সৌন্দর্য্য এবং স্বাস্থ্য উভয়ে উভয়ের পরিপূরক। বাজারে বহু ধরনের প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যায় যেগুলি ত্বককে সুন্দর করে তুলতে সক্ষম, বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবে skin hygiene বজায় রাখতে জীবনশৈলী এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যায় পরিবর্তন আনাটা খুব জরুরি। যদি দৈনন্দিন হাইজিন-এর খেয়াল রাখি আমরা তাহলে সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে কোনওরকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না।
ত্বককে পরিষ্কার, দূষণমুক্ত এবং টানটান রাখতে ভালো স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলা উচিত। কোনও অবস্থাতেই এটাকে অবহেলা করা যাবে না। অনেক মহিলাই ত্বকের যত্নে কোনও রুটিন মেনে চলতে আলস্য বোধ করেন। ফলে তাদের ত্বক সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ত্বকের যত্নে নীচে দেওয়া কিছু টিপস মেনে চলার চেষ্টা করুন যাতে ত্বক হবে কোমল, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং আকষর্ণীয়।
ড্রাই ব্রাশিং দিয়ে দিন শুরু করুন
দিনের প্রারম্ভে ড্রাই ব্রাশিং-এর প্রয়োগ করা উচিত। এটি ত্বকের মৃত কোশ দূর করতে সহায়তা করে এবং এটি একটি প্রাচীন টেকনিক। ড্রাই ব্রাশিং শরীরে সুচারুরূপে রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এবং রোজের ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
- প্লাস্টিকের ড্রাই ব্রাশ ব্যবহার করার বদলে ন্যাচারাল ফাইবার দিয়ে তৈরি ব্রাশ ব্যবহার করুন। প্লাস্টিকের ব্রাশ ব্যবহার করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে
- বাইরে থেকে ভিতরের দিকে, পা থেকে শুরু করে শরীরের উপরের অংশে এগোতে এগোতে ধীরে ধীরে ব্রাশ ত্বকে ঘষুন। পা, গোটা শরীর এবং হাত ভালো করে ঘষুন ব্রাশ দিয়ে মুখের জন্য ছোটো এবং মসৃণ ব্রাশ ব্যবহার করুন
- ড্রাই ব্রাশিং করার সময় ত্বক এবং ব্রাশ শুকনো হওয়া বাঞ্ছনীয়, নয়তো ভিজে ত্বকে ব্রাশ করলে মনের মতো ফলাফল পাওয়া যাবে না।
ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন
ত্বক ধোয়ার পর, সেটা রুক্ষ এবং প্রাণহীন হয়ে পড়ে। ত্বকের প্রদাহ এবং ব্রেকআউট রোধ করতে ময়েশ্চারাইজার লাগানো একান্ত আবশ্যক। কিছু ঋতুতে ত্বকের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। বাজারে বহু ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায় সুতরাং নিজের ত্বক অনুযায়ী বেছে নেওয়া প্রয়োজন।
মুখে লেবুর রস বা টুথপেস্ট লাগাবেন না
সাধারণত ব্রণ এবং দাগছোপের জন্য আমরা নানা প্রকারের ঘরোয়া টোটকার কথা সবাই শুনে থাকি। এর মধ্যে লেবুর রস বা টুথপেস্ট-এর মতো উপাদানের ব্যবহারের কথা যদি শুনে থাকেন, তাহলে মুখে ওই দুটি উপাদান একেবারেই ব্যবহার করবেন না। কারণ লেবুর রস প্রচণ্ড অ্যাসিডিক হওয়ার ফলে ত্বক লাল হয়ে প্রদাহ-র সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
টুথপেস্ট-এ দাঁত সাদা করার উপাদান থাকে যা কিনা লেবুর রসের মতোই ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং দাগছোপ, ব্রণ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে অ্যান্টি স্পট ট্রিটমেন্ট অথবা এসেনশিয়াল অয়েল বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতি সপ্তাহে মেক-আপ ব্রাশ ধুয়ে রাখুন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপটি সকলে এড়িয়ে যান। কিন্তু সৌন্দর্য্য এবং স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এটা ভুল পদক্ষেপ হতে পারে। অপরিষ্কার মেক-আপ ব্রাশ যেমন ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, তেমনি ব্রাশে লেগে থাকা আগের মেক-আপ, পরবর্তীকালের মেক-আপ-কে নষ্ট করে দিতে পারে।
অপরিষ্কার মেক-আপ ব্রাশ ধোওয়ার জন্য বেবি ওয়াশ বা বেবি শ্যাম্পু এবং গরমজল ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
এক্সফলিয়েটিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন
এক্সফলিয়েটিং ক্লিনজার ত্বকের পক্ষে ভালো। যে-কোনও ওষুধের দোকানে বা কসমেটিক শপ-এ সহজেই এগুলি কিনতে পাওয়া যায়। এই ধরনের ক্লিনজারে ছোটো ছোটো গ্র্যানিউলস থাকে যা ত্বককে পরিষ্কার করে। সব ধরনের ত্বকেই এক্সফলিয়েটিং ক্লিনজার খুব ভালো কাজ করে।
সানস্ক্রিন লাগান
প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। বাড়ির ভিতরেই হোক অথবা বাইরে। রোজ সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে যেমন সূর্যের ক্ষতিকারক আল্ট্রা ভাযোলেট রে থেকে ত্বক সুরক্ষা পাবে, তেমনি শুরু থেকে বলিরেখা আটকানো সম্ভব হবে। অধিকাংশ প্রসাধনীতে এসপিএফ থাকে। বিশেষ করে মযে্চারাইজার কেনার আগে প্যাকের বাইরে লেখা এসপিএফ ফ্যাক্টর ভালো করে দেখে নেবেন। এর ফলে শুধু মুখ নয়, সারা শরীরের ত্বক আপনি দূষণমুক্ত রাখতে পারবেন।
মেক-আপ ব্রাশ বা টুথব্রাশ টয়লেট-এর ভিতর নিয়ে যাবেন না
আমাদের অনেকেরই জানা নেই শৌচালয়ে ফ্ল্যাশ করার সময় শৌচালয়ে জলে উপস্থিত জীবাণু ১৬ ফুট উপর পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে। সুতরাং সিংক-এ অথবা শৌচালয়ে ভিতরে রাখা ব্রাশে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করার একটা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। সাবধানতা অবলম্বন করতে বন্ধ ক্যাবিনেট ব্যবহার করুন ব্রাশ রাখবার জন্য এবং ব্রাশ অবশ্যই ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখবেন। সব থেকে ভালো হয় এগুলি শৌচালয়ে বাইরে রাখার ব্যবস্থা করলে।
প্রচুর জল পান করুন
প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া উচিত কারণ জল ত্বককে হাইড্রেট করে। ত্বক হাইড্রেটেড থাকলে তবেই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক তখনই পাওয়া সম্ভব, যখন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। তবে কোল্ড ড্রিংক এবং অতিরিক্ত চিনি-যুক্ত পানীয় ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলুন।
ট্যানিং রোধ করুন
সূর্যের আল্ট্রাভাযোলেট রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে। সানবার্ন থেকে বাঁচতে বেশি করে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন যাতে ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায় এবং ট্যানিংও রোধ করা যেতে পারে।
ব্রণ খুঁটবেন না
ব্রণ খুঁটলে বা বারবার ওতে হাত দিলে মুখে দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়াও জ্বালা করবে এবং ব্রণ সেপটিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। ব্রণ হলে ফেস মাস্ক অথবা অ্যান্টি স্পট ট্রিটমেন্ট-এর সাহায্য নিতে পারেন।