আজকের এই কনজিউমারিজম-এর যুগে প্রতিটি মানুষই অত্যাধুনিক লাইফ-লিড করতে অভ্যস্ত। চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের হাতছানি এবং প্রলোভনে সাড়া দিতে গেলে উপার্জন ও সঞ্চয়ের সামঞ্জস্য রাখাটা জরুরি। যাতে ভবিষ্যৎ অবসর জীবনেও স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং হ্রাস না করেও জীবনযাপন করা যায়৷ তারই প্রস্তুতি হিসাবে সময় থাকতে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়া প্রয়োজন।
বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধু। ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রশ্নে সঞ্চয়ের অভ্যাসও অনেকটা সেই রকমই। ছোটো ছোটো সঞ্চয় একত্রিত হয়ে একদিন বড়ো মূলধনে পরিণত হয়। হয়ে ওঠে আপনার এবং গোটা পরিবারের সুরক্ষা কবচ।
সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূল্যবৃদ্ধির বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসার চালানোর পাশাপাশি জীবনযাপনের নানা শর্তপূরণ করতে হয়। আধুনিক লাইফস্টাইলের অনুসারী হতে হয়। অথচ, সুরক্ষিত ভবিষ্যতের প্রশ্নটাকেও অবজ্ঞা করার নয়। এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাত থেকে অল্প অল্প অর্থ বাঁচিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখার দায়িত্বটা পরিবারের মহিলাদেরই।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলি বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প নিয়ে এসেছে। যার সুফল নিতেই পারেন মহিলারা। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন বয়স ও আয়ের নিরিখে সঞ্চয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করাটা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কীভাবে, সেটাই তুলে ধরা হল।
মান্থলি ইনকাম স্কিম
মান্থলি ইনকাম স্কিম-এ টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম পোস্ট অফিস। এই ক্ষেত্রে সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট-এ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ডাবল অ্যাকাউন্ট-এ ১০লক্ষ টাকা জমানোর স্কিম চালু আছে। প্রয়োজন হলে এই টাকা আপনি যখন খুশি তুলে নিতেও পারেন। তবে রাখতে পারলে অনেক বেশি ইন্টারেস্ট পাওয়া যাবে এবং আপনার অবর্তমানে ওই টাকা পাবে নমিনি। তবে এই জেনারেল সেভিংস্ ছাড়াও রয়েছে ‘সিনিয়র সিটিজেন প্ল্যান’। এই স্কিম-এ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে ৭.৪ শতাংশ হারে সুদ পাবেন এবং সুদের জমা টাকা প্রত্যেক পাঁচ মাস বাদে আপনার অ্যাকাউন্ট-এ যুক্ত হবে। পাঁচ বছর পূর্ণ হলে অতিরিক্ত তিন বছর চালু রাখতে পারবেন এই অ্যাকাউন্ট৷
জীবনবিমা
জীবনবিমা কোম্পানি প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চালু করেছে পেনশন প্রকল্প। ২৫ বছর মেয়াদের এই প্রকল্পে আপনার ইচ্ছে এবং সুবিধামতো আপনি টাকা জমা রাখুন। যে-পরিমাণ টাকা জমবে সেই হিসাবে আপনি প্রতি মাসে পাবেন পেনশন এবং আপনার টাকা ট্যাক্স-ফ্রি হয়ে যাবে।
রিভার্স মর্ডগেজ স্কিম
যেসব প্রবীণ নাগরিকের তেমন উপার্জন নেই, তারা এই স্কিম-এর ফায়দা নিতে পারেন। বাড়ি, গাড়ি, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ কিংবা ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্য প্রবীণ নাগরিকরা যাতে সহজে ঋণ নিতে পারেন, তারই ব্যবস্থা রেখেছে বিভিন্ন বিমা কোম্পানি। জমিবাড়ি বন্ধক রেখে নিতে পারেন এই ঋণ। আর এই ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ধার্য রয়েছে ১৫ বছর। অবশ্য রিভার্স মর্ডগেজ স্কিম-এর আরও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যেমন–
- রিভার্স মর্ডগেজ স্কিম-এর সুবিধে নিতে হলে বয়স হতে হবে ৬০বছরের উপর।
- আপনার বন্ধক রাখা জমিবাড়ির মোট মূল্যের (ভ্যালুয়েশন) ৬০শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।
- প্রতি মাসে, তিন মাসের ব্যবধানে কিংবা এককালীন নিতে পারেন এই স্কিম-এর টাকা।
ঋণ পরিশোধের মেয়াদের মধ্যে যদি ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হয়, তাহলে নমিনি বাকি টাকা শোধ করে মর্ডগেজ প্রপার্টি ছাড়িয়ে নিতে পারেন কিংবা সারেন্ডার করে ব্যাংক-কে ওই মর্ডগেজ প্রপার্টির মালিকানা দিয়ে দিতে পারেন।
জমানোর অন্যান্য উপায়
চালু হয়েছে স্পেশাল সেভেন ইয়ার্স সেভিংস্ স্কিম। অবসর নেওয়ার সাত বছর আগে থেকে এই স্কিম চালু করা যাবে।
হাতে কিছু টাকা থাকলে জমিবাড়ি কিংবা সোনা কিনে রাখুন। খুব দ্রুত আয় বাড়ানোর এ এক দারুণ মাধ্যম। কারণ, প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে জমিবাড়ি এবং সোনার দাম।
টাকা জমাতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ড-এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ‘সিপ’ অর্থাৎ ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ (এসআইপি)-এর ফায়দা তুলুন।
‘গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’ ফান্ড-এ টাকা রেখেও বাড়তি সুদের মালিক হওয়া যায়। এই ফান্ড-এ টাকা রাখা যেমন লাভদায়ক, তেমনই নিরাপদ।
বড়ো অসুখ হলে যাতে জমানো টাকা খরচ না হয়ে যায়, তার জন্য অবশ্যই হেল্থ প্ল্যান করুন। কারণ, স্বাস্থ্যবিমা যে কত টাকা বাঁচায়, তা অসুস্থ হলেই হাড়েহাড়ে টের পাওয়া যায়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, দূরভাষ, যাতায়াত, বাজারহাট প্রভৃতি থেকে প্রতিদিন কিছুটা খরচ বাঁচান এবং সেই টাকা প্রতি মাসে পিপিএফ একাউন্ট-এ জমান। দেখবেন বছরের শেষে একটা বড়ো অঙ্কের টাকা জমে যাবে।