আমাদের প্রতিবেশী ছোট্ট দেশ নেপাল কিছু বছর আগেও একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র ছিল, বর্তমানে গণতন্ত্র। যার বেশিরভাগ পাহাড় ও অরণ্য। আমাদের ভারতবর্ষের মতোই নেপালের সভ্যতাও প্রাচীন। নেপালের কোনও বন্দর নেই। পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ভারত আর উত্তরে চীন দেশের ভূখন্ডে ঘেরা! হিমালয়ের কোলে অবস্থানের জন্য নেপালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। নেপালের পাহাড়ি পাকদন্ডি, চঞ্চলা নদনদী, নিবিড় অরণ্য, পাহাড়ি ঝরনা সবই আপনাকে মোহিত করবে।

কাঠমান্ডু

বাগমতি নদীর কিনারে কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী ও সবথেকে বড়ো শহর। মাল্লা রাজাদের আমলের রাজ্য কাঠমান্ডু, পাটন ও ভক্তপুর আজ মিলে হয়েছে কাঠমান্ডু। জনশ্রুতি বহু পূর্বে কাঠমান্ডু ভ্যালিতে ছিল বিশাল এক জলাশয়। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মঞ্জুশ্রীর তরবারির আঘাতে পাহাড়ে ছিদ্র সৃষ্টি হয় যেখান দিয়ে জলাশয়ের জল নেমে গিয়ে, শস্য-শ্যামলা উপত্যকা কাঠমান্ডুর সৃষ্টি। গোপাল, কিরাত, লিচ্ছবি ও মল্ল রাজাদের রাজত্বকালে কাঠমান্ডু বাণিজ্য, শিল্প ও স্থাপত্যে অগ্রগতি করে। কাঠমান্ডুতে পুরোনো দিনের স্থাপত্য ও শিল্পকলা ছড়িয়ে আছে।

বিদেশ হলেও ভারতীয়দের পাসপোর্ট বা ভিসার দরকার হয় না। অবশ্যই ভোটার কার্ড সঙ্গে রাখবেন। সমগ্র নেপালে খনিজ জলই পান করবেন ও সঙ্গে জলের বোতল রাখবেন। পাহাড়ের মানুষরা চায়েতে চিনি অনেক বেশি দিতে অভ্যস্ত, চা অর্ডার করার সময় আপনার চিনির মাত্রা বলে দেবেন। নেপালে ভারতের টাকা চলে কিন্তু ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট চলে না তাই ১০০ টাকার নোটই সঙ্গে নেবেন। আমাদের ভারতীয় ১০০ টাকা নেপালের ১৬০ টাকা।

কলকাতা থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স-এর প্লেন ও দিল্লি থেকে প্রতিদিন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ও বিভিন্ন প্রাইভেট এয়ারলাইন্স-এর প্লেন যাচ্ছে কাঠমান্ডু!

হাওড়া থেকে মিথিলা এক্সপ্রেস যাচ্ছে রক্সৌল। সেখান থেকে  দূরে সীমান্ত পার করে বীরগঞ্জ, তারপর জিপে ঘন্টা পাঁচেক গেলেই কাঠমান্ডু।

তবে কাঠমান্ডুতে না থেকে, অবশ্যই থামেল-এ থাকুন। যেমন প্রচুর হোটেল তেমনই আছে ফোন, ট্রাভেল এজেন্ট, গাড়ি, এয়ারলাইন্স টিকিট এজেন্ট, রেস্টুরেন্ট, সাইবার কাফে ইত্যাদির সুবিধা। সমগ্র নেপালে লোডশেডিং হতে পারে, আগেভাগে জেনে নেবেন হোটেলে জেনারেটর আছে কি না।

এবারে আসি কাঠমান্ডু শহরের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর কথায়।

পশুপতিনাথ মন্দির

কাঠমান্ডু শহরের পূর্ব দিকে গৌশালাতে পুরোনো দুতলা শিব মন্দির, ছাদ সোনার ও দরজা রুপোর পাতে মোড়া। হিন্দুদের অত্যন্ত পবিত্র ধর্মস্থান। মন্দিরের মধ্যে ক্যামেরা, জুতো, চামড়ার বেল্ট, ব্যাগ নিয়ে যাওয়া যায় না। মন্দির প্রাঙ্গণে আরও অনেক দেবদেবীর মন্দির রয়েছে। কাছেই ঘুহেস্বারি দেবীর মন্দির সতী পিঠ রূপে খ্যাত।

বৌদ্ধনাথ স্তুপ

পশুপতি মন্দির থেকে আরও পূর্বদিকে নেপালের সবথেকে বড়ো শ্বেতশুভ্র এই তিব্বতি বৌদ্ধ স্তুপ! সারাবছর বৌদ্ধ ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে।

ভক্তপুর

কাঠমান্ডু থেকে রচ্ কিমি পূর্বে অর্নিকো হাইওয়ে থেকে বামে, এখানে এলে মনে হবে পুরোনো দিনের নেপালে পেৌঁছে গেছেন। লাল ইটের বাড়ি, পাথর পাতা রাস্তা সবই আজও বর্তমান। দরবার স্কোয়ারে দেখবেন মল্ল রাজাদের আমলের অপূর্ব স্থাপত্য ও শিল্পকলা– রাজবাড়ি, মন্দির, নক্সা কাটা কাঠের দরজা জানালা, রাজাদের স্নানের পুকুর। বাতসালা দেবীর মন্দিরের প্রাঙ্গণে বিশাল ব্রোঞ্জের ঘণ্টা রঞ্জিত মল্ল দ্বারা নির্মিত।

এখান থেকে দূরে টিলার উপরে অপূর্ব কারুকার্য খচিত ছাঙ্গু নারায়ণ মন্দির, ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট। হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায়ের মানুষের পুজো পেয়ে থাকেন এখানে বিষ্ণু।

পাটন দরবার স্কোয়ার

পূর্বের ললিতপুর আজ পাটন নামে খ্যাত, এখানেও মল্ল রাজাদের কারুকার্যময় রাজদরবার, প্যাগোডা স্টাইল-এর মন্দির দেখার মতো। কেশব নারায়ণ চক আজ মিউজিয়াম।  কৃষ্ণ মন্দির নেপালের প্রথম সম্পূর্ণ পাথরের শিখর স্টাইল-এর মন্দির। সমগ্র অঞ্চল খুবই ঘিঞ্জি, দরবারের ভিতরে যেতে টিকিট কাটতে হয়। কাছাকাছির মধ্যে রুদ্র বর্ণ ও হিরণ্য বর্ণ মহাবীর মন্দির দেখে নেওয়া যায়।

কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়ার

বসন্তপুর কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রেই এই দরবার তার প্যালেস, অঙ্গন, মন্দির মল্ল রাজাদের স্থাপত্য ও শিল্পকলার নিদর্শন। এখানেই হনুমান ডোকা প্যালেস ও তালেজু মন্দির দর্শনীয়!

স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপ

শহরের পশ্চিমে রিং রোড-এর ওপরে টিলার উপরে স্বয়ম্ভুনাথ স্তুপ। গাড়িতে অনেকটা ওপরে যাবার পরেও খাড়া সিঁড়ি চড়তে হয়। মঞ্জুশ্রীর তরবারির আঘাতে জলাশয় যখন সৃষ্টি হয় উপত্যকায় তখন থেকেই এই স্তুপেরও সৃষ্টি। এখান থেকে কাঠমান্ডু শহর ও হিমালয় দারুণ দেখতে লাগে।

পোখরা

পোখরার দরজা জনসমক্ষে খুলে যায় পৃথ্বী হাইওয়ে হবার পর। তার আগে তো পোখরা যাওয়া মানে অনেকটা হাঁটা পথ। রূপসি পোখরায় ভিড় উপচে পড়তে থাকে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের, দেবতাও যেন তার অবসরে তুলির টানে এঁকেছেন পোখারাকে। উত্তরে তুষারশুভ্র হিমালয়ের শিখরশ্রেণি, সবুজ গালিচায় মোড়া ভূমিঃ তার মধ্যে তিনটি অপূর্ব প্রাকৃতিক লেক। ধৌলগিরি, অন্নপূর্ণা, মানাসলু ও মাচ্ছাপুছারে শৃঙ্গ দৃশ্যমান, প্রথম তিনটির উচ্চতা তো অনেক।

পোখরা গেছি ডজন বার বা তারও বেশি, বাস, প্লেন, ট্যাক্সি এমনকী মোটরবাইকেও। প্রত্যেকবারেই ভালো লেগেছে এই শহরকে, তা সে শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা যে-কোনও ঋতু হোক না কেন। পোখরা যাবার সেরা সময় অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মার্চ। দুর্গাপুজো বা ভাইফোঁটার সময় অবশ্যই যাবেন না। পোখরাতে বৃষ্টি অনেক বেশি হয় তাছাড়া পাহাড়ও ঢেকে থাকে মেঘের চাদরে।

ভারত থেকে পোখরা যাবার সোজা কোনও পথ নেই। কলকাতার হাওড়া থেকে মিথিলা এক্সপ্রেসে রক্সৌল হয়ে বীরগঞ্জে, সেখান থেকে বাসে পোখরা।

আপনি যদি কাঠমান্ডু হয়ে যান তাহলে তো অনেক ভাবেই যেতে পারেন। সকালে ও বিকালে প্লেন যাচ্ছে কাঠমান্ডু থেকে পোখরা। এই সব এয়ারলাইন্স-এর এজেন্ট রয়েছে কাঠমান্ডুতে সর্বত্র। ডিসকাউন্ট করে নেওয়া আপনার মুনশিয়ানা, এটা কেউ শিখিয়ে দিতে পারবে না।

বড়ো ও ছোটো (মাইক্রো) দু’রকমের বাস যায় কাঠমান্ডুর বালাজু থেকে কলঙ্কি হয়ে পোখরা। তবে এই সব বাসে বেশ ভিড় হয় সিটও আরামদায়ক নয়। থামেল-এর সামনে থেকে গ্রিন লাইন বাসে যান। এই বাসে বেশিরভাগ পশ্চিমের পর্যটক। কাঠমান্ডুর হোটেলে বললেই ওরা আপনার টিকিট বুক করে দেবে। এই বাসের ভাড়া একটু বেশি।

কাঠমান্ডু থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি নিয়েও যেতে পারেন। তবে তা হবে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। ট্যাক্সির কোনও ফিক্সড রেট নেই নেপালে।

উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর বাস স্ট্যান্ড থেকেও রোডওয়েজ-এর বাস ও শেয়ার ট্যাক্সি যায় সুনাউলি, ভারত-নেপাল বর্ডার। এখান থেকে প্রাইভেট বাস ছাড়ে প্রতি রাতে, ভোরবেলায় পোখরা পৌঁছায়।

ফেওয়া লেক

পোখরার পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নেপালের দ্বিতীয় বিশাল জলাশয়। লেকের পূর্ব পাড়ে যত হোটেল ও দোকান, লেকের জলে সদা ভাসমান নৌকোর সারি যেটাতে পারেন উঠে পড়ুন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে লেকের জলে তুষার শৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি অনবদ্য। মেঘলা থাকলেও ক্ষতি কি, লেকের জলের দিকে তাকিয়েও বহু সময় কেটে যায়। লেকের জল অবশ্য পরিশুদ্ধ নয় ঘোলাটে সবুজ রঙের।

লেকের মধ্যেখানে বরাহী দেবীর মন্দির, চাইলে নৌকো ভাড়া করে দেখে নিতে পারেন। ভক্তরা তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হলে দেবীর মূর্তির সম্মুখে শনিবার পশুবলি দেন।

লেকের দক্ষিণে বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা। যেতে চাইলে নৌকোয় লেক পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের মাথায় চড়তে হবে এই শ্বেতশুভ্র বিশাল প্যাগোডা দেখতে। এখান থেকে অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ ও পোখরা শহর সুন্দর দৃশ্যমান।

লেকের পাশ বরাবর অসংখ্য কাফে, হোটেল। সকালে বা দুপুরে কফি-তে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যান লেকের সৌন্দর্যে অথবা বোটিংও করতে পারেন লেকের জলে। যদি চান অলস ভাবে পায়ে পায়ে চলুন লেকের পাশ দিয়ে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব। সন্ধেবেলায় লেকের পাশ সেজে ওঠে নানা রঙের আলোর মেলায়। অনেক হোটেল বা রেস্তোরাঁয় চলে নেপালি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আপনি চা পান করতে করতেও এর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। সঙ্গে বাচ্চারা থাকলে তারা যেন হইচই না করে সেইদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন অনেক শিল্পী এখানে টিপ্স-এর আশায় অনুষ্ঠান করে, হোটেল থেকে এদের কোনও মাইনে দেওয়া হয় না।

লেকের কাছে রয়েছে প্রচুর দোকানও তবে বেশিরভাগ, ভারত ও চিন-এর সস্তা সামগ্রী অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। এখানে অনেক দোকানের মালিকই ভারতের কাশ্মীরিরা, টার্গেট কাস্টমার অবশ্যই ইউরোপ বা আমেরিকাবাসীরা, পণ্যের দাম শুনেই বুঝতে পারবেন। ভারতীয়দের এরা ঠকায় পশমিনা বিক্রি করে, কারণ একটাও দোকান পশমিনা রাখে না। অন্তত আমি কখনও দেখিনি। তাই অবশ্যই বুঝেশুনে জিনিস কিনবেন।

পোখরাতে অবশ্যই চেষ্টা করবেন লেকসাইড অর্থাৎ ফেওয়া লেকের কাছেই থাকতে, যদিও এখানকার হোটেল ভাড়া বেশি। সবসময় চেষ্টা করবেন ট্যাক্স সমেত রেট নিতে, পারলে হোটেল-এর কার্ডের পিছনে রেট লিখিয়ে নেবেন, ট্যাক্স সহ। হোটেল প্রচুর তাই আর নাম দিলাম না। আমি প্রত্যেকবার থেকেছি লেকের কাছে হোটেল মন্দাকিনীতে।

পোখরার পৃথ্বী চকের কাছে প্রচুর হোটেল রয়েছে। মাইক্রো ও সাধারণ বাস আড্ডাও এখানেই। এখানে টাকা বাঁচবে কিন্তু লেকের পাশে থাকার আনন্দ পাবেন না।

পোখরার মূল আকর্ষণ হিমালয়, যা দেখতে যেতে হবে ভোরবেলায়। এর জন্য আপনাকে ট্যাক্সি আগে থেকে বুক করতে হবে যা আপনার হোটেলই করে দেবে। আপনি যদি ফেওয়া লেকের কাছে থাকেন তবে এই লেক ছাড়া বাকি জায়গাগুলো ঘোরার জন্য গাড়ি ভাড়া করাই ভালো। পোখরাতে লোকাল বাস সার্ভিস না থাকার মতো। তাছাড়া আর এক অসুবিধা হল ভাষা। সবাই হিন্দি, ইংরেজি বুঝতে বা বলতে পারে না। পোখরা ঘুরে দেখবার জন্য আপনাকে দুটো দিন দিতে হবে।

বেগনাস ও রুপা লেক

পোখরা-কাঠমান্ডু পথে পৃথ্বী চকের থেকে প্রায় রপ্ত-রছ কিমি দূরে হাইওয়ে ছেড়ে উত্তরের পথে কিছুটা গেলেই এই লেক দুটি। দুটি লেকের মাঝে গহন অরণ্য ঘেরা টিলার নাম পঞ্চভাইয়াদণ্ড। অতি শান্ত এখানের পরিবেশ, লেকের জলে তুষার শৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি। নৌকোয় চড়ে লেকের জলে মাছও ধরা যায়।

মহেন্দ্রপুল

পোখরার বুক চিরে বয়ে চলেছে তীব্র বেগে সেতি-গণ্ডকী যার জলের রং ঘোলাটে সাদা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্জ। পুরোনো মিশন হাসপাতালের কাছে মহেন্দ্রপুল থেকে দেখা যায় এই নদীর তীব্রতা।

ডেভিস ফল্স

নেপালিরা বলে পাতালে ছাঙ্গ, পাদ্রী খোলার জল প্রচণ্ড গর্জনে পাতালে প্রবেশ করছে। ডেভিস নামে কোনও এক বিদেশিনি এখানে স্নান করছিলেন, সেই সময় কাছের বাঁধের লকগেট খোলা হয়। পাদ্রী খোলার জল প্রচন্ড বেগে তাকে সমেত ভাসিয়ে নিয়ে প্রবেশ করে। তারপরে এটাকে ডেভিস ফল্স নাম দেওয়া হয়।

গুপ্তেশ্বর গুহা

ডেভিস ফল্স-এর উলটো দিকে বেশ কিছু ধাপ সিঁড়ি নামতে হয়। গুহাতে এক প্রাকৃতিক শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় যা এখনও গুহাতেই আছে।কোথাও কোথাও জলে ভেজা ও পিচ্ছিল।

মহেন্দ্র গুহা

নেপালিতে ‘চামেরো ওধার’ মানে ‘বাদুড়ের ঘর’, লাইমস্টোন-এর গুহা। গুহার প্রাকৃতিক রূপ দেখতে গেলে সঙ্গে টর্চ নিয়ে আসতে হবে। খুব বেশি পর্যটক এই গুহা দেখতে আসে না।

পোখরা মিউজিয়াম

অবস্থান এয়ারপোর্ট ও মহেন্দ্রপুল-এর মাঝে। টিকিট আছে এবং ক্যামেরার চার্জ লাগবে। পশ্চিম নেপালের গুরুং, থাকলি ও তরু সম্প্রদায়দের ইতিহাস, বেশভুষা ও জীবনযাত্রা প্রদর্শিত হয়েছে এখানে।

বিন্দবাসিনী মন্দির

পুরোনো বাজারের কাছে জাগ্রত দেবী ভগবতীর মন্দির। জনশ্রুতি দেবীর কাছে মানত করলে তা বিফল হয় না। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে পশুবলির প্রথা শনিবারে।

এছাড়া পোখরা থেকে শুরু হয়েছে নানা ট্রেক রুট যেমন ঘান্দ্রুক, জমসম, অন্নপূর্ণা সার্কিট ইত্যাদি।

গোর্খা

গোরক্ষনাথ (মহাদেব) ও গোরোক্ষকালী মন্দির থেকে জেলার নাম গোর্খা। শাহ বংশের প্রতিষ্ঠাতা দ্রব্য শাহ আমল থেকে ধীরে ধীরে শাহ রাজারা তাদের প্রতাপ নেপালে বিস্তার করতে থাকে। রাম শাহ ন্যায়বান রাজা।পৃথ্বী নারায়ণ শাহ কাঠমান্ডু আক্রমণ করে ওখানকার নেবারী রাজাকে তাড়িয়ে, নিজের দখলে নিয়ে আসে। রাজধানীও গোর্খা থেকে স্থানান্তরিত হয় কাঠমান্ডুতে। গোর্খা সৈন্যরা পৃথ্বী নারায়ণের নেতৃত্বে একে একে নেপালের শতাধিক ছোটো ছোটো রাজ্যগুলোকে জয় করে গড়ে তোলে আজকের নেপাল। গোর্খাদের সাহসী ও লড়াকু স্বভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটিশরা গোর্খা রেজিমেন্ট গড়ে। আজও ভারতে ও ব্রিটেনে গোর্খা রেজিমেন্ট রয়েছে। যার উৎপত্তি এই গোর্খা জেলা। এই জেলার বহু সন্তান সৈনিক। আজকের নেপালি ভাষাও পূর্বের গোর্খালি ভাষা। নেপালের ইতিহাসে পৃথ্বী নারায়ণ শাহ এক উজ্জ্বল নাম, বহু জনশ্রুতি রয়েছে পৃথ্বী নারায়ণকে ঘিরে।

গোর্খা কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়া যায়। গোর্খা অবশ্যই নেপালের সাধারণ টুরিস্ট ম্যাপেও তেমনভাবে অন্তর্গত নয়। তাই যাবার, থাকবার বা ঘোরার সুবিধা সীমিত। কাঠমান্ডুর বালাজু থেকে মাইক্রো বাস যাচ্ছে সোজা গোর্খা বাজার। এছাড়া পোখরা থেকে কাঠমান্ডু ফেরার পথে আবু খয়রানি নেমে পড়ুন। এখানে লোকাল বাস পাবেন গোর্খা বাজার যাবার জন্য।

গোর্খা বাজার থেকে র কিমি আগে হাতেগোনা কয়েকটা হোটেল, অতি সাধারণ মানের যার মধ্যে গোর্খা ইন আমার সবথেকে পছন্দের। আগে হোটেল ঘুরে নিজের ঘর পছন্দ করে নেবেন।

গোর্খা দরবার

ঐতিহাসিক এই দরবারের অবস্থান এক টিলার মাথায় গোর্খা বাজারের ওপরে। একই সাথে দুর্গ, রাজসভা ও মন্দির। পায়ে পায়ে খাড়া চড়াই ভেঙ্গে পৌঁছোতে হবে। হাঁটা পথ এঁকেবেঁকে উঠেছে পাহাড় বেয়ে। গোর্খাদের ছোটো ছোটো গ্রাম পথের পাশে। খেলা করছে শিশুর দল, বড়োরা রোদ পোয়াচ্ছে বা আড্ডায় ব্যস্ত। ওরাই দরবারের পথ দেখিয়ে দেবে। পাহাড়ের মাথায় পৌঁছোতে শেষের দিকে আছে অনেক ধাপ সিঁড়ি। পাহাড়িপথে হাঁটতে অভ্যস্ত হলে র ঘণ্টা, নচেৎ আরও বেশি সময় লাগতে পারে। এখানে আছে গোরক্ষনাথ ও গোরোক্ষকালী মন্দির। দুর্গাপূজার সময় পশুবলি দেওয়া হয়। এখান থেকে মানাসলু ও হিমলচুলির দৃশ্য অসাধারণ। পায়ে স্নিকার ও সঙ্গে খাবার জল নিতে ভুলবেন না।

মিউজিয়াম

দরবার দেখা শেষ হলে নেমে আসুন নীচে মিউজিয়াম দেখতে। টিকিট ও ক্যামেরার চার্জ লাগবে। এখানে সাজানো আছে শাহ আমলের বাসনপত্র, পেইন্টিং ও অস্ত্রশস্ত্র।

মনকামনা মন্দির

রোপওয়ে হবার আগে আবু খয়রানি থেকে পায়ে হেঁটে খাড়া পাহাড় পথে কয়েক ঘণ্টায় পৌঁছোনো যেত এই মন্দিরে। আজও অনেকেই পাহাড়ি গ্রাম ও নাসপাতি, কমলালেবুর বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে পৌঁছোয় এই মন্দিরে। জনশ্রুতি, দেবী সকলের মনের কামনা পূর্ণ করেন। কাঠমান্ডু পোখরা পথে হাইওয়ের ওপরেই রোপওয়ে পৌঁছে দেবে পাহাড় চূড়ার মন্দিরে। ছুটির দিনগুলোতে ভালোই ভিড় হয়। মন্দির থেকে হিমালয় শৃঙ্গ ও গোর্খা শহর সুন্দর দেখা যায়।

আমার দীর্ঘ নেপালের অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রচুর পর্যটক টাকা খরচা করে কম্বল কিনে নেপাল থেকে ফেরেন। নেপালে অল্প মুনাফায় কেউ ব্যাবসা করে না। ওই সব কম্বল চিনের তৈরি, চিন-নেপাল সীমান্তে এর দাম অনেক কম।

কাঠমান্ডুতে চিনের জ্যাকেট, সোয়েটার, মেয়েদের ব্যাগ নিউ রোড-এ দোকান ঘুরে দেখে বুঝে কিনবেন। দরদাম চলে। অনেক মলে বিদেশি চকোলেটও পাবেন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...