বাড়ি-গাড়ির চিন্তা এখন অনেকটাই ব্যাকডেটেড। আগে হলে চোখে পড়ত দৈনিক খবরের কাগজে চোখ রেখে নতুন নতুন জমি, বাড়ির সন্ধানে অথবা গাড়ির বাজারে নতুন কী এল তার খবর রাখতেই মানুষ বেশি ব্যস্ত।

এখন ধারণাটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। বাজার ক্যাপচার করছে হালকা ওজনের ছেটোখাটো ইলেকট্রনিকস গুড্-স এর পপুলারিটি এবং চাহিদা। মানুষের পছন্দ বদলাচ্ছে, লাইফস্টাইলেরও আমূল পরিবর্তন ঘটছে। আগে এত কিছুর প্রয়োজন ছিল না। বাড়ি ভর্তি লোকজনের আনাগোনা, বড়ো পরিবার কোনও মানুষকে একাকিত্ববোধের আঁচটুকুও গায়ে লাগতে দিত না। আর এখন সবই প্রায় নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। সকলেই লাইফটাকে নিজের মতো করে এনজয় করতে চায়। বাড়ির বড়োরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। যে-কাজ আগে বাড়িতে বসেই করে নেওয়া যেত, আজকের যুগে সময়ের অভাবে গাড়িতে, বাসে বসেই অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলতে হয়। সুতরাং ছোটোদের কোয়ালিটি সময় দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদের সময় কাটাবার জন্য তাই হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন নতুন গ্যাজেট, যেগুলি ব্যাটারি অথবা ইলেকট্রিকে অপারেট করা যায় এবং এগুলি ব্যবহার করতে গেলে অপরের সাহায্যেরও কোনও প্রয়োজন পড়ে না। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই অনায়াসে এগুলির ব্যবহার করতে পারেন।

গ্যাজেটে বাচ্চাদের হাতেখড়ি বলা যায় প্রথম ভিডিও গেমস্ দিয়ে। টিভি অথবা কম্পিউটার মনিটরের পর্দায় চোখ রেখে সারাদিন ধরে ভিডিও গেমস্ খেলতে বাচ্চাদের কখনওই ক্লান্ত হতে দেখা যায় না। বড়োদের লাইফস্টাইলেও এখন হালকা ওজনের গ্যাজেট ভীষণভাবে ইন কারণ তা ক্যারি করার সুবিধা রয়েছে।

বাজারে কাস্টমার নিড-এর উপর বেস করে পৃথিবীর বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ছে চাহিদার জোগান দিতে। কোম্পানিগুলির মধ্যে অ্যাপল, স্যামসাং, সোনি, মাইক্রো ম্যাক্স, এইচপি, লেনোভো, ডেল ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।

মোবাইল এবং ল্যাপটপ, ট্যাব এখন সকলের হাতে হাতে।এগুলি ছাড়া আধুনিকতার দরজায় পৌঁছোনো যেন একপ্রকার অসম্ভব। কানে হয় গান বাজছে নয়তো সময়ে অসময়ে দরকারি কাজ টুক করে সেরে ফেলতে মোবাইল-ই এখন মাধ্যম। তাই এই সব গ্যাজেটস্-এ যত নতুন নতুন ফিচার দেওয়া হচ্ছে, ততই তার চাহিদা এবং দাম বাড়ছে।  এদেশের মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখেই বহু ফিচার দেওয়া সত্ত্বেও পকেট ফ্রেন্ডলি দাম রাখার চেষ্টা করে কোম্পানিগুলি বাজারে মোবাইলের রকমফের নিয়ে আসছে।

অ্যাপেল-এর আইপ্যাড মিনি, আইফোন, আইপড ন্যানো ইত্যাদি গ্যাজেটগুলি শুধু দোকানের শেল্ফ-এ শোভা পাচ্ছে না, মানুষের হাতে হাতেও ঘুরছে। এগুলির অত্যাধুনিক ফিচার দৈনন্দিন চাহিদাগুলি পূরণ করছে।

যে- কাজগুলি আগে ছিল সময় সাপেক্ষ, আজ বাটন-এর একটি ছোঁয়ায় তা মুহূর্তে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। টাচ্সি্্ক্রন, এলসিডি ডিসপ্লে, একসঙ্গে দু-দুটি ক্যামেরার সুবিধালাভ, ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং, ইন্টারনাল হাই-স্টোরেজ ফেসিলিটি, গান শোনার সুবিধা এবং কম্পিউটারের সবরকম সুযোগ-সুবিধাও এগুলির মধ্যে রয়েছে। আইফোন থ্রিজি, ফাইভএস, আইফোন সিক্স ফোনগুলি ব্যাবসায়িক কাজের সুবিধার জন্যেও ব্যবহার করা হয়। এগুলিতে পার্সোনাল ইনফরমেশন ম্যানেজার উইথ ক্যালেন্ডার, অ্যাড্রেস বুক, স্টক ট্র্যাকিং ইত্যাদি সুবিধাও দেওয়া থাকে। ওয়েদার আপডেট-ও আপনি সহজে পেতে পারেন এই ছোট্ট যন্ত্রটির সাহায্যে।

আইপড ন্যানো, ১৬ এবং ৩২ জিবি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এতে অসংখ্য ছবি,ভিডিয়ো এবং গান স্টোর করা যায়। এগুলিতে গান, এমপিথ্রি প্লেয়ার, অডিয়োবুক, পডকাস্ট, ছবি এবং এফএম রেডিও-র সুবিধা রয়েছে।

অ্যাপেল-এর স্মার্টফোনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে ব্ল্যাকবেরি, স্যামসাং, সোনির মতো কোম্পানি নিজেদের প্রোডাক্টগুলিকে আরও আধুনিক করে তুলছে।

ব্ল্যাকবেরি-র স্মার্টফোন রেঞ্জে রয়েছে জেডটেন– যা বিশেষভাবে কাজের সুবিধার জন্যে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন। এটিতে মাইক্রো সিম, ইন্টারনাল রছ জিবি স্টোরেজ, মাইক্রো এসডি কার্ড এট, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস সিসটেম, রিয়ার ও ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরার সুবিধাও রয়েছে।

স্মার্টফোনের বাজার জুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে স্যামসাং স্মার্টফোনের রেঞ্জগুলি। স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি এবং এসফোর ক্রেতামহলে চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যামেরা-সহ সবরকম আধুনিক সুবিধাই ক্রেতাদের দিতে চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্যাজেটে।

‘ট্যাবলেট’গুলিও এখন ফ্যাশনে ইন। প্রচুর সুবিধাও এতে দেওয়া আছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট টু, মাইক্রোম্যাক্স-এর ট্যাবলেট প্রভৃতি ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় উপরের সারিতে স্থান পাচ্ছে। স্মার্টফোন, ট্যাব, সবেতেই ক্রেতারা অ্যানড্রয়েড, টাচস্ক্রিন, ক্যামেরা, এক্সপ্যানডেবল স্টোরেজ ফেসিলিটি, এফএম রেডিও ও ওয়াইফাই (নেট) এর সুবিধা পাচ্ছেন।

সোনি এক্সপিরিয়া তাদের স্মার্টফোনের রেঞ্জে একটু রকমফের এনেছে। এদের জেড আর ব্ল্যাক স্মার্টফোনটিতে জলের তলায় সম্পূর্ণ হাই ডেফিনেশন ফিল্মিং করার সুবিধা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া গ্যাজেট-এর পরিবারে ল্যাপটপ, আল্ট্রাবুক, নোটবুক, ই-বুক ইত্যাদিরও একটা বড়ো বাজার রয়েছে। স্যামসাং, সোনি, ডেল, লেনোভো, এইচপি, এসার ইত্যাদি বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলি– বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এর প্রচুর ভ্যারাইটি বাজারে ছেড়েছে। স্টুডেন্ট, ডোমেস্টিক ইউজ, শেয়ার বাজার, ব্যাবসা, আইটি সেক্টর, গেমিং ইত্যাদি আলাদা আলাদা প্রয়োজনেই এগুলিতে বিভিন্ন রকমের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এগুলির মধ্যে সেকেন্ড, থার্ড, ফিফ্থ জেনারেশন এর ক্যাটাগরি রয়েছে, ইনটেল (আর) কোর ফেসিলিটি, হাই স্পিড প্রসেসর, উইনডোজ এইট, লেড ব্যাকলিট ডিসপ্লে উইথ এইচভি রিসোলিউশন, র্যাম (বহু ভেরিয়েশনেই পাওয়া যায়) এইচডি গ্রাফিক্স এবং হার্ড ডিস্ক-এর ক্যাপাসিটির বিভিন্ন রেঞ্জও  বাজারে খুঁজে পাবেন আপনার চাহিদা অনুসারে।

ইলেকট্রনিক্স-এর জগতের উপর আমাদের লাইফস্টাইল এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, এটা আর এখন শুধুমাত্র বিলাসিতার সামগ্রী নয়, বরং নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর মতো করে ঢুকে পড়েছে গৃহস্থের অন্দরে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...