যদি মনের মধ্যে ইচ্ছেকে পোষণ করা হয়, তাহলে ইচ্ছেপূরণ হওয়া সম্ভব। এই সারমর্মটুকু কৈশোরেই বুঝে গিয়েছিলেন সায়েশা সায়গল। তাই মাত্র সতেরো বছর বয়সেই তিনি পা রাখেন চলচ্চিত্র জগতে।
সায়েশা বেড়ে উঠেছেন ফিল্মি আবহে। অভিনেতা সুমিত সায়গল তাঁর বাবা এবং অভিনেত্রী শাহীন বানো তাঁর মা। ছোটোবেলা থেকেই অভিনয়ে শখ ছিল সায়েশার। দিলীপ কুমার এবং শায়রা বানো-র ভাইঝি হলেন সায়েশা-র মা শাহীন। সায়েশা প্রথম অভিনয় করেন তেলুগু ছবিতে। তারপর হাতে আসে হিন্দি ছবি। এখন মুম্বই এবং দক্ষিণী ছবিতে কাজ করার প্রচুর অফার পাচ্ছেন তিনি।
অভিনয় জীবন শুরু হল কীভাবে?
স্কুল-এ অভিনয় করেছি। তারপর বড়ো হয়ে বড়ো পর্দায় অভিনয়ে ইচ্ছে হয় এবং আমি সুযোগও পেয়ে যাই তেলুগু ছবিতে অভিনয়ে। অখিল ছিল আমার প্রথম অভিনীত ছবি। ওটা ছিল ২০১৫ সাল। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র সতেরো বছর।
এরপর বলিউডি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন কীভাবে?
আমার ফোটো দেখে অভিনেতা-পরিচালক অজয় দেবগণ যোগাযোগ করেন। অভিনয় করতে বলেন তাঁর শিবায় ছবিতে। পরিচালক হিসাবে এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় ছবি। তিনি গল্প এবং চিত্রনাট্য শোনান আমাকে। তা শুনে আমার খুব ভালো লাগে। স্ক্রিন টেস্ট এবং অডিশন হয়। আমার সতেরোতম জন্মদিনে অজয় দেবগণের ছবিতে অভিনয়ে জন্য চুক্তিবদ্ধ হই। এত বড়ো ব্যানারের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে খুব আনন্দ হয়েছিল।
আপনি নাকি ভালো ডান্সার?
ছোটোবেলায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচতাম নিজের মনের আনন্দে। ফিল্মি এবং নন-ফিল্মি সবরকম নাচই প্র্যাক্টিস করেছি পরে। প্রায় ৯বছর বয়স থেকে ডান্স শিখেছি। লাতিন আমেরিকান নৃত্য, হিপহপ, ওডিশি, কত্থক প্রভৃতি নাচ। কাজের চাপ কম থাকলে এখনও প্রায় পাঁচ ঘন্টা ডান্স প্র্যাক্টিস করি।
প্রথমবার যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
বাস্তবে আমি খুব লাজুক, চুপচাপ থাকতে ভালোবাসি। কিন্তু যেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি, তখনই পুরো বদলে গেছি। একেবারে বিন্দাস। আমার পার্সোনালিটি-ই চেঞ্জ হয়ে যায়। কোনও জড়তা থাকে না। আসলে ইচ্ছেপূরণ হওয়ার আনন্দে বেস্ট পারফর্মেন্সটাই দিয়ে ফেলি।
শিবায় ছবিতে অভিনয় করে সাফল্য পেয়েছেন। প্রশংসা পেয়ে কেমন লেগেছিল তখন?
শিবায় ছবিতে অভিনয় করা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, খুব কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে আমাকে। খুব নার্ভাস ছিলাম এই ভেবে যে, সফল হব কিনা! ভয়ে ছবিটা দেখতেও যাইনি। তারপর ছবিটা দেখে সবাই যখন আমার অভিনয়ের প্রশংসা করলেন, তখন খুশিতে মন ভরে গেল।
কেরিয়ার গড়তে কতটা পারিবারিক সহায়তা পেয়েছেন?
আমার মা এবং বাবা দুজনেই মানসিক প্রেরণা জুগিয়েছেন আমাকে। ট্রেনিং থেকে শুটিং, সবসময়ই ওরা আমার সঙ্গে ছিলেন। আমার খুশিতে ওঁরা খুশি। সবসময় আমাকে গাইড করেন ওঁরা। চিত্রনাট্য শুনে ভালো অভিনয় করার জন্য পরামর্শ দেওয়া থেকে শুরু করে, ছবিটি দেখার পর ভুল শুধরে দেওয়ার দাযিত্বও নেন আমার পরিবারের সদস্যরা। আসলে ওরাই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ওরাই আমার প্রকৃত সমালোচক।
এখন অনেক ছবিতেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য থাকছে প্রচুর। এমন দৃশ্যে আপনি কতটা সাবলীল?
এখনও খুব অন্তরঙ্গ দৃশ্যের অভিনয়ে অফার আসেনি। যদি আসে তখন ভেবে দেখব। তবে চিত্রনাট্যে ডিমান্ড থাকলে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করায় তো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু অন্তরঙ্গ দৃশ্য যদি আরোপিত হয়, তাহলে সেই ছবিতে অভিনয় করতে আপত্তি আছে আমার। সত্যি বলতে কি, অন্তরঙ্গ দৃশ্য থাকলেই ছবি সফল হয় না। চিত্রনাট্যে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের প্রযোজন থাকতে হবে। তাছাড়া, একটা ছবির সাফল্য নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ে উপর। কাহিনি, চিত্রনাট্য, অভিনয়, পরিচালনা, আবহসংগীত, সম্পাদনা সবকিছু ভালো হলে তবেই একটি ছবি সফল হয়। শুধু তাই নয়, পুরো বিষয়টি দর্শকদের মনের মতো হওয়া চাই। অনেক সফল রোমান্টিক ছবি আছে, যাতে তেমন কোনও অন্তরঙ্গ দৃশ্য নেই। ঠিক এইজন্য আমার আন্টি শায়রা বানো অভিনীত পুরব অউর পশ্চিম, পড়োসন দেখে মন ভরে যায়। আংকল দিলীপ কুমার অভিনীত গঙ্গা যমুনা, কর্মা, মশাল প্রভৃতি ছবিগুলি দেখতেও আমার ভালো লাগে।
অজয় দেবগণের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
উনি ন্যাচারাল অ্যাক্টিং পছন্দ করেন। তাই, শুটিংয়ের আগে হাসি, মজা, আড্ডায় মাতিয়ে খুব ফ্রি করে দিতেন। ওর সঙ্গে কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছি।
এখন আর কোনও ছবির কাজ হাতে আছে কি?
টেডি নামের একটি তামিল ছবির কাজ শেষ করলাম। এবার যুবারত্ন নামের একটি কন্নড় ছবির কাজ শুরু করেছি। এই প্রথম কন্নড় ছবিতে কাজ করছি,তাই খুব ভালো লাগছে। আর একটি হিন্দি ছবিতে কাজ করার কথাও চলছে।
ফিটনেসের জন্য কী করেন আপনি?
ডান্স করে শরীর ফিট রাখি আমি। কারণ, ডান্স করলে শরীরের অনেক ক্যালোরি ক্ষয় হয়। আর ডান্স ছাড়াও, কিছু সময় জিম করি।
আপনি কতটা ফ্যাশনেবল?
জুয়েলারি আমার খুব পছন্দের। তবে কোনও ফ্যাশন ট্রেন্ড ফলো করি না। আরামদায়ক পোশাকই পরে থাকি। জিন্স এবং টি-শার্ট-এ বেশি সাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। ব্যক্তিত্ব বাড়াবে এমন পোশাক পরতে বেশি আগ্রহী আমি।
আপনি কতটা ভ্রমণবিলাসী?
ভীষণ বেড়াতে ভালোবাসি। কাশ্মীর এবং মরিশাস যাওয়ার খুব ইচ্ছে আছে আমার।