শীতের হাওয়া গায়ে মেখে পুরি থেকে রওনা দিয়েছি 122 কিমি দূরত্বে চিলকার উদ্দেশে। ঘণ্টা চারেক লাগবে জিপে, তাই সঙ্গে নিয়েছি ব্রেকফাস্ট। ভারতের বৃহত্তম কোস্টাল ল্যাগুন হিসাবে খ্যাতি চিলকার। এই হ্রদের নলবন দ্বিপটি বার্ড স্যাংচুয়ারি হিসাবে ঘোষিত হয়েছে এবং তা বার্ড ওয়াচারদের আকর্ষণ করে দেশবিদেশ থেকে। চিলকা লেক ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিএলডিএ) তত্ত্বাবধানে এই বিশাল হ্রদের সংরক্ষণ ও দেখভাল হয়। একদিনে গোটা হ্রদ ঘুরে ফেলা অসম্ভব জেনে, আমরা Travel Destination নিউ লেক মাউথ অংশটি বেছেছি। লঞ্চে যত এগোচ্ছি, ততই যেন মুগ্ধ হচ্ছি এর সৌন্দর্যে। একদিকে বিপুল জলরাশি, অন্য দিকে পাহাড়।
জেলেদের ছিপ নৌকো পার হয়ে যেতে যেতে একসময় পৌঁছই একটি বালিয়াড়িতে। পাখির ঝাঁকে জায়গাটা ভরা। সে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা। শুনেছিলাম একটি বিশেষ প্রজাতির ডলফিন (IRRAWADDY DOLPHIN) এই হ্রদে পাওয়া যায়। সংখ্যায় তারা খুবই কম। তাই ডলফিন না হোক কয়েকটি শুশুক দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হল। বিকেল বিকেল লঞ্চ-যাত্রা সেরে ফিরে এলাম সিএলডিএ-র টুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টারে। সেখানে একটি ভিডিয়ো প্রেজেন্টেশনে জানানো হল এই হ্রদ প্রসঙ্গে নানা দুর্লভ তথ্য। পুরি ফিরে এসে তোড়াজোড় শুরু কারণ পরের দিন আমাদের মঙ্গলজোড়ি যাত্রা।
পুরি স্টেশন থেকে এবার Travel Destination মঙ্গলজোড়ির দিকে রওনা হলাম। চিলকা হ্রদের অন্য একটি অংশে মঙ্গলজোড়ি, ইতিমধ্যেই বার্ডস্ প্যারাডাইস হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাখ-পাখালির প্রতি ভালোবাসা যাদের অফুরান, শীতের জাঁক গায়ে লাগতেই এই পথে পাড়ি দেন তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমরাও ওই পথের যাত্রী হয়েছি। পুরি স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে সাতটায়, পুরি-গুনপুর প্যাসেঞ্জারে উঠে সাড়ে দশটায় নেমে, গাড়ি নিয়েছি মঙ্গলজোড়ি পৌঁছনোর জন্য।
এক সময় এ অঞ্চলে পরিযায়ী পাখি পাচার করার একটা অসাধু চক্র গড়ে উঠেছিল। শেষে বহু চেষ্টায় একটি এনজিও’র (মহাবীর পক্ষী সুরক্ষা সমিতি) প্রচেষ্টায় বার্ড পোচিং বন্ধ করা গেছে।