পোশাকের ফ্যাশন ট্রেন্ড বদলায়। অতএব, হাল-ফ্যাশন-এর পোশাক ক্রেজ-এ পাল্লা দিতে ছুটছেন সকলে। বিশেষকরে উৎসব অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন লুক প্রেজেন্ট করার জন্য আকর্ষণীয় রং এবং ডিজাইন-এর পোশাক পরার প্রয়োজন আছে। তবে পোশাক ব্যবহারের আগে পোশাক নির্বাচন, ক্রয় করা অর্থাৎ শপিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূল্য অনুযায়ী গুণমান বিচার করে মানানসই পোশাক কিনতে পারা একটা আর্ট। শুধু তাই নয়, পকেটের ওজন বুঝে নির্দিষ্ট টাকার মধ্যে (বাজেট) ভালোমানের পোশাক কিনতে পারা আরও কৃতিত্বের ব্যাপার। এককথায়, বাজেট শপিং-এর জন্য সুরুচির সঙ্গে স্থিরবুদ্ধিরও প্রয়োজন। তাই, বাজেট শপিং-এ যাতে সফল হতে পারেন, তারজন্য রইল কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
সময় বদলেছে। এখন আর শুধু শরীর ঢাকতে কিংবা লজ্জা নিবারণ করার জন্য পোশাকের প্রয়োজন হয় এমন নয়। বরং পোশাক এখন স্ট্যাটাস এবং ফ্যাশন সিম্বল। কার কতটা আভিজাত্য কিংবা কার কতটা ব্যক্তিত্ব, তাও প্রমাণিত হয় পোশাকের মাধ্যমে। শরীরের কতটা অংশে পোশাক থাকবে আর কতটা খোলা থাকবে তাও এখন ব্যক্তিবিশেষে এবং উপলক্ষ্য অনুযায়ী ঠিক করা হয়। নিজে এই সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, ডিজাইনার-এর সাহায্য নেন অনেকে। একথা বলা বাহুল্য, উপযুক্ত পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরতে চান প্রায় সব মেয়েরাই। আর এই শখ মেটানোর জন্য খানিকটা আগাম প্রস্তুতি এবং প্রথমেই বাজেট করে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। আগাম প্রস্তুতি মানে মাসে মাসে যতটা সম্ভব টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা, যাতে আর্থিক ভাবে চাপমুক্ত থাকা যায় এবং খোঁজখবর নিয়ে ন্যায্য মূল্যে ভালোমানের পোশাক কেনা যায়। এছাড়া, বাজেট শপিং-এর বিষয়টি হল, পকেটের ওজন বুঝে, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে পোশাকআশাক কেনা সম্পূর্ণ করা। কিন্তু কোথায় কিনবেন, কী কিনবেন, কত দামের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
পোশাক কেনার ব্যাপারে বছরের শুরুতে একটা বাজেট করে নেওয়াই ভালো। এই বাজেটকে আবার চার ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। বাজেটের একটা অংশ যাবে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য পোশাকের জন্য, একটা অংশ কর্মক্ষেত্রের পোশাকের জন্য, তৃতীয় অংশ থাকবে উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য এবং চতুর্থ অংশ বরাদ্দ থাকবে বেড়াতে যাওয়ার পোশাকের জন্য। এরই পাশাপাশি, কিছু টাকা রাখতে হবে শীতের পোশাক কেনার জন্য। আর বাজেট করার সময় একটু ভেবেচিন্তে বাজেট করা উচিত। উপলক্ষ্য যদি হয়। উৎসব-অনুষ্ঠান এবং বেড়ানো, তাহলে ভালো গুণমানের পোশাক কিনতে হবে এবং এরজন্য বেশি পরিমাণ টাকা মজুত রাখতে হবে। তবে প্রসঙ্গত মনে রাখতে হবে, পোশাক-আশাক কেনার জন্য এক বছর আগে থেকে টাকা জমানো ভালো। এর ফলে কেনাকাটার ক্ষেত্রে একসঙ্গে চাপ পড়বে না এবং একটু বেশি দাম দিয়ে ভালোমানের পোশাক-আশাক কেনার সুযোগ পাওয়া যাবে।
প্রথমে আসা যাক দৈনন্দিন ব্যবহাযোগ্য পোশাকের বিষয়ে। শাড়ি, সালোয়ার, নাইটি, হাউসকোট, কেপ্রি, থ্রি কোয়াটার্স, ভি কাটিং টি-শার্ট প্রভৃতি পোশাকই মোটামুটি বাড়িতে পরার উপযুক্ত। চাহিদা অনুযায়ী বছরে একবার কিংবা দু’বারে এসব পোশাক কিনে রাখা ভালো। আর যেহেতু বাড়িতে অনেকটা সময় এইসব পোশাক পরে থাকতে হয়, তাই তা সফট এবং আরামদায়ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
এবার আসা যাক কর্মরতা মহিলাদের পোশাকের বিষয়ে। কর্মক্ষেত্রের পোশাক বলতে এখন ডিপ কালার-এর লেগিংস এবং লাইট কালার-এর টপ বেশ জনপ্রিয়। সেইসঙ্গে, টাইট জিনস এবং ফরমাল শার্টও প্রয়োজনে অফিস ড্রেস হিসাবে ব্যবহার করছেন অনেক মেয়েই। এছাড়া কুর্তির সঙ্গে পাতিয়ালা এবং শাড়ি তো আছেই। তবে অফিসে ব্যবহারযোগ্য শাড়ির পাড় একরঙা হওয়া চাই।
শপিং-এর তৃতীয় অংশ অর্থাৎ উৎসব-অনুষ্ঠানে ব্যবহারযোগ্য পোশাক কেনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উপলক্ষ্য অনুযায়ী বদলে যাবে পোশাকের ধরন। যেমন ফেডেড জিনস, ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট এমনকী থ্রি কোয়াটার্সও চলতে পারে পার্টিওয়্যার হিসাবে। কিন্তু বিয়ে কিংবা অন্যান্য ঘরোয়া অনুষ্ঠানের জন্য, ব্যক্তিত্ব এবং আভিজাত্য প্রকাশ পাবে এমন পোশাক চাই। জিন্স-এর সঙ্গে স্লিভলেস টপ ক্যাজুয়াল পোশাক হিসাবে জনপ্রিয় হলেও, ডিজাইনার শাড়ি এবং সালোয়ারই বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বেশি পরতে পছন্দ করেন মেয়েরা।
আবার শপিং বাজেট-এর চতুর্থ অংশ অর্থাৎ বেড়াতে যাওয়ার পোশাকের বিষয়টিও খুব কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই উপলক্ষ্যেও ফ্যাশনেবল, টেকসই এবং আরামদায়ক পোশাকের প্রয়োজন আছে। জিন্স, টি-শার্ট, লেগিংস, টপ, থ্রি-কোয়াটার্সই হচ্ছে বেড়াতে যাওয়ার উপযুক্ত পোশাক। সঙ্গে নাইটড্রেস হিসাবে রাখতে পারেন হাউসকোট। এছাড়া, বাজেট-এর মধ্যে শীতের পোশাকের জন্যও কিছু টাকা রাখা উচিত। কারণ, শীতের সময়টাকে উপভোগ করতে হলে, শীত আটকাবে অথচ ফ্যাশনেবল, এমন পোশাক কেনা দরকার। তাছাড়া, শীতকালই যেহেতু বেড়ানোর উপযুক্ত সময়, তাই শীতের পোশাকও ফ্যাশনেবল হওয়া চাই। উলের তৈরি পোশাক ছাড়াও, আজকাল লেদার ও অন্যান্য মেটেরিয়াল-এ তৈরি শীতের পোশাকও বেশ জনপ্রিয়। যাইহোক, বাজেট-এর পরে যে-বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল শপিং। শপিং-এর ক্ষেত্রে একা না গিয়ে, নিয়মিত শপিং করেন এমন কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। এতে যেমন ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, তেমন। কেনাকাটার ক্ষেত্রে দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধে হয়। এখন প্রশ্ন, দেশি এবং বিদেশি কী কী উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ড রয়েছে এবং কোথায় কেনাকাটা করলে আর্থিক সাশ্রয় হবে ও গুণমান বজায় থাকবে?
কলকাতার বিভিন্ন শোরুম এবং শপিং-মলগুলিতে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড-এর প্রচুর ফ্যাশনেবল পোশাক পাওয়া যায় আজকাল। এরমধ্যে অবশ্য উল্লেখযোগ্য এবং জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে রয়েছে আরমানি, বারবেরি, টমি হিলফিগার, ডিজেল, আমেরিকান টুরিস্টার, আমেরিকান জিক্স, গুচি, ডেনিজেন, ডি অ্যান্ড জি, পুমা প্রভৃতি।
তবে এইসব ব্র্যান্ড-এর পোশাক ছাড়াও, কলকাতার বেশ কয়েকটি শো-রুমে ভালো গুণমানের পোশাক পাওয়া যায় ন্যায্য দামে। উল্লেখযোগ্য বিপণিগুলির মধ্যে রয়েছে। শেক্সপিয়র সরণিতে ভেদম, লর্ড সিনহা রোড-এ আর্যপ্রস্থ, এলগিন রোড-এ সিমায়া, উড স্ট্রিট-এ শস্য, পার্ক স্ট্রিট-এ ট্যাসেক্স, সহর্ষ এবং অম্বিকা শাড়িজ। এছাড়া কলকাতায় রয়েছে স্পেন্সার্স-এর একাধিক শো-রুম। আর আছে ওল্ড নিউ মার্কেট, হগ মার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড-এর পরিচিত দোকানগুলি। সমস্ত ব্র্যান্ডেড শো-রুম গুলিতেই ন্যায্য দামে সুন্দর পোশাক পাওয়া যায়। ক্যাজুয়ালস-এর জন্য গড়িয়াহাট এবং হাতিবাগানের হকারদের কাছে যাওয়াই ভালো। সস্তায় সুন্দর পোশাক এদের কাছেও পাওয়া যায়। তবে কেনাকাটা করার আগে, হাল-ফ্যাশন সম্পর্কে বিশদে জেনে রাখা ভালো।
এই সময়ে ফ্যাশনে ইন শর্ট কুর্তি, স্লিভলেস শার্ট, হট প্যান্ট, হল্টারনেক টপ, অ্যানিমেল প্রিন্ট টপ, প্রিন্টেড কালারড কুর্তি, আনারকলি সালোয়ার স্যুট এবং সর্বকালের সেরা ডেনিম। এগুলি সবই মোটামুটি ১৭০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। অবশ্য যদি আরও বেশি টেকসই ও আকর্ষণীয় সালোয়ার কিনতে চান, তাহলে ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারেন আনারকলি সালোয়ার সেট। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ছোটো শো রুম কিংবা ধর্মতলার ফুটপাথ-এও ট্রাই করতে পারেন। এসব জায়গায়ও আপনার বাজেটের মধ্যে পেয়ে যেতে পারেন পছন্দসই পোশাক।