বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারে আমি বসতেই প্লেটে করে কিছু মিষ্টি এনে উনি আমাকে দিয়ে বললেন, 'লাস্ট তোমাদের গ্রাম যখন গিয়েছি তখন বন্দনার বয়স ১৩-১৪ বছর হবে, তুমিও তখন তেমনই হবে। হয়তো তোমাকেও দেখেছি তখন, এখন তো সব কত বড়ো হয়ে গেছ।'
আমি বললাম, ‘এবার আর একবার যাবেন কাকিমা আমাদের গ্রাম।'
যেতে তো ইচ্ছে করে কিন্তু তোমার কাকুর যে খুব কাজের চাপ, দেখছ না এখনও ফিরে আসেননি।
—হ্যাঁ তা ঠিক, তবুও সময় করে...
—আচ্ছা বাবা, সুযোগ পেলেই যাব। ইন্দু মানে বন্দনার মা প্রায়ই যেতে বলে, আর যেতে পারি না বলে ওর রাগ হয়। ওকেও বলেছি এখন তো কাছেই থাকছি, ঠিক যাব।
মিষ্টি খাওয়া হলে কাচের গেলাসের জলটা খেয়ে টেবিলে নামিয়ে রেখে বললাম, 'কাকিমা আজ আমি আসি, সাড়ে দশটায় মেসের বাইরের গেট বন্ধ করে দেয়।”
সন্ধ্যাতারা এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল আমাদের সামনেই। আমাকে উঠতে দেখে এগিয়ে এল। গেট পর্যন্ত বেরিয়ে এল ওর মা আর ও। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর কলেজে একদিন বন্দনা আমাকে বলল, ‘রাতে টিউশন থেকে ফেরার পথে সুরুচির খুব ভয় করছে। যদিও সামান্য রাস্তা, তবুও শহরের মেয়ে তো এমন রাস্তায় অভ্যস্ত নয়। আমি যে ওকে নিয়ে আসব তারও উপায় নেই। ওর যে তিনদিন টিউশন সেই তিনদিনই তো একই সময়ে আমাদের মেসেও বিকাশ স্যার পড়াতে আসেন।'
আমি একটু চুপ থেকে বললাম, ‘আচ্ছা, আমি তো আছি, আমাদের মেসের পাশ দিয়েই তো রাস্তা, আমি ৯টার সময় একবার চলে যাব।”
—না না, তুই এত করবি কেন? তাছাড়া তোরও তো পড়াশোনা আছে।'
—মাত্র তো ১০ মিনিটের পথ, আসা যাওয়া তে খুব বেশি হলে আধ ঘণ্টা। এত ভাবিস না আমি নিয়ে আসব।
এবার আমার অপেক্ষা শুরু হল সপ্তাহের তিনটে দিনের। সোম, বুধ আর শুক্র। ঘড়িতে তাকিয়ে থাকতাম কখন ৮ টা ৪৫ বাজে। সন্ধ্যাতারা একটা গোলাপি রঙের লেডি বার্ড সাইকেল নিয়ে যেত, আর ফেরার সময় দু'জনে পাশাপাশি হেঁটে ফিরতাম। শুরু হল কথায় কথায় আমাদের ভেসে যাওয়া। খুব কথা বলত সন্ধ্যাতারা। আমি শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতাম। এভাবেই পেরিয়ে গেল অনেকগুলো দিন।