এমন অনেক অসুখ আছে যা বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না। Deep vein thrombosis বা সংক্ষেপে ডিভিটি তেমনই একটি অসুখ। ভারতবর্ষের ১১ টি রাজ্যে মোট ৪৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্য অসুখের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রুগিদের অনেকেই ডিভিটিতে আক্রান্ত হয়েও বুঝতে পারেন না। আর এইসব রুগিদের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। তাই, ডিভিটি অসুখটি সম্পর্কে বিশদে জেনে নিয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে।
ডিপ ভেন থ্রমবোসিস আসলে কী?
কোমরের নীচের অংশে অর্থাৎ থাই থেকে হাঁটুর মধ্যের মাংসল অংশের রক্তনালির মধ্যে কোনওভাবে যদি রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তাহলে ডিপ ভেন থ্রমবোসিস-এর সমস্যা তৈরি হয়। আর রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত রক্ত পৌঁছোতে পারে না। তাই ওই জমাট বাঁধা অংশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সামান্য ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। আর ওই জমাট বাঁধা রক্ত যদি হৃৎপিণ্ডর নালিতে চলে যায়, তাহলে এর পরিণাম ভয়ংকর হতে পারে। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে জ্ঞান হারানোর (সেন্সলেস) ঘটনাও ঘটতে পারে।
ডিভিটির কারণ
- কোমরের নীচের অংশে বড়ো আঘাতের ফলে রক্তনালিতে এর খারাপ প্রভাব পড়ে অর্থাৎ রক্ত জমে রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়।
- শরীরে যদি লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হঠাৎ খুব বেড়ে যায়, তাহলেও ডিভিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- কোনও মহিলা যদি প্রি-ম্যাচিওর সন্তানের জন্ম দেন, দীর্ঘদিন বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করেন কিংবা সিজারিয়ান বেবির জন্ম দেন, তাহলেও ডিভিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডিভিটির লক্ষণ
৬০ বছর বয়সের পরে সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আজকাল নানা কারণে সব বয়সেই হতে পারে এই অসুখ। আর এই অসুখের লক্ষণগুলি হলঃ
- যে-কোনও একটি পায়ে দেখা যায় লাল দাগ। তবে এই লাল দাগ কখনও কখনও আবার কালচে নীল বর্ণও ধারণ করতে পারে
- পায়ে হালকা যন্ত্রণা শুরু হয়ে ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। পা ভাঁজ করার সময়ই এই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
- পায়ের মাংসপেশি কাঁপতে থাকে মাঝেমধ্যে এবং রাতে এই সমস্যা বাড়তে থাকে।
পরীক্ষানিরীক্ষা
উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে যদি একটি লক্ষণও বুঝতে পারেন, তাহলে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করান। এক্ষেত্রে যে-সব পরীক্ষার প্রয়োজন তা হলঃ
ডোপ্লার আল্ট্রাসাউন্ড
এ টেস্ট-এ কোনওরকম যন্ত্রণা অনুভূত হয় না এবং রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে তা এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
ভেনোগ্রাফি
ডিভিটির জন্য ভেনোগ্রাফি সবচেয়ে ভালো টেস্ট। তবে এই পরীক্ষায় অল্প ব্যথা হতে পারে। আসলে এই পরীক্ষা করার আগে একপ্রকার লিকুইড ইনজেক্ট করতে হয় রক্তনালিতে, তাই সামান্য ব্যথা হতে পারে।
ইম্পিডেন্স প্লেথোস্মোগ্রাফি
এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎচালিত রে (রশ্মি) দিয়ে রক্তনালিতে রক্ত চলাচলের গতি নির্ণয় করা হয়। তবে কোনও যন্ত্রণা হয় না এই পরীক্ষায়।
সিটি স্ক্যান
পায়ের রক্তনালিতে জমা রক্ত হৃৎপিণ্ডের কাছাকাছি চলে গেছে কিনা, তা সিটি স্ক্যান-এ পরিষ্কার বোঝা যায়। তাই ডিভিটির জন্য এই পরীক্ষা জরুরি।
ডিভিটির প্রবণতা
- হিপ ফ্র্যাকচার হলে যদি প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়ে থাকে, তাহলে সার্জারির পর ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পায়ের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে।
- ক্যানসার-এ আক্রান্ত রুগির যদি বড়ো কোনও সার্জারি হয়ে থাকে, তাহলেও ডিভিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ভাঙা পা প্লাস্টার করা অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলেও ডিভিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ডিভিটি-র চিকিৎসা পদ্ধতি
- পরীক্ষানিরীক্ষার পর যদি ডিভিটি ধরা পড়ে এবং তা প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, তাহলে চিকিৎসক প্রথমে মেডিসিন প্রয়োগ করে জমা রক্ত পাতলা করে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেন।
- রক্তনালিতে জমা রক্ত পাতলা করার জন্য যদি কয়েকটি ইজেকশন দিতে হয়, তাহলে রুগিকে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
- ডিভিটির অসুখ যদি গুরুতর রূপ নেয়, তাহলে সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জমা রক্ত যাতে হৃৎপিণ্ডে না পৌঁছোতে পারে, তার জন্য রক্তনালিতে এক বিশেষ ফিলটার বসিয়ে দেওয়া হয় এই সার্জারির মাধ্যমে।
পরামর্শ
- যদি ১৪ হাজার ফিট কিংবা তারও বেশি উঁচুতে উঠতে হয়, তাহলে মাঝেমধ্যে কয়েকঘণ্টা বিশ্রাম নিতে-নিতে উঠুন। নয়তো ডিভিটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
- পায়ে বড়ো কোনও সার্জারি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাঁটাচলার চেষ্টা করবেন। এতে ডিভিটির সম্ভাবনা কমবে।
- দীর্ঘ সময় হাঁটু ভাঁজ করে একইভাবে বসে থাকবেন না।
- পায়ে বড়োরকম চোট পেলে অবশ্যই চিকিৎসা করাবেন এবং একমাসের মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করিয়ে নেবেন।