প্রতিদিনের একঘেয়ে জেটগতির জীবনযাপন থেকে মাঝেমধ্যে মুক্তি চায় মন। সেই জন্যই বাঙালি জীবনে হইহই করে ঢুকে পড়েছে গেট অ্যাওয়ের এক্সাইটমেন্ট। কিন্তু, কোথায় যাবেন সপরিবারে কিংবা শুধু সঙ্গীকে নিয়ে ছুটি কাটাতে?

কেউ ভালোবাসেন পাহাড়, কেউ সমুদ্র, কেউ আবার উপভোগ করতে চান জঙ্গলের রোমাঞ্চ। তবে যেখানেই যান না কেন, যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার সুবিধে, সুন্দর প্রকৃতি এবং নিরালা– এসব দেখে নেওয়া জরুরি। অতএব, আপনাদের বেড়ানোর আনন্দকে পূর্ণতা দিতে, আমরা এবার বেছে নিলাম ভারতবর্ষের অন্যতম দুটি টুরিস্ট স্পট— কোদাইকানাল এবং কানহা। যারা এখনও এই দুটি স্পট-এ যাননি, তারা তাদের নেক্স টুর প্ল্যান-এ রাখতে পরেন এই দুটি জায়গার যে-কোনও একটি।

কান্হা ন্যাশনাল পার্ক

যারা আরণ্যক পরিবেশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য আদর্শ গন্তব্য– মধ্যপ্রদেশের কান্হা ন্যাশনাল পার্ক। কান্হার গভীরে যাওয়া ভীষণ রোমাঞ্চকর! বনরাস্তায় চলে জিপ। রাস্তার দু’দিকে ভরে আছে থেমিডা ঘাস। দীর্ঘ ঘাসজমি পেরিয়ে ঢুকতে হয় অরণ্যে। যাওয়ার পথে চরে বেড়াতে দেখবেন নানারকম হরিণ। কৃষ্ণসার, চিতল এবং বারো-শিঙা হরিণ, কান্হার অলংকার। ঝাঁকে-ঝাঁকে ময়ূরও মুগ্ধ করবে আপনাকে। এছাড়া, নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাঘ দর্শনেরও ব্যবস্থা করেছে কান্হার বনদফতর। কাঞ্জনা, বুলবুলি, দোয়েল, সোনাবউ, বসন্তবৌরি, পাপিয়া, হাঁড়িচাচা, কোকিল, তিতির প্রভৃতি প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে কান্হার জঙ্গলে। আছে ঝুঁটিওয়ালা ঈগলও। ফুলে-ফুলে উড়ে বেড়ানো নানারঙের প্রজাপতিও, কান্হার বুনো সৌন্দর্যকে সম্পূর্ণতা দেয়।

এই কান্হা, বিন্ধ্যপর্বতের মাঝে মেখল পাহাড়ের অন্যতম অরণ্য। শাল, বাঁশ আর বহেরায় ঘেরা এই অরণ্যের আশপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বানজার, সুলকুম এবং হালোঁর নদী। আর আছে ‘তালাও’ বা বড়ো জলাশয়। কথিত আছে, এই তালাও থেকে জল নিতে এসে দশরথের তিরবিদ্ধ হন অন্ধমুনির পুত্র শ্রবণ বা সিন্ধু। তাই, এই তালাওর নাম হয়ে যায় ‘শ্রবণ তালাও’।

কান্হার দ্রষ্টব্য বলতে আর আছে একটি সানসেট পয়েন্ট। সূর্যাস্ত ছাড়াও, জঙ্গলের জীবজন্তু দেখা যায় এই সানসেট পয়েন্ট থেকে। তবে, সঙ্গে একটা বাইনোকুলার অবশ্যই রাখবেন। আর এই জঙ্গলভ্রমণ যেমন হুড খোলা জিপসিতে করতে পারেন, ঠিক তেমনই ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারেন হাতির পিঠে চড়ে। কিন্তু সাবধান, শিকারের খোঁজে গাছের শাখায় ওত পেতে থাকে চিতা!

আর হ্যাঁ, কান্হা ভ্রমণের শেষ পর্বে, সাইড-টুর হিসাবে রাখুন খাজুরাহো মন্দিরকে। কান্হার মুক্বি থেকে কিছুটা পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন ছত্তিশগড়ের ওই মন্দিরে। মধ্যপ্রদেশ টুরিজম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে থাকা, খাওয়া এবং বেড়ানোর সুযোগসুবিধা পাবেন।

কীভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে রেলপথে, হাওড়া-মুম্বই ভায়া এলাহাবাদ হয়ে পৌঁছোন জব্বলপুরে। ওখান থেকে বাসে করে কিসলি হয়ে কান্হা।

যোগাযোগ

দূরভাষঃ  (কান্হা সাফারি)

কোদাইকানাল

তামিলনাড়ুর এক অসাধারণ টুরিস্ট স্পট– কোদাইকানাল। নীল পাহাড় আর সবুজে ছাওয়া সুন্দর প্রকৃতি। কোদাই বিখ্যাত কমলালেবু, কলা, পাইন এবং ইউক্যালিপটাসের জন্য। এ অঞ্চল সূর্যালোকে আলোকিত হয় প্রায় বারো ঘণ্টা। কোদাইয়ের চাঁদের আলোয় স্নানও অপার্থিব। বিভিন্ন ধরনের (প্রায় শতাধিক) পাখির উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। আর এই পাহাড়ি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়েছে বেরিজাম লেক। এই লেক-এ রয়েছে তিনটি বোটিং পয়েন্ট। বোটহাউস-এ থাকার সুব্যবস্থাও রয়েছে। লেক-লাগোয়া অঞ্চলে রয়েছে ব্রায়ান্ট পার্ক। প্রায় সারা বছরই রংবেরং-এর ফুলে ভরে থাকে এই পাহাড়ি উদ্যান। নানা জাতের অর্কিড শোভিত করেছে কোদাইকানালকে। এই পাহাড়ি অঞ্চলে বাড়তি আনন্দ দেবে জলপ্রপাত। ক্যাসকেড, ফেয়ারি, বিয়ার শোলা, দ্য গ্রেন প্রভৃতি জলপ্রপাতগুলি পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই। এককথায়, নিরালাযাপনের এ এক অতুলনীয় ঠাঁই।

কীভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস-এ সরাসরি পৌঁছে যান কোদাই-এ। তবে ট্রেন ছাড়ে সপ্তাহে একদিন, শুধু সোমবার বিকেলে।

যোগাযোগঃ তামিলনাড়ু টুরিজম।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...