গত কয়েক বছর ধরেই জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বেড়াতে বার হচ্ছি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। যদিও এবারে একদিনের ট্রিপ, তবুও তাতে আনন্দের কোনও খামতি নেই।লিখে ফেললাম, বেড়ানোর গন্তব্য সম্বলপুর ও তার আশেপাশে কয়েককটি দ্রষ্টব্য স্থানের Travelogue। প্রজাতন্ত্র দিবসে এই যাত্রায় দলও বেশ ভারী, ড্রাইভার ছাড়া আরও ৭ জন। তাই ৯ আসনের বোলেরো বুক করা হয়েছে। রাউরকেলায় আমার কোয়ার্টারে গাড়ি এসে থামল। ঠিক সকাল ৮টায় গাড়ি ছাড়ল সম্বলপুরের উদ্দেশে।

আমাদের গাড়ি রিং রোড ধরে চলেছে। অভিজ্ঞান চক পেরিয়ে ছেন্ড পৌঁছোলাম সোয়া ৮টায়। সিভিল টাউনশিপ, পানপোশ চক ছাড়িয়ে গাড়ি বেদব্যাস চকে এসে পেঁছোল সাড়ে ৮টায়। রাস্তার বাঁ পাশে কংসবহল টাউনশিপ পার হয়ে কয়েক কিলোমিটার এগোতেই ডান পাশে মন্দিরা ড্যাম যাওয়ার রাস্তা। ৪ লেনের মসৃণ পথ। প্রথম টোল গেট-এ গাড়ি এসে থামল। একটু এগিয়ে বাঁ পাশে দেখছি ধানের খেত, পর পর আমবাগান। সোয়া ৯টা নাগাদ এসে পৌঁছোলাম বড়োগড়। আমরা থেমে এগিয়ে চললাম।

চার লেনের মাঝে ডিভাইডিং জোন-এ করবী গাছের সারি। রাস্তার দুই পাশে সবুজের মেলা শাল, মহুয়া, চারকুণ্ডা ইত্যাদি। পেরিয়ে গেলাম কুস্তানা গ্রাম। বাঁ পাশে এবার চাষজমি, বহু গরু চরে বেড়াচ্ছে সেখানে। কিছুদূর এগোতেই বাঁয়ে পর পর আমগাছ, মুকুল এসেছে সেগুলিতে। পৌঁছলাম ঝাড়মুণ্ডায়, তারপর রসরাজপুর ও করমডিহি। গাড়ি চলেছে এসএইচ-১০ ধরে। সুবালিয়া গ্রাম পেরিয়ে সুন্দরগড় বাইপাস ধরলাম। দ্বিতীয় টোলগেট-এ পৌঁছে একটু এগোতেই প্রধানপালি গ্রাম। রাস্তার পাশে গাড়ি থামল, চা-বিরতি এখানে।

রাউরকেলা থেকে সম্বলপুরের দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার। এখন চলেছি ঘাটি রাস্তা দিয়ে ভারি সুন্দর দৃশ্য দুপাশে। আরও কিছুদূর এগোতেই বাঁ দিকে চোখে পড়ে ঝাড়সুগুদা এয়ারপোর্ট যাবার রাস্তা। ডিভাইডিং জোনে করবীর পাশে জায়গা করে নিয়েছে কলকে ফুলের গাছ। পেরিয়ে গেলাম শ্রীপুরা। বেলা ১১টায় পেঁছোলাম রেঙ্গালি। এবার মাইলস্টোনে চোখ রেখে দেখি, সম্বলপুর আর মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে।

এখন রাস্তার দুই পাশে ইউক্যালিপটাসের সারি। একে একে পেরিয়ে গেলাম পারাদিয়াপালি, মালিপালি ও ভালুপালি। বাঁয়ে ইনকাম ট্যাক্স অফিস আর কিছু পরেই সম্বলপুর সিটি স্টেশন যাওয়ার রাস্তা। এবার ধানুপালি চকে এসে এসএইচ-১৫ ধরে নিলাম। এই রাস্তা সম্বলপুর-সোনপুর হাইওয়ে নামে পরিচিত। হুমা শিব মন্দির আরও ২৩ কিলোমিটার দূরে। রাস্তা মোটামুটি ভালো, বেলা ১২টা নাগাদ এসে পৌঁছলাম মন্দিরের কাছে।

গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ছুটে গিয়ে পৌঁছলাম মন্দির দ্বারে, কারণ তখনই মন্দির বন্ধ হয়ে যাবে তিন ঘণ্টার জন্য। করোনা আনলক পিরিয়ড-এ নতুন সময় সীমা, নইলে মন্দির বন্ধ হয় দুপুর দেড়টায়। হুমা গ্রামে অবস্থিত এই হেলানো মন্দির সত্যিই অনুপম। এই মন্দির তৈরি সম্পূর্ণ হয় সম্বলপুরের পঞ্চম রাজা বালিয়ার সিং-এর রাজত্বকালে। মন্দির দেবাদিদেব শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যিনি পরিচিত বিমলেশ্বর নামে। মন্দির তৈরির পিছনে রয়েছে এক জনশ্রুতি।

এক গোয়ালা প্রতিদিন মহানদী পেরিয়ে এসে এই স্থানে এক প্রস্তরখণ্ডের উপরে তার সঞ্চিত দুধ ঢেলে দিত, যা তত্ক্ষণাৎ শুষে নিত ওই প্রস্তরলিঙ্গ। এই আশ্চর্য খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে। ফলস্বরূপ গঙ্গা ভামসি সম্রাট তৃতীয় অনঙ্গভীমা দেব ওই স্থানে মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাজার শাসনকালে মন্দিরের সংস্কার হতে থাকে। কিন্তু মন্দিরের হেলে যাবার প্রকৃত কারণ আজও অজানা রয়ে গিয়েছে। মন্দির চত্বরে বিমলেশ্বর শিবমন্দির ছাড়াও রয়েছে আরও তিনটি ছোটো মন্দির। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, প্রধান মন্দির হেলে রয়েছে এক দিকে কিন্তু অন্যান্য মন্দিরগুলি ভিন্ন ভিন্ন দিকে হেলে রয়েছে।

মন্দিরের পুরোহিতগণ এবং স্থানীয় জনসাধারণের মতে, গত ৪০-৫০ বছরেও মন্দিরগুলির কৌণিক পরিবর্তন ঘটেনি। যদিও মনে করা হয় ভূতাত্ত্বিক কারণেই মন্দিরগুলি হেলে গিয়েছে, হয়তো এই অঞ্চলের অসমান ভূতত্ত্বই এই অবস্থার জন্য দায়ী। ছবি তুলে মন্দির থেকে চলে এলাম মহানদীর তীরে। ছুটির দিন, তাই পর্যটকদের বেশ ভিড়। মহানদী এখানে শান্ত। জলে রয়েছে নিরীহ কুদো মাছ যারা দর্শনার্থীদের দেওয়া মিষ্টি স্বাদের খাবার খেতে বেশ অভ্যস্থ। মহানদীর তীরে ফটোগ্রাফির ছোটো সেশন সেরেই চলে এলাম গাড়িতে।

গাড়ি ছাড়ল দুপুর সাড়ে ১২টায়। আমাদের পরের গন্তব্য হিরাকুদ ড্যাম। সকাল থেকে চা-বিস্কুট ছাড়া পেটে আর কিছু পড়েনি, সকলেরই বেশ খিদে পেয়েছে। আধ ঘণ্টা চলার পরে গাড়ি এসে থামল এক ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন হোটেলে। অনেক জায়গা দেখা বাকি, তাই দ্রুত হোটেলে এসে খাবারের অর্ডার দিলাম। গরম তাওয়া রুটি, পনির মশলা ও মিক্সড ভেজিটেবলস্-এ তৃপ্তিদায়ক লাঞ্চ সারলাম বেলা দেড়টার মধ্যেই।

গাড়ি আবার চলতে শুরু করল, এবার এনএইচ-৫৩ ধরে। এখন মহানদী রাস্তার ডান দিকে। বেলা ২টো নাগাদ হিরাকুদ কলেজ পেরোলাম, তার কিছুক্ষণ পরেই হিন্দালকো ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড। হিরাকুদ ড্যামের গান্ধি মিনার-এর প্রবেশদ্বার সংলগ্ন পার্কিং প্লেস-এ গাড়ি এসে থামল। আমরা ৭জন টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম গান্ধি মিনার-এ।

হিরাকুদ ড্যাম ওড়িশার অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট। প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রায় লাগাম ছাড়া ভিড়। ১৯৫৭ সালে নির্মিত এই ড্যাম পৃথিবীতে দীর্ঘতম, যার আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মাটির তৈরি এই ড্যাম ভারতীয় এবং ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মিলিত সৃষ্টি। ড্যামের প্রধান অংশ ৪.৮ কিমি দীর্ঘ, যা বাঁয়ে লক্ষীডুংরি পাহাড় থেকে ডানে চান্দিলিডুংরি পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। ড্যাম নির্মাণে সৃষ্ট কৃত্রিম হ্রদ এবং তাকে ঘিরে থাকা সজীব ল্যান্ডস্কেপ এককথায় অসাধারণ দৃশ্য। গান্ধি মিনার হিরাকুদের উঁচু অংশে অবস্থিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। লেকের অন্য পাশে অপেক্ষাকৃত নীচু অংশে অবস্থিত নেহেরু মিনার। ড্যামের নীচে সুন্দর জওহর উদ্যান। জলসম্পদ বিভাগ পার্ক ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত। আমরা প্রায় আধ ঘণ্টা কাটিয়ে ফটো তুলে ফিরে এলাম গাড়িতে।

আমরা এবার চলেছি বুরলা পাওয়ার হাউস রোড ধরে নেহেরু মিনারের দিকে। হিরাকুদ ড্যামের পাশ দিয়ে ডাইক রোডের ওপর দিয়ে ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছোতে হয় জিরো পয়েন্ট-এ। অপূর্ব সুন্দর রাস্তা, দুই পাশে সবুজ গাছপালার সজীব উপস্থিতি। ডান পাশে নয়নাভিরাম লেক, চোখ সরানো যাচ্ছে না। গাড়ি আর যাবে না, প্রবেশ নিষেধ। এবার হেঁটে এগোতে লাগলাম। রাস্তার ডান পাশ বরাবর সিমেন্টের রেলিং, বসার জায়গা। কয়েক মিনিট সেখানে বসে, ছবি তুলে আবার হাঁটতে লাগলাম।

নেহেরু মিনারে না গিয়ে পৌঁছলাম লেকের উপর তৈরি এক সেতুর কাছে। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সেখানে পৌঁছে লেকের অতীব সুন্দর রূপে একেবারে মোহিত হয়ে গেলাম। জলের মাঝ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি ছোটো পাহাড়। ছবি তোলা নিষিদ্ধ, তাই মন ক্যামেরায় সেই ছবি রেখে দিলাম। হেঁটে হেঁটে ফিরে এলাম গাড়িতে। এবার এগিয়ে চললাম জিরো পয়েন্ট-এর দিকে, যেখানে আবার ডেবুরিগড় স্যাঞ্চুয়ারি-র প্রবেশদ্বার।

রাস্তার রূপ অবর্ণনীয়। বাঁ পাশে জঙ্গলাকীর্ণ ছোটো পাহাড়, ডান পাশে নজড়কাড়া লেক। কয়েক কিলোমিটার এগোনোর পর অনিন্দ্য সুন্দর লেকের ছবি তুললাম আবার। এই পয়েন্ট-এও ছোটো এক ফটোসেশন চলল। ডেবুরিগড় স্যাঞ্চুয়ারিতে প্রবেশের টিকিট নেই, আর এই যাত্রায় সময়ও নেই। তাই এবার গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে চললাম বুরলার পথে।

ঘড়িতে বিকেল ৩ টে ৫০ মিনিট। আমাদের পরের গন্তব্য মহানদীর তীরে চিপলিমা হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মা ঘণ্টেশ্বরী মন্দির। বুরলা থেকে চিপলিমার দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং এনএইচ-৫৩ ধরে সম্বলপুর থেকে চিপলিমার দূরত্ব প্রায় ২৯ কিলোমিটার। আমরা আধ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম চিপলিমা। হিরাকুদ ড্যাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ এবং জলবিদু্যৎ উত্পাদনেও সক্ষম। ড্যামের লেক থেকে জল টারবাইনে প্রবেশ করে এবং ড্রাস্ট টিউবের মাধ্যমে টেইলরেস (Tailrace)-এ বেরিয়ে যায়।

জলপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চিপলিমায় রয়েছে হাইড্রোলিক ইনটেক গেট। এই পাওয়ার প্ল্যান্টের তিনটি অংশ বুরলায় অবস্থিত পাওয়ার হাউস-১, ২৬.৭২ কিমি দীর্ঘ পাওয়ার চ্যানেল টেইলরেস (tailrace)-এ জল বহনের জন্য এবং চিপলিমায় অবস্থিত পাওয়ার হাউস-২। আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং ফি জমা দিয়ে এগিয়ে গেলাম পাওয়ার হাউস-২-এর দিকে।

মহানদীর তীরে চিপলিমায় মা ঘণ্টেশ্বরী মন্দিরের ঠিক আগেই হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট। পাওয়ার হাউসে আসা জলপ্রবাহের উপর নির্মিত প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ লোহার পুল বা সাঁকো পেরিয়ে পৌঁছোতে হয় পাওয়ার প্ল্যান্ট ও মন্দিরে। সাঁকোটি প্রস্থে মাত্র ৩ ফুট, দুপাশে লোহার নীচু রেলিং। বেশ উত্তেজনাময় ব্যাপার সাঁকোর উপর দিয়ে পারাপার করা। তার মাঝে স্থানীয় অধিবাসীরা উলটো দিক থেকে আসছে নিজের নিজের সাইকেল নিয়ে সরু সাঁকোয় তাদের জায়গা করে দেওয়া আর এক কঠিন ব্যাপার। যাই হোক, প্রায় ১৫ মিনিট পরে পাওয়ার হাউস এরিয়া পেরিয়ে পেঁছোলাম ঘণ্টেশ্বরী মন্দিরে।

নামের প্রতি সঙ্গতি রেখে ছোট্ট মন্দিরের চারপাশে দড়িতে ও সংলগ্ন গাছে বহু সংখ্যায় ছোটো বড়ো ঘণ্টা বাঁধা রয়েছে। মনে পড়ে গেল, ১৫ বছর আগে যখন এই মন্দিরে এসেছিলাম তখন দড়ি ও গাছে বাঁধা ঘণ্টার সংখ্যা ছিল অন্তত চার গুণ। আজ হয়তো মন্দির ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বাসী পূণ্যার্থীরা মা ঘণ্টেশ্বরীর কাছে নিজেদের ইচ্ছাপূরণের জন্য ঘণ্টা মানত করেন এবং ইচ্ছাপূর্ণ হলে পূর্বোক্ত স্থলে ঘণ্টা টাঙিয়ে দিয়ে যান।

বহু বছর পূর্বে নাবিকদের দ্বারা তৈরি ঘণ্টাসহ এই মন্দিরকে বলা হয় আলোহীন লাইটহাউস। কারণ সমূদ্রে সৃষ্ট তীব্র হাওয়ায় আন্দোলিত ঘণ্টাগুলির শব্দ সমুদ্রপথে আগত নাবিকদের সতর্ক করে দিত ঝড়ের ব্যাপারে। আমরা মন্দির দর্শন সেরে, মাকে প্রণাম জানিয়ে ফিরে এলাম সরু সাঁকোর কাছে। ধীরে ধীরে সাঁকো পার হয়ে সবাই ফিরে এলাম গাড়ির কাছে।

ঘড়িতে তখন বিকেল ৫টা। আমরা ফিরে চলেছি সম্বলপুর শহরের দিকে। গন্তব্য সমলেশ্বরী মন্দির। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মন্দিরে পৌঁছলাম পৌনে ৬টায়। ছোটো লাইনে দাঁড়িয়ে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করেই মুগ্ধ হলাম। শুভ্র বর্ণের মন্দিরে নতুন করে রং করা হয়েছে, শিখরে ও সীমায় রক্তবর্ণের ছোঁয়া। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে হালকা আলোয় সজ্জিত মন্দির। আকাশে গোল চাঁদ সৌন্দর্য বাড়িয়েছে আরও।

কোভিড প্রোটোকলে বানানো লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম সামালাই মায়ের দর্শন পাওয়ার জন্য। মিনিট পাঁচ পরেই সুশৃঙ্খল লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে গেলাম মায়ের মূর্তির কাছে। মন্দিরে পূজিতা মা সমলেশ্বরী (সামালাই মা) পশ্চিম ওড়িশা এবং প্রতিবেশী রাজ্য ছত্তিশগড়-এ এক প্রভাবশালী ধর্মীয় শক্তির প্রতীক। প্রাচীনকাল থেকেই মা সমলেশ্বরী পূজিতা জগত্জননী, আদিশক্তি, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী রূপে।

গ্রানাইটের মতো শক্ত পাথরে তৈরি মন্দিরের দুটি অংশ। ১২টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে ১০ ফুট চওড়া আচ্ছাদিত প্রদক্ষিণ স্থল এবং বর্গাকৃতি গর্ভগৃহ চার সিঁড়ি নীচে। গর্ভগৃহের বাহির দেয়ালে ১১ জন পার্শ্বদেবীর মূর্তি। মা সামালাই দেবীর মূর্তি গঠিত এক গ্রানাইট প্রস্তরখণ্ডে যা থেকে বেরিয়ে এসেছে শুঁড়ের মতো এক অংশ। বরাহরূপী মা সমলেশ্বরী স্থানীয় ভক্তজনের কাছে পরম আরাধ্যা। আমরাও মাকে প্রণাম জানিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলাম মন্দির থেকে।

আমরা সবাই খুশি পরিকল্পনা মাফিক সব দ্রষ্টব্য স্থান দর্শন করে। কিছুদূর এগিয়ে এসে রাস্তার ধারে এক দোকান থেকে আমরা পছন্দ মতো গরম গরম বড়া, সিঙারা ও আলুর চপ খেলাম। তারপর আরও কিছুটা এগিয়ে একটি স্টল থেকে সুস্বাদু গরম চা পান করলাম। আনন্দ মনে সবাই গাড়িতে এসে বসলাম। গাড়ি চলতে শুরু করল সন্ধ্যা ৭টার পরেই পৌঁছে গেলাম রেঙ্গালি। মোটমুটি ফাঁকা রাস্তা। গাড়ি চলছে দ্রুত। আমরা হালকা গল্পে ব্যস্ত। তিন ঘণ্টাও লাগল না রাউরকেলা পৌঁছোতে। ২০ নং সেক্টরে নিজেদের কোয়ার্টারে এসে পৌঁছলাম রাত পৌনে ১০টার আগেই। এবারও সঙ্গে নিয়ে ফিরেছি সুন্দর এক অভিজ্ঞতা Travelogue।

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য:

কীভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে সরাসরি সম্বলপুর আসার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রেন আছে। এছাড়া ভূবনেশ্বর ও রাউরকেলা থেকে সম্বলপুর আসার জন্য ট্রেন ও বাস দুই-ই আছে।

কখন যাবেন : সম্বলপুর ও তার আশেপাশের জায়গাগুলি দেখার জন্য বছরের যে-কোনও সময়ে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন : উপরোক্ত দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দেখার জন্য সম্বলপুরে থাকাই সুবিধেজনক। সম্বলপুর শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন বাজেটের হোটেল আছে। আর রয়েছে ওটিডিসি-র পান্থনিবাস।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...