ইন্টিরিয়র ডেকরেশন আধুনিক লাইফস্টাইলের অঙ্গ। আমাদের সকলের একটা ধারণা আছে, ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং কেবলমাত্র উচ্চবিত্তদের জন্য। ধারণাটা অংশত ঠিক, সবটা নয়। কারণ, একটা সময় ছিল যখন ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং ছিল বিলাসিতা। সময় পালটেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনা, রুচিবোধও পালটেছে। সাজানো-গোছানো বাড়িতে থাকতে সবাই ভালোবাসে। সঙ্গতি না থাকায় বড়ো বাড়ির কনসেপ্ট বদলে এখন কেবল দুই বা তিন কামরার ফ্ল্যাটেই স্বর্গ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন মধ্যবিত্ত। ইন্টিরিয়র ডিজাইনারদের ভূমিকা হল আপনার স্বপ্নে দেখা একটি ছোট্ট সুন্দর, সাজানো ফ্ল্যাটকে বাস্তবে রূপায়িত করা।

ধরে নেওয়া যাক এক নববিবাহিত দম্পতির দক্ষিণ কলকাতায় একটা ছোটো ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটের ফ্লোর প্ল্যানটা এইরকম– একটি লিভিং কাম ডাইনিং রুম, সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা, একটি কিচেন, টয়লেট ও একটি বেডরুম। বাজেট ১ লক্ষ টাকার মধ্যে।

এন্ট্রান্স

কথায় আছে ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইমপ্রেশন’ তাই এন্ট্রান্সটিকে সুন্দরভাবে সাজানো দরকার। ভালো একটা নেমপ্লেট সঙ্গে সেরামিকের সুন্দর কিছু টবে প্লান্টস্, একটা ওয়াল হ্যাঙ্গিং আপনার এন্ট্রান্সের গেট্আপ পালটে দেবে।

লিভিংরুম

ঢুকেই লিভিংরুম। আমাদের নব-দম্পতির পছন্দ লো সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট। প্রথাগত সোফাসেট না রেখে আমরা যদি কম বাজেটে একটু অন্যরকম ভাবনাচিন্তা করি। কাঠের চৌকির সঙ্গে সবাই পরিচিত। সহজে পাওয়া যায়। দামেও কম। একটি সিঙ্গল চৌকি কিনে তার চারটে পায়া কেটে উচ্চতা কমিয়ে নিন। যে-কোনও লোকাল কাঠের মিস্ত্রি করে দেবে। এরপর উড্ প্রাইমারে একটু টারমাইট মিশিয়ে ভালো করে পেইন্ট করান। এতে যদি কাঠে পোকা থাকে তাহলে মরে যাবে অথবা আগামী দিনে পোকা লাগবে না। এরপর সাদা, কালো আথবা গাঢ় বাদামি পেইন্ট করে দিন, চমৎকার একটি ডিজাইন তৈরি। ডিভানে চার ইঞ্চি ফোম-এর ম্যাটরেস্ রেখে, তাতে সুন্দর বেডকভার ও রং ম্যাচ করে কিছু লুজ কুশন রাখুন, আপনার ডিভান হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। ডিভান একটা দেয়াল ঘেঁষে রাখলে ভালো হয়। আরও একটি দেয়ালে কিছু ফ্লোর কুশন সঙ্গে ব্যাক রেস্ট হিসাবে কিছু লুজ কুশন দিলে আপনার কমপ্লিট একটা সেট তৈরি হয়ে যাবে। কুশন ও ডিভানের মাঝখানে যে-ছোটো জায়গাটা থাকবে, সেখানে একটা জলচৌকির উপর বাহারি ল্যাম্প শেড্, কিছু টুকিটাকি সাজানোর জিনিস রাখা যেতে পারে. তবে জলচৌকিটি অবশ্যই রং করে নেবেন।

লিভিংরুমের মাঝখানে একটা ছোটো কার্পেট অথবা দরি (সুন্দর শতরঞ্চি) রাখা যেতে পারে। বাড়িতে পিতল অথবা কাঁসার হাড়ি (সাইজে বড়ো) থাকলে সেটা চকচকে করে মেজে নিয়ে, টেবিল বেস্ হিসাবে ব্যবহার করা যায়। যদি তা না থাকে তাহলে টেরাকোটার হাঁড়ি নিন, তাতে পেইন্ট করে তার উপর কাচের টপ রাখতে পারেন। ভালো মলাটওয়ালা কিছু বই দু’ভাগে ভাগ করে কাচের টপের উপর রাখুন। তবে মনে রাখবেন কাচের টপটা যেন বেসের কানায় কানায় না বসে। বেসের থেকে যেন কিছুটা বেরিয়ে থাকে, তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। ছোটো টবে কিছু প্লান্টস্, বিয়েতে পাওয়া ব্রাসের ও ডোকরার কিছু টুকিটাকি অবশ্যই সেন্টার টেবিলকে সুন্দর করে তুলবে।

ঘরের রং হিসাবে নিউট্রাল কালার বেছে নেওয়াই ভালো। যেমন আইভরি, বেইজ ইত্যাদি। নিউট্রাল কালারের সঙ্গে সবরকম আসবাব মানিয়ে যায়। যদি গাঢ় রং পছন্দ থাকে, তাহলে সেটা একটা দেয়ালে সীমিত রাখাই ভালো। না হলে ছোটো ঘর আরও ছোটো লাগবে। বাজারে দেড়শো-দু’শো টাকায় ভালো পর্দার কাপড় পাওয়া যায়। ঘরের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিন। লিভিংরুমে জানালার দু’ধারে গাঢ় রঙের পর্দা দিয়ে মাঝখানে নেটের পর্দা দিন। তাতে আলো-বাতাস আসবে এবং দেখতেও ভালো লাগবে।

ডাইনিংরুম

Dining Room

ডাইনিংরুমের প্রধান ফার্নিচার হল ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার। আজকাল রট আয়রন, পিভিসি ও স্টিলের নানান ধরনের ডাইনিং সেট পাওয়া যায়। আপনার জায়গা অনুযায়ী  গোল সেট কিনে নিতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন ডাইনিং সেট রাখার পর চেয়ারের সামনে এবং পেছনে অন্ততপক্ষে এক ফুট জায়গা যেন থাকে। ডাইনিং এরিয়ার সাইডে একটি টেবিল, ফোল্ডিং তাক অথবা কিচেন ট্রলি থাকলে ভালো হয়। টেবিলে বাড়তি জিনিস রাখা যেতে পারে অথবা রান্নাঘর থেকে খাবার এনে ওই টেবিলের উপর রাখা যায়।

ডাইনিং এরিয়ার উপরে একটি ঝুলন্ত লাইট (পেনডেন্ট লাইট) জায়গাটিকে আলো-আঁধারে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। দেয়ালে কিছু ছবি, ফল অথবা সবজির গ্রুপ করে লাগাতে পারেন। ছবি স্কোয়ার,রেক্ট্যাংগ্ল যা-ই হোক, তা সরল রেখা বরাবর দেয়ালে টাঙান। একই থিমের একই সাইজের ছবি লাগানো যেতে পারে কিন্তু ছবির ভিতরের রং যেন আলাদা হয়।

কিচেন

ছোটো কিচেন সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে দেখতে ভালো লাগে। কিচেনে স্টোরেজ বেশি থাকা উচিত। কাজ হয়ে গেলে বাসনপত্র যাবতীয় জিনিস সহজেই যাতে স্টোরেজ-এর মধ্যে চলে যায়, এর ব্যবস্থা প্রথম থেকেই করে নেওয়া ভালো। বাজারে কম দামে সুন্দর সুন্দর পিভিসির স্টোরেজ পাওয়া যায়। যদি ওপেন স্টোরেজ হয় অর্থাৎ তাক, তাহলে রান্নার শেষে সবকিছু পরিষ্কার করে গুছিয়ে নিলেই হল। ওপেন শেলফ্-এ খরচ অনেক কম। তাকগুলি একটু ছোটো, বড়ো, মাঝারি সাইজের করে সাজালে ভালো লাগবে। লম্বা তাকের একঘেয়েমি কাটবে।

বেডরুম

Bedroom Interior

বিয়ের আগে যদি দু’জনে পরামর্শ করে ফার্নিচার কেনার সুবিধে থাকে, তাহলে কেবিন বেড অবশ্যই লিস্টে রাখবেন। এই বেডটিতে অনেক স্টোরেজ আছে এবং এটি ছোটো ফ্ল্যাটের একান্ত উপযোগী।  বেডরুম নানা ধরনের হয়, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনি কীভাবে আপনার বেডরুমকে দেখতে চান। সকালে আপনার বেডটিকে সুন্দরভাবে  কুশন দিয়ে সাজিয়ে  রাখলে একটি অতিরিক্ত সিটিং এরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একটি ভালো দেয়াল  ঘড়ি কিছু থিম বেসড পেইন্টিং দিয়ে বেডরুম সাজাতে পারেন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...