রাজ্যে আবার কোভিডের গ্রাফ উর্ধমুখী৷ এদিকে রাজ্যের স্কুলগুলি ১৫ নভেম্বরের পর খোলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে তা কি সত্যিই সম্ভব, এ নিয়ে দ্বিধায় নানা মহল। Education system এখন বেসামাল অবস্থায়। বেসরকারি ক্ষেত্রের বোর্ড আইসিএসই, আএসসি এবং সিবিএসসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত জানানো হয়েছে, দ্বাদশ ও দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা পরীক্ষাকেন্দ্রেই হবে। কিন্তু দুটি স্তরেই পরীক্ষা হবে MCQ (Multiple choice question) পদ্ধতিতে৷ সেমিস্টার অনুযায়ী হবে পরীক্ষা, যেটি আপাতত নভেম্বর মাসে নির্দিষ্ট৷ যদিও ছাত্রছাত্রীদের একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করে দেওয়া হয়েছে অনলাইনেই এবং এতে সাময়িক ভাবে মা-বাবা ও পড়ুয়ারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে- কিন্তু এর মূল্য তাদের আজীবন দিয়ে যেতে হবে।
কোভিড সংক্রমণ বাড়লে আবার বোর্ড পরীক্ষা পিছোবে। Board Exams পিছিয়ে যাওয়া বা বানচাল হওয়া মানে একটা গোটা প্রজন্মের পরবর্তী উচ্চশিক্ষার তোরণদ্বার পার হওয়াও অনিশ্চিত। উচ্চশিক্ষার নানা কলেজ, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, টেকনিকাল ইনস্টিটিউট সবেতেই ছাত্রছাত্রীরা সুযোগ পায় দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর। বলতে গেলে কেরিয়ারের গতিপথ সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে এই পরীক্ষা তাদের জীবনের একটা বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জ। এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই সন্তান যাতে তার আগামী জীবনে স্থিতু হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারে, তাই মা-বাবারাও তাদের এক্সট্রা গাইডেন্স-এর জন্য খরচ করতে পিছপা হন না। এখন এই পরীক্ষা কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা সেই অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। এর মাঝে বহু দেশি বিদেশি এনট্রান্স পরীক্ষার ডেট পড়বে। কিছু পিছোবে, কিছু নির্ধারিত সময়ে হয়ে যাবে। এই দ্বাদশ শ্রেণিভুক্তদের একটা নিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আরও কমবে। যদি বা এই সব পরীক্ষা রিশেডিউল হয়, তখন আবার আরও একটা আশঙ্কা থাকবে একই দিনে একাধিক পরীক্ষার ডেট ক্ল্যাশ হবার।
শিক্ষা বর্তমানে একটি লাভজনক ব্যাবসায় রূপান্তিরত হয়েছে। যেখানে প্রাইভেট শিক্ষার ক্ষেত্রগুলিতে আয় বেশি, ব্যয় কম। অনলাইন স্টাডি হলে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার আরও কম। কিন্তু চড়ামূল্যে তারা নানা কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে। কোভিড-এর কারণে তাই এইসব এন্ট্রাস পরীক্ষার ডেট যদি একটা অন্যটার সাথে ক্ল্যাশ-ও করে, এতে প্রতিষ্ঠানের কোনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের টাকা এবং সুযোগ, দুই-ই হাতছাড়া হবে।
এমনও হতে পারে কিছু পরীক্ষার্থীর হয়তো অর্থাভাবে একটা বছরই নষ্ট হবে। এর মাশুল তাকে সারা জীবন ধরে দিয়ে যেতে হবে। অনেকেই হয়তো আগে থেকে কোন কোর্স পড়বে তার ফর্ম ভরে রেখেছিল। তার জন্য অর্থ খরচও হয়েছিল। কোভিড সেই পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিল। এবার আরও বড়োসড়ো সমস্যা তৈরি হতে পারে, যদি এই সব ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠান পয়সার লোভে, পরীক্ষা না-দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের ব্যাকডোর দিয়ে এন্ট্রাস-এর সুযোগ করে দেয়। এর ফলে অভাবী মেধাবীরা স্থান পাবে না কিন্তু ধনীর অযোগ্য সন্তান এই সব প্রতিষ্ঠানে জায়গা দখল করে ফেলবে।
এদিকে শুধু দ্বাদশ শ্রেণিই কেন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ক্ষেত্রেও চলছে অনিশ্চয়তা। যারা সত্যিই মেধাবী তারা কেরিয়ারের পথে পিছিয়ে পড়ছে। একটা ভালো চাকরি পাওয়ার আশা এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু শিক্ষার্থীর। আর স্কুল না যেতে পারার কারণে তাদের মানসিক বিকাশের বিষয়টিও যে বেশ বিপর্যস্ত, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ স্কুলস্তরে এখনও ল্যাবরেটরিতে একবারও ঢুকতেই পারেনি এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নেহাত কম নয়৷ তারা হাতে কলমে প্রশিক্ষণই নিতে পারল না৷
এদিকে পরীক্ষার পদ্ধতিতে যে-পরিবর্তন এসেছে, তা আপাতভাবে শিক্ষার্থাদের সহজে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে৷প্রায় ১০০ শতাংশ নম্বর পাচ্ছে এমনকী মধ্যমেধার পরীক্ষার্থীও৷ Multiple choice question পদ্ধতিতে পরীক্ষায় নম্বর তোলা সহজ কিন্তু এটা যে এই প্রজন্মের পক্ষে কতটা ক্ষতি ডেকে আনছে, তা ক্রমশ প্রকাশ পাবে৷ যে -কোনও বিষয়ে লব্ধ জ্ঞান, শিক্ষার্থীদের অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে৷ কোনও In depth study, না থাকার ফলে আমরা একটা অর্ধশিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি করছি, যারা বিষয়টি গভীর ভাবে অনুধাবন করে পরীক্ষার খাতায় তার প্রতিফলন ঘটাতেই পারেনি৷অথচ নম্বরের ঝুলি উজাড় করে দিয়ে আমরা তাদের মাথায় গেঁথে দিচ্ছি মেধাবী হওয়ার একটি ভ্রান্ত ধারণা! কার্যক্ষেত্রে এরা যখন বিফল হবে এবং বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বর একইরকম হওয়ার ফলে আসল মেধাবীরা সুযোগ পাবে না–তখন দোষ দেবে কাকে?
একটা সময়ের পর দেখা যাবে কিছু অযোগ্য প্রার্থীই কর্মসংস্থানের সুযোগ পেল, যার প্রভাব বৃহত্তর ভাবে দেশের উপরেও পড়বে।এই শিক্ষানীতি আমাদের দেশের অগ্রগতিতে অন্তরায় হবে৷ খুব দেরী নেই যখন এর মাশুল দিতে হবে আমাদেরই৷