নিত্যদিনের জীবন সংগ্রাম, দৌড়ঝাঁপ, সংসারের টানাপোড়েনে মানুষের হাল অনেকটা রামগড়ুরের ছানার মতোই। রূঢ় বাস্তবের চাপে, মুখের হাসি smile ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ঘিরে ধরছে হতাশা, অবসাদ, দুঃখ। অথচ এসব সমস্যার উপায় আমাদের হাতের নাগালেই! প্রাণখুলে হাসুন। বিনা পয়সার এক চিলতে হাসিই পারে হতাশার চাদর সরিয়ে আপনাকে আনন্দে ভরিয়ে দিতে।
সুন্দর smile আরও সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আকর্ষণীয় করে তোলে ব্যক্তিত্বকে। সাদামাটা চেহারাও একটুকরো হাসিতে হয়ে উঠতে পারে অনন্য। বাড়ে আত্মবিশ্বাস। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে হাসির ঐশ্বর্য সবার হাতের মুঠোতেই আছে। দরকার শুধু তাকে নিত্যদিনের সঙ্গী করে নেওয়া।
কঠিন পরিস্থিতিতে হাসি smile কীভাবে মানুষকে সাহায্য করে, সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। মনোবিদদের কথায়, ‘হাসি সম্পর্ককে মজবুত করে। কারণ, যাতায়াতের পথে অচেনা মানুষও যখন স্মাইল করে, তখন অপরিচিত মানুষটির সঙ্গে অন্যরকম ‘সম্পর্ক’ তৈরি হয়ে যায়। তবে হাসি তখনই ফলপ্রসু হয়, যখন তা হূদয় থেকে বেরিয়ে চোখের দৃষ্টিতে প্রতিফলিত হয়। চেহারায় আলাদা ঝলক এনে দেয়।’
হাসির পাঠ –
কীরকম হওয়া উচিত হাসি? মন থেকে এবং সত্যিকারের। হাসির সঙ্গে আমাদের ভাবনা ওতপ্রতোভাবে জড়িত। ইতিবাচক মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের ভালো গুণের দিকে নজর দিন। তাহলে সেই ব্যক্তিকে দেখে এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে দিতে অসুবিধা হবে না। আর তা হবে সত্যিকারের আন্তরিক হাসি।
হাসির আগে নিজেকে সহজ করে তুলুন। মনের মধ্যে নেগেটিভ কিছু চললে, তার প্রতিফলন পড়বে। কিন্তু তা যদি অন্তর থেকে বেরিয়ে আসে, তার চমক আপনার চোখেমুখে ফুটে উঠবে। অন্যদের হূদয়ও স্পর্শ করবে।
হাসির আমি-তুমি –
কিছু মানুষের জন্য হাসি দূরগ্রহের বস্তু। হাসি কী জিনিস, তারা জানেন না, এরকম নয়। কিন্তু গম্ভীর পারিপার্শ্বিকে বড়ো হওয়ার প্রভাব এতটাই বেশি থাকে তাদের উপর যে, তারা হাসতে ভুলে যান। ভালোবাসার আবেগঘন মুহূর্তেও প্রাণোচ্ছল হাসি থেকে যায় অন্তরের মধ্যেই। তা প্রকাশ পায় না। অনেকে আবার লাজুক প্রকৃতির হন। চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন। মন খুলে হাসতে পারেন না।
প্রতিটি মানুষই আসলে ভিতর থেকে আলাদা। কেউ দমফাটা হাসিতে মেতে ওঠেন, কারওর আবার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি। কিন্তু যারা একদমই হাসেন না, তারা চেষ্টা তো করতেই পারেন। এবং তখন পরস্পরের সঙ্গে হাসি মজায় মেতে ওঠা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
হাসিতে সাবধান –
হাসির ফাঁদ পাতেন অনেকে। ধান্দাবাজ, স্বার্থপর, সুবিধাবাদীরা হাসির জালে বিভ্রান্ত করেন মানুষকে। তবে এই হাসির মধ্যে সততা নেই। হাসির দাঁওপ্যাঁচ বুঝে ধান্দাবাজদের থেকে দূরে থাকতে হবে। আছে তাচ্ছিল্যের হাসি, অপমানেরও। হাসির মধ্যে যদি সততা খুঁজে না পান, তাহলে সেই মানুষটির থেকে সাবধান।
হাসির গুরুত্ব –
মুখে কিছু না বলেও মনের ভাব অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন ছোট্ট হাসিতেই। অন্যের মধ্যে যা পজিটিভ এনার্জি তৈরি করে। আবার গম্ভীর মুখের অভিব্যক্তিতে ঠিক উলটো ছবি।
কথা বলার সময় পরিবেশ গম্ভীর হয়ে উঠলে, পরিস্থিতি হালকা করতে ছোট্ট হাসিই যথেষ্ট। দেখবেন পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। কমে গেছে মানসিক চাপও। চাপ মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে ভুল পথে চালিত করে। সর্বদা হাসিখুশি থেকে নিজেকে হালকা রাখুন। কাজ অনেক সহজ হবে।
হাসির বাহানা –
১) মনকে ভালো রাখতে হাসিখুশি মানুষের সঙ্গে সময় কাটান, পজিটিভ এনার্জি মিলবে
২) মতানৈক্য-ঝগড়াঝাঁটি থেকে দূরে থাকুন
৩) ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন, মানসিক চাপ কমবে
৪) মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়ুন, ফ্রেশ লাগবে
সুষম পুষ্টিকর খাবার –
শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার জরুরি। কিছু নিয়ম মেনে চলুন। দিনে ১-২ বার বেশি খাবার খাওয়ার বদলে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খান। খাবারের তালিকায় রাখুন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ শরীর ভালো তো মন ভালো। আর এরজন্য খাবারের চেয়ে ম্যাজিক-টনিক আর কিছু নেই। সঙ্গে প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা নিশ্চিন্ত ঘুম।
স্বাস্থ্যের ডাক্তারি –
শরীরের জন্য হাসি-খুশি থাকাটা জরুরি। প্রাণোচ্ছ্বল হাসি চাপ কমিয়ে শরীর ও মনকে রিল্যাক্সড রাখে, স্ট্রেস হরমোনের মতো কার্টিসোল এবং অ্যাড্রিনালিন-এরও স্তর কমায়। হাসি শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়। মানসিক অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।
প্রাণখুলে হাসতে পারলে উত্তেজনা ও ভয় কমে। রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত হয়। ফলে তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
হাসি smile সুন্দর করুন –
সুন্দর হাসির জন্য দাঁতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঝলমলে, পরিষ্কার দাঁত থাকাটা জরুরি। বাজারে কমদামি অনেক রকম টুথপেস্ট পাওয়া যায়। কিন্তু প্রয়োজনে বাড়তি খরচ করে ভালো মানের পেস্ট ব্যবহার করুন। নিয়মিত দাঁতের পরিচর্যা করুন এবং সুন্দর মন নিয়ে প্রাণ খুলে হাসুন।
হাসিখুশি থাকার সুবিধা –
১) জীবনের লম্বা ও কঠিন সফরকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে হাসি। এটা শরীর-মন– ভালো রাখার পাসওয়ার্ডও বটে
২) হাসিটাই মানুষের আসল সৌন্দর্য। এরজন্য কোনও খরচ করতে হয় না। অথচ, এক টুকরো হাসিতে আপনি জিতে নিতে পারেন অন্যের মন। আপনার প্রাণোচ্ছ্বল চেহারা প্রভাবিত করবে অন্যকেও। জীবন সফরে তাই সর্বদা লেগে থাকুক হাসিটুকু
৩) হাসি চোখ, মুখের গ্ল্যামার আরও বাড়িয়ে দেয়। মনের উপর যার সদর্থক প্রভাব পড়ে। কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অক্সিজেন জোগায়
৪) সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার হল হাসি