তিনচুলে
বুকিং করার পর থেকেই মনটা আনচান করতে থাকে৷নির্দিষ্ট দিনে NJP পৌছনোর আগেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একদিকে তিস্তা আর পাহাড়ি রাস্তার ঢাল বেয়ে আমরা ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর গন্তব্যস্থল এ পৌঁছোই। ঠিক পাহাড়ের চূড়ায় এক ফালি সমান জমিতে আমাদের হোমস্টে।
ভাত, গরম ডাল, পকোড়া(পেঁয়াজি), পনির(বড় এক বাটি), অন্যধরনের করলা সবজি, ডিম, স্যালাড এবং ঈষদুষ্ণ গরম জল।দুপুরের আহারে আর কী লাগে!বিকেলে একটু পায়ে হেঁটে চারপাশ দেখতে দেখতেই ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসে।
পরের দিন সাইট সিয়িং এর পালা। সকালে উঠে বেড টি পেয়ে গেলাম। এরপর ৯ টায় ব্রেকফাস্ট লুচি ঘুগনি, ডিমসেদ্ধ খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সাইট সিয়িং এর মধ্যে ছিল গুম্বাদারা ভিউ পয়েন্ট, অর্কিড গার্ডেন, লামহাট্টা, lovers meet (ত্রিবেণী দেখা যায়), ত্রিবেণী ( The confluence of Rangeet and Teesta) এবং ব্রিটিশ আমলের ঝুলন্ত ব্রিজ (১৯৬২)।
তিনচুলের প্রকৃতি অপুর্ব সুন্দর৷ আর সবচেয়ে মনোরম এখানে পৌঁছোনোর পথটি ৷ চা-বাগান চিরে সর্পিল পথ উঠে যায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে ৷ আমাদের হোমস্টে-র বাঁদিক দিয়ে কিছুটা নেমে গেলে একদম পাহাড়ের প্রান্তে পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে চারিদিকের পাহাড়গুলোর খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। তিনচুলের শান্ত মনোরম পরিবেশ আপনাদেরও আনন্দ দেবে। যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন অবশ্যই যান।
হোম স্টে- এর নম্বর – +91 79 0832 4930
তাকদা
দার্জিলিং-এর পার্বত্য নিসর্গে একটুকরো নির্জন নিরালা আবাস সাইনো হেরিটেজ গেস্টহাউস তাকদা। এনজেপি থেকে মাত্রই 24.6 কিমি। দিন দুয়েক পাহাড়ের কোলে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য এক অপূর্ব বিকল্প। কালিম্পং ও দার্জিলিং কোনওটিই এর থেকে খুব দূরে না হলেও, অহেতুক পর্যটকদের ভিড় নেই তাকদায়। তাই হোমস্টের আতিথেয়তায় আলসেমির প্রহরগুলি কাটানোর জন্য একেবারে আদর্শ ঠাঁই।
ব্রিটিশ জমানায় এখানে একটি মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট ছিল। তাই কোলোনিয়াল আর্কিটেকচারের বৈভব এই হোমস্টের সর্বাঙ্গে। সুন্দর ছিমছাম বেডরুম, ফায়ারপ্লেস ও সুন্দর একফালি লন-এর মনোরম পরিবেশে তাকদা যেন লাক্সারি লিভিং-এর এক অনন্য স্বাদ এনে দেবে। পাশেই রাংলি রাংলিয়ট চা-বাগিচার অনন্ত সবুজ আর সামনে তুষারশুভ্র পাহাড়ের হাতছানি। যোগাযোগ করতে হবে 09434462806 নম্বরে।
এনজেপিগামী যে-কোনও ট্রেনে উঠে জিপ ভাড়া করে পৌঁছে যান তাকদায়। হিমেল বাতাসে রিফ্রেশড হয়ে ঘরে ফিরুন।
জোঙ্গু
গ্যাংটক থেকে 70 কিমি দূরে উত্তর সিকিমের এক নির্জন নিরিবিলি ছবির মতো সুন্দর স্পট জোঙ্গু। এনজেপি থেকে গাড়িতে 135 km৷ তাই গ্যাংটকে একদিন এনজয় করে, গাড়িতে ৪ ঘন্টার পথ পেরোলেই যেন এক মুঠো স্বর্গ এসে পড়বে আপনার হাতে। গ্যাংটক ছাড়িয়ে সেভেন সিস্টার ফল্স-এর পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে এই অনামা স্পটটির দিকে, যা এখনও আনকোরা।
শ্বেতশুভ্র পাহাড় আর যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজের গালচে বিছোনো ল্যান্ডস্কেপ। পাখির ডাক নৈশব্দের ঘুম ভাঙায়। পাতা পড়ার শব্দ, শিশিরের শব্দও বুঝি কানে আসে। ছোট্ট এই লেপচা গ্রাম তখনও ঘুম ভেঙে ওঠেনি, সূর্য তার আলো ছড়িয়ে দেয় দূরের পাহাড়গুলোর চূড়ায়। কাঞ্চনজঙঘা ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত জোঙ্গু।
এই নির্জনেই মায়াল ল্যাং হোমস্টে। লেপচা জীবনশৈলী ও পরম্পরার স্বাদ নিতে একবার অন্তত আপনাকে এখানে আসতেই হবে। এনজেপি থেকে গাড়িতে এঁরা পিক আপ-এর ব্যবস্থা করেন অগ্রিম বুকিং থাকলে। যোগাযোগ করতে হবে 8884561010 নম্বরে।
মায়াল ল্যাং কথার অর্থ আচ্ছাদিত ভূমি, যা কিনা লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে। জঙ্গুলে পথে হাঁটুন, প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করুন। কাছেই একটা মনাস্ট্রি আছে বেড়িয়ে নিন আর চোখ ভরে দেখুন দূরের কাঞ্চনজঙঘা।