দুশ্চিন্তাকে মাথায় আশ্রয় দেবেন না। হালকা মিউজিক চালিয়ে সম্পূর্ণ রিল্যাক্সড হয়ে ঘুমোতে যান।

——-

মডেলঃ গার্গী কুণ্ডু।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...