আমাদের অন্যান্য ইমোশনগুলির মধ্যে রাগ একটি স্বাভাবিক ইমোশন। সময় নির্বিশেষে কোনও না কোনও কারণে আমাদের রাগের মতো ইমোশন-এর মুখোমুখি হতেই হয়। যারা প্রচণ্ড বদরাগী তাদের অনেক সময় নানা শারীরিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। যেমন প্রচণ্ড উদ্বেগ, হাই ব্লাড প্রেশার, মাথাব্যথা এমনকী হার্ট-এর সমস্যাও হয়ে থাকে।

অথচ সময় সুযোগ বুঝে যদি ঠিক ভাবে রাগ এক্সপ্রেস Anger Management করা যায়, তাহলে এটা কিন্তু পজিটিভ এবং প্রযোজনীয় ইমোশন হয়ে উঠতে পারে। রাগ যাতে আয়ত্তে রাখা যায় তার জন্য লং-টার্ম স্ট্রাটেজি হল, রেগুলার এক্সারসাইজ করা, রিল্যাক্সিং টেকনিকগুলো শিখে রাখা এবং সর্বোপরি কাউন্সেলিং করানো।

শরীরে রাগের প্রভাব

রাগের সঙ্গে সঙ্গে ভয়, এক্সসাইটমেন্ট এবং উদ্বেগ-এর সমস্যাও একইসঙ্গে হয়ে থাকে। ফলে শরীরের অ্যাড্রোনাল গ্ল্যান্ডস থেকে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। হার্ট রেট, ব্লাড প্রেশার এবং রেসপিরেশন-এর মাত্রা বেড়ে যায়। বডি টেম্পারেচার বেড়ে যায় এবং ঘাম হতে থাকে।

রাগের থেকে কী কী শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে?

রাগের প্রভাবে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা, তল পেটে ব্যথা, ঘুম না আসা (insomnia), মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ, অবসাদ, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের নানা সমস্যা যেমন একজিমা, হার্ট-এর সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যকর উপায়ে কী ভাবে রাগ হয়েছে বোঝাবেন?

  • আপনি যদি বোঝেন রাগ কন্ট্রোল করতে পারছেন না তাহলে সেই মুহূর্তে ওই পরিবেশ ছেড়ে চলে যান, যতক্ষণ না আপনার রাগ কমছে
  • নিজের রাগ হয়েছে মেনে নিন এবং স্বাভাবিক জীবনের অঙ্গ বলে স্বীকার করে নিন
  • চেষ্টা করুন রাগের কারণটা পিনপযে্ট করতে
  • একবার সমস্যাটা যদি বুঝতে পেরে যান, তাহলে চেষ্টা করুন অন্য কী ভাবে সিচুয়েশনটা হ্যান্ডেল করা যায়। অর্থাৎ কাজটা হাসিল করতে রাগ না দেখিয়ে বিকল্প রাস্তা বার করুন
  • খুব রাগ হলে ফিজিক্যাল কিছু করার চেষ্টা করুন। যেমন কিছুটা দৌড়ে আসুন অথবা ফুটবল, ক্রিকেট যাতে ইন্টারেস্ট আছে সেটা খেলতে চলে যান, যদি সঙ্গী পান
  • যাকে বিশ্বাস করেন তার কাছে আপনার মনের কথা এবং অবস্থাটা খুলে বলুন, শেয়ার করার চেষ্টা করুন

রাগ চেপে রাখাটাও শরীরের জন্য খারাপ

রাগের মাথায় অতিরিক্ত চ্যাঁচামেচি করা : মানুষ বেশিরভাগই এমন করে রাগ প্রকাশ করে থাকে, যাতে উপকারের বদলে অপকারই বেশি হয়। অনেকে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে চ্যাঁচামেচি শুরু করে এমনকী ফিজিক্যাল ভাযোলেন্স-এও জড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সকলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। অনেকে নিজের দুর্বলতাগুলো ঢাকার জন্যেও রাগ প্রকাশ করে। এমনটা করে কারণ নিজেকে সে অনেকের থেকে সুপিরিয়র প্রমাণ করতে চায়।

রাগ নিজের মধ্যেই চেপে রাখা : অনেকে রাগ দেখানোটাকে অশোভন আচরণ বলে ভেবে নিজের মনেই পুষে রাখে। এটা থেকে হামেশাই অবসাদ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। অনেকের আবার রাগ কারও ওপর হল আর ইনোসেন্ট অন্য কারও ওপর সেই রাগটা সে প্রকাশ করে। যেমন বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হল আর রাগ গিয়ে পড়ল বাড়িতে থাকা শিশুটির উপর।

দীর্ঘ সময় অ্যাংগার ম্যানেজমেন্ট অভ্যাস করুন

  • যে যে ঘটনায় রাগ সামলাতে পারেননি, সেগুলো একটি ডায়ারিতে লিখে রাখুন। অবসর সময়ে সেটা পড়ে ভাবুন, কেন এবং কীভাবে আপনি অতটা রেগে উঠলেন
  • রিল্যাক্স থাকার টেকনিকগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করুন
  • অতীতে কী ঘটেছে সেই নিয়ে বর্তমানেও যদি আপনার রাগ কমতে না চায়, তাহলে অবশ্যই কাউন্সেলর বা সাইকোলজিস্ট-এর পরামর্শ নিন।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...