পার্টিমানেই মজা, হই-হুল্লোড়। বিশেষ করে টিন এজার্স-দের পার্টি করার জন্য দিনক্ষণ, কারণ কিছুরই দরকার পড়ে না। কিন্তু সাধারণত টিন পার্টিগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ছেলেমেয়েদের জন্য অজানা কিছু রিস্ক। আসলে বাড়ির শাসনের চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে পার্টিতে পৌঁছানো মানে সদ্য তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ স্বাধীনভাবে উপভোগ করা। এককথায় চোখের সামনে ওয়ান্ডারল্যান্ডের দরজা উন্মোচিত হওয়া। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত ইয়ং জেনারেশন ধরেই নেয়, মা-বাবার চোখের আড়াল হলেই তারা যথেচ্ছ আচরণ করতে পারবে। বিপদের সঙ্গে ফ্লার্ট করে গায়ে একটাও আঁচড় না লাগিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু প্রচুর ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, সবসময় টিনএজার্সদের এই ধারণা সত্যি সত্যি তাদের রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পারেনি।

সদ্যপ্রাপ্ত তারুণ্য

টিন-এজার্সরা যে কাজই করুক না কেন, বড়োদের মনে তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যায়। মনে রাখতে হবে টিনস-রা যথেষ্ট গ্রোন-আপ নয় সুতরাং তাদের প্রত্যেকটা কাজে ম্যাচিওরিটি আশা করা উচিত নয়। তারা তারুণ্যের আবেগে মাঝেমধ্যেই অনেকরকম বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ফেলতে পারে। তাদের মনে হয় ঝুঁকি নেওয়াটা মুহূর্তে সকলের মন জয় করে নেবে, ফলে না ভেবেই তারা ঝাপিয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বড়োরা তাদের বাধা দেবার চেষ্টা করলে তারা আরও বেশি করে লাইফ এনজয় করার বিভিন্ন রাস্তা খুঁজতে থাকে। টিনস-দের জন্য আনন্দ, হই-হুল্লোড় মানেই, রিস্ক নেওয়া, অজানা কিছু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা, ইচ্ছে করে বিপদসংকুল চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা এবং তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে গা-ভাসানো।

এমনও দেখা গেছে বাড়িতে যেসব ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট ম্যাচিওরিটির পরিচয় দেয়, দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার করে, আশ্চর্য ভাবে তারাই বাইরে গিয়ে ইরেসপন্সিবল হয়ে ওঠে। যেটা দেখে, মা-বাবারা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চান না যে তাদেরই সন্তান এমন অনুচিত কাজ করতে পারে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি যে, বড়োদের সামনে কোনও টিন-এজারের ম্যাচিওর ডিসিশন নেওয়া মানে এই নয় যে, কোনও অনৈতিক কাজকর্ম সে করবে না বা করতে পারে না।

বড়োদের কন্ট্রোল

আপনার টিন-এজ সন্তানের উপর আপনার কোনও কন্ট্রোল নেই বলে হাত তুলে দেওয়া চলবে না। সবসময়ই অভিভাবকদের একটা সুযোগ থাকে, টিন-এজার সন্তানের ব্যবহারকে ইনফ্লুয়েন্স করার। সন্তান ঠিক কি কি ভুল অবলম্বন করবে, সেটা চাপ দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। পুরোটাই নির্ভর করে তাকে কীভাবে আপনি মানুষ করেছে, তার আপব্রিংগিং এর উপর।

বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বাড়ির বড়োদের ইনফ্লুন্সের কারণে আজকের দিনেও অনেক টিন-এজার বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে জড়াতে চায় না। যেমন মদ খেয়ে গাড়ি চালানো, যৌন পরীক্ষানিরীক্ষা করা, এমনকী ড্রাগের স্বপ্নিল হাতছানি থেকে নিজেদের দূরে রাখে। যে-পরিবারে মানসিক শান্তি রয়েছে, সেখানকার ছেলে-মেয়েরা সাধারণত এরকম রিস্কি কার্যকলাপ থেকে নিজেদের বিরত রাখে। মা-বাবার আনকন্ডিশনাল লভ এবং পজিটিভ পেয়েন্টিং, টিন-এজ সন্তানকে ভুল রাস্তায় পা বাড়াতে দেয় না। টিন-এজাররা মনে করে তারা অসংযত আচরণ করলেও, তাদের জীবনের উপর তার কোনও প্রভাবই পড়বে না। সুন্দর ভাবে তারা জীবনটাকে কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু টিন-এজ-এ করা একটা ভুল তার সারা জীবনটাকে বদলে দিতে পারে। আগে থেকেই তাদের বুঝিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয় যে, তারা যে কুপথে পা বাড়িয়েছে সেটার তাৎক্ষণিক প্রভাব না থাকলেও ভবিষ্যতে সেটাই তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

কথাকাটাকাটির কারণ

টিন-এজ সন্তানের সঙ্গে তর্ক করে, সে কী বলতে চাইছে পুরোটা শুনুন। তারপর নিজের, সেই বিষয় নিয়ে কী বক্তব্য তাকে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। অনেকসময় টিন-দের তর্ক করতে শোনা যায়, ‌‘কেন মা-বাবাও তো ড্রিংক করে। আর আমরা করলেই দোষ?’ বড়োদের অ্যালকোহল কনজিউম করার সঙ্গে টিন-দের ড্রিংক করার একটা মস্ত ভেদাভেদ রয়েছে। সেই কারণেই একটা বয়স পর্যন্ত, আইনত দোকান থেকে মদ কেনা যায় না। এছাড়াও বড়োদের উপর অ্যালকোহলের যতটা না প্রভাব পড়ে, টিন বয়সে এর প্রভাবে বিপজ্জনক কাজ করার ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয় যেমন, সেক্স, ড্রাগস বা ড্রাইভিং।

ফার্স্ট প্রায়োরিটি সেফটি

অ্যালকোহলের প্রভাবে টিন-এজাররা অন্যের গ্রাস থেকে নিজেদের বাঁচাবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। ডেট-এ গিয়ে ধর্ষণ হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে থাকে। মদের নেশায় বুদ হয়ে থাকা টিন-এজার বুঝতেই পারে না বিপদ হামাগুড়ি দিয়ে তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বোধ বুদ্ধি সব লোপ পায়। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যখন বোধ ফেরে তখন তার নিজের মধ্যে এমন একটা অপরাধবোধ কাজ করে যেটা তাকে বাধা দেয়, বড়োদের কাছে তার উপরে হওয়া অপরাধের ঘটনা খুলে বলতে। ঘটনার কিছুটা দায়িত্ব স্বাভাবিক ভাবেই তারা নিজেদের উপর নিয়ে নেয়।

দায়িত্বরোধের সঙ্গে স্বাধীনতার স্বাদ

দায়িত্ববোধ ছাড়া স্বাধীনতা আস্বাদ করতে যাওয়াটাও মুর্খামির কাজ। ইয়ং জেনারেশন স্বাধীনতা দাবি করে। তারা মনে করে তারা যথেষ্ট বড়ো হয়ে গেছে এবং তারা যে ঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেই বিশ্বাস বড়োদের তাদের উপর থাকা উচিত। ইয়ংস্টারদের রোঝানো উচিত, বড়োদের কাছে তাদের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই গৃহীত হবে যদি তারা নিজেদের দায়িত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারে। অভিভাবককে নিজের টিন-এজ সন্তানকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শেখার সুযোগ দিতে হবে কারণ সব সময় বড়োদের সন্তানের পাশে পাশে থাকার সুযোগ ঘটবে না। জীবনে কিছুটা রিস্ক নিতে শেখাতে হবে যেটা কোনওভাবে ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত এবং তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দেবে না। যতক্ষণ না তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত স্বাধীন ভাবে নিতে দেবেন, ততক্ষণ তারাও এ বুঝতে পারবে না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলাফল ভালো হল না খারাপ। এক দিক থেকে বলা যেতে পারে, এটা একটা শিক্ষা দেওয়া, যাতে কোনও কাজ করার আগে তার ভালো, মন্দ বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা জন্মায় তাদের মধ্যে।

সিদ্ধান্ত নিতে গেলে, সবসময়ই যে তা পজিটিভ ফলাফল দেবে এমনটাও নয়। সুতরাং তাদের অপারগতাকে বার বার মনে করিয়ে দেওয়া অভিভাবকদের যেমন উচিত নয়, তেমনি ওই মুহূর্তগুলিতে সবসময় সন্তানের পাশে থেকে তাকে গাইড করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দেওয়াটাও মা-বাবার কর্তব্য। এর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কখনওই তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া উচিত নয় কারণ তাতে তার নিজের উপর বিশ্বাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

আপনার করণীয়

টিন-এজ সন্তানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাগারাগি, ফ্রাসট্রেশন বার করার বদলে সন্তানকে রোঝাতে হবে, তার সুরক্ষা এবং তার ভালো থাকা নিয়ে চিন্তিত আপনি। সন্তানকে ছোটো থেকেই শিক্ষা দিন, পাবলিক প্লেসে অথবা বন্ধুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা যদি কোনও ভাবে আইনের দিকে গড়ায় তাহলে তারও দায়িত্ব তারই উপর বর্তাবে। একইভাবে যদি তারা অসুরক্ষিত সেক্সলাইফ এনজয় করতে চায় তাহলে তারও পুরো দায়িত্ব তাদেরই উপর এসে পড়বে এবং এর ফলে আনওয়ান্টেড প্রেগনেন্সির মুখোমুখিও তাদের দাঁড়াতে হতে পারে। সুতরাং বুঝিয়ে দিন যে, যা তারা করবে তার কনসিকুয়েন্সও তাদেরই ফেস করতে হবে।

জীবনের মূল্যবোধ ভাগ করে নিন

নিজের সন্তানের সমবয়সি বন্ধুদের অভিভাবকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন। সকলেই নিজের নিজের ফ্যামিলি ভ্যালু শেয়ার করুন, যাতে একই শিক্ষা সকলে তাদের টিন-এজ সন্তানকে দিতে পারেন। প্রত্যেক অভিভাবকেরই একটা কমন সেট অফ লিমিটেশন এবং রেস্ট্রিকশন থাকে নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে। যদি আপনার ছেলের চেনাশোনা সব বন্ধুদের অভিভাবকদের মতামত আপনার সঙ্গে এক হয়, তাহলে নিজের ছেলেকে জীবনের মূল্যবোধ রোঝানোটা অনেক সোজা হয়ে যাবে। যেমন আপনাদের সকলের মত হল, পার্টিতে বাচ্চারা অ্যালকোহল খাবে না বা রাত ১১টার মধ্যে সকলকে বাড়ি ফিরতে হবে। সকলেই যখন নিজের নিজের সন্তানকে এই শিক্ষাটা দেবেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই রুলটা লঙঘন করার চেষ্টা কেউ করবে না। এছাড়াও একই মূল্যবোধ শেয়ার করার জন্য অভিভাবকদের মধ্যেও একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...