শুধু যৌবন ধরে রাখার জন্যই নয়, আমাদের ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকা এবং শরীরকে ফিট রাখা খুবই দরকার। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ফিট থাকার জন্যে কোনওরকম প্রচেষ্টা নিই? এটা ভাবার বিষয়। বোধহয় যতটা সচেতন আমাদের হওয়া উচিত ততটা আমরা হই না। ভারতবর্ষে যদি মহিলাদের শরীরের সুস্থতা ও Fitness নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয় তাহলে দেখা যাবে, খুব কম সংখ্যক মহিলাই নিজেদের Health এবং Fitness নিয়ে মাথা ঘামান। তাই,এদেশে অনেক মহিলাই স্থূলতার শিকার।
বেশিরভাগ মহিলাই, সে গৃহিণীই হোক অথবা কর্মরতা, খাওয়াদাওয়া ও ডায়েটের উপর বিশেষ নজর দেন না। তাই বলে তারা খাবার খান না, এমনটা কিন্তু নয়। আসলে কোন খাবারের কী গুণ সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। সারাদিনে যেটা হাতের কাছে পাওয়া যায় সেটাই গলধঃকরণ করলেই সমস্যার শেষ। পেট-টা ভরা নিয়ে কথা। কিন্তু এর ফলে স্থূলতা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা শারীরিক সুস্থতার অন্তরায় হয়ে ওঠে। তাই, ভারতীয় মহিলারা যথার্থ পুষ্টির অভাবে নানান সমস্যায় জর্জরিত। এই অপুষ্টির কারণ হল রোজকার ডায়েটে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব।Green Diet এই কারণেই এত গুরুত্বপূর্ণ৷
মধ্য বয়সে স্থূলতা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। স্থূলতা এবং অন্যান্য অসুস্থতা এড়াবার জন্যে অনেকেই ডায়েটিং-এর সাহায্য নিয়ে থাকেন। এখন চারিদিকে ফিটনেস সেন্টার, হেলথ ক্লাব ইত্যাদির রমরমা। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসতেই থাকে যে, কম খেয়ে এবং ইচ্ছেমতো ডায়েট কন্ট্রোল করে ফিট থাকা কি সম্ভব? কম খেয়ে রোগা হওয়া যায় কিন্তু শরীরের সুস্থতা এবং ফিটনেস কখনওই সম্ভব নয়। আসলে কতটা খাচ্ছেন সেটা যতটা না দরকারি, তার থেকেও বেশি প্রয়োজনীয় হল আপনি কী কী খাচ্ছেন।
বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র শাকসবজি অথবা গ্রিন ডায়েটের উপর খুব বেশি করে জোর দেওয়া হচ্ছে।
দেশ-বিদেশের সেলিব্রিটিরাও আমিষ ছেড়ে নিরামিষ ডায়েটের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ডাক্তাররা শাকসবজি নানা ভাবে খাওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন। এতে কাঁচা সবজি দিয়ে তৈরি স্যালাড থেকে শুরু করে রান্না করা নানা পদে সবুজ শাক ও সব রকমের সবজি রাখতে বলা হচ্ছে।
খাদ্যগুণের উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, পাতাবহুল সবজি অথবা সবুজ সবজির ডায়েট, মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এখন নিউট্রিশনিস্টরাও মহিলাদের ফিট থাকার জন্যে গ্রিন ভেজিটেবলের উপর বিশেষ করে জোর দিচ্ছেন। শহরের বিশিষ্ট নিউট্রিশনিস্ট রণিতা ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে, তাঁর কাছে যে-সব মহিলা ডায়েটের সমস্যা নিয়ে আসেন, তারা বেশিরভাগই শরীরের বাইরের সৌন্দর্য নিয়েই সচেতন। শরীরের ভিতরের ঘাটতি পর্যবেক্ষণ করা অথবা হেলদি লিভিং সম্পর্কে জানার আগ্রহ তাদের খুবই কম। দৈনন্দিন খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা অথবা লোকের কথা শুনে ডায়েটিং করে রোগা করার প্রচেষ্টাকেই মহিলারা সঠিক বলে ভেবে নেন অথচ এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। ‘স্লিম অ্যান্ড ট্রিম’ হয়ে যাওয়া মানেই যে ফিট থাকা, এই ধারণা ঠিক নয় বরং ইন্টারনালি ফিট থাকা বেশি জরুরি।
স্যালাডের প্রয়োজনীয়তা
রোজকার খাদ্যতালিকায় গ্রিন ডায়েট আবশ্যিক। প্রাত্যহিক বাজার করতে গিয়ে সেইসব সবজি কিনুন যেগুলি দিয়ে হেলদি এবং জিভে জল আনা পদ সহজেই বানানো যায়। সবুজ সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ব্রোকোলি, গাজর, টম্যাটো, কড়াইশুঁটি, পালংশাক ইত্যাদি রোজকার খাদ্যতালিতায় রাখা চলে। সকালের জলখাবার থেকে শুরু করতে হলে সবথেকে ভালো হয় সবজির জুস দিয়ে যদি দিন শুরু করা যায়। সবজির মধ্যে টম্যাটো, বিট, গাজর, আদার রস বিশেষ ভাবে উপকারী। জুসের মধ্যে বিটনুন, জোয়ান ইত্যাদি মিশিয়ে খেলে এগুলি স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে।
দুপুরবেলা স্যুপ অথবা স্যালাড হিসেবে সবজি খাওয়া যেতে পারে। স্যুপের মধ্যে পালং, কর্ন, টম্যাটো অথবা মিক্স ভেজিটেবল স্যুপ খুবই পুষ্টিকর। খেতেও খুবই সুস্বাদু এবং ধীরে ধীরে শরীরের স্থূলতা কমাতেও সাহায্য করে।
অনেকেই সবুজ শাকসবজি স্যালাড হিসেবে খেতেও পছন্দ করেন। গ্রিন স্যালাড হিসেবে ব্রোকোলি, পালংশাক, টম্যাটো, পেঁয়াজ, স্প্রিং অনিয়ন, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, ক্যাপসিকাম, লেটুস পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। স্যালাডে অলিভ অয়েল, ক্রিম, মধু, ভিনিগার অথবা মাস্টার্ড সস ইত্যাদি ব্যবহার করে স্যালাডের স্বাদ বাড়িয়ে তোলা যায়।
আমরা সকলেই জানি যে শাকসবজি কাঁচা খেলে তার পরিপূর্ণ খাদ্যগুণ পাওয়া যায়। রান্না করা খাবারে সম্পূর্ণ খাদ্যগুণ পাওয়া যায় না। সুতরাং সবজি যদি কাঁচা খেতে হয়, তাহলে শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে তবেই খেতে হবে, যাতে সেটি ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয়। গ্রিন ডায়েট শুধুমাত্র ফিট থাকতেই সাহায্য করবে এমন নয়, নানারকম অসুখের থেকেও শরীরকে সুরক্ষিত রাখবে।
শরীরের জন্য আরও একটি প্রয়োজনীয় তত্ত্ব হল ফাইবার। শাকসবজিতে ফাইবার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ক্যানসারের প্রতিরোধক হিসেবেও গ্রিন ডায়েট খুবই উপকারী। এছাড়া ভিটামিনও প্রচুর থাকে শাকসবজিতে। সবজিতে মজুত ফলিক অ্যাসিড, ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।
শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি সবুজ শাকসবজি
হার্ট স্পেশালিস্ট ডা. কেকে আগরওয়াল নিজের পেশায় একজন বিখ্যাত পর্সোনালিটি। তাঁর মতে, সমস্তরকম সবুজ এবং ফাইবারযুক্ত সবজি শরীরের সতেজতা বাড়াতে সাহায্য করে সুতরাং রোজকার ডায়েটে এগুলো রাখাই উচিত। তাঁর মতে, ডায়েটিং-এর বিকল্প হিসেবে গ্রিন ডায়েটের তুলনা নেই।
দেশে-বিদেশে বহু সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, রোজ শাকসবজি খেলে ত্বকের কমনীয়তা বাড়ে, চেহারায় গ্লো আসে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি হওয়ায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা যায়। সবুজ শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও শরীর সুস্থ রাখার কাজে আসে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তত্ত্ব, শরীরের যে-কোনও রোগ প্রতিরোধ করার শক্তি জোগায়। গ্রিন ডায়েটের সবথেকে উপকারিতা হল, এটি কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট দুটোই বাড়তে দেয় না। এগুলি কন্ট্রোলে থাকার ফলে হার্ট-ও সুরক্ষিত থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের শরীরে ক্যালসিয়াম-এর অভাব হয়ে থাকে। শাকসবজি রোজ ডায়েটে রাখলে, ক্যালসিয়ামের অভাব মিটবে। তাছাড়াও সবুজ পাতা যেসব সবজিতে রয়েছে (পালং, বাঁধাকপি, লেটুস) সেগুলি নিত্য খেলে, বোন ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। এছাড়াও ত্বক এবং চুলের পুষ্টিও গ্রিন ডায়েটে প্রচুর পাওয়া যায়। অনেক মহিলাই নিয়মিত ডায়েট প্ল্যান অথবা জিম রুটিন মেনে চলতে পারেন না। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, যদি নিয়মিত শাকসবজি খাওয়া যায়, তাহলে হেলদি লাইফ লিড করতে কোনও অসুবিধাই হবে না। রোজকার ডায়েটে চিনি এবং ফ্রায়েড খাবারের মাত্রা একেবারে কমিয়ে ফেলা উচিত। প্রকারান্তরে যৌবন দীর্ঘায়িত করতে এটি সাহায্য করবে।
একবারে অনেকটা খাবার খাওয়ার বদলে, যদি কিছুক্ষণ বাদে বাদে অল্প করে খাবার খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীরের জন্য বেশি ভালো তবে খাবার অবশ্যই হেলদি হওয়া উচিত। সাধারণত অনেকক্ষণ কিছুই না খেয়ে খিদের মুখে বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। এতে শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে। তিরিশ পেরোলেই যোগব্যায়াম করাও মহিলাদের জন্য খুবই জরুরি। এতেও নানা ধরনের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
চিনি, চাল এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার ডায়েটে বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়। লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনুন, জাংক ফুড একেবারেই খাওয়া অনুচিত। সকালে বা বিকালে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে একদিন আনাজ না খেয়ে ফল খেয়ে থাকতে পরলে শরীর সুস্থ থাকবে।
সুতরাং শারীরিক সৌন্দর্য এবং ফিটনেস, এই দুইয়ের জন্যই গ্রিন ডায়েট অপরিহার্য। চিরসবুজ থাকুন গ্রিন ডায়েট-এ।