কল্পনা বউদিকে আমার খুব ভালো লাগত।ওর প্রস্ফুটিত যৌবন, লালিমা ও কথা বলার ভঙ্গিটা খুব সুন্দর ছিল। হাসলেই গালে একটা টোল পড়ত। আর চোখ দুটো ছিল মোহময়ী। এটাও ঠিক নয়। আসলে আমার যৌবন আমাকে প্রলোভনে মুগ্ধ করেছিল। শরীরের মধ্যে শরীর টেনে এনেছিল।

কল্পনা বউদি দিল্লির একটা প্রায় গ্রামাঞ্চল কোটলায় থাকত। ঠিক আমাদের বাড়ির পাশেই। ওর স্বামী সুকান্তদা মেদিনীপুরের ছেলে। শুনেছি বাপ-জ্যাঠারা নাকি কৃষক ছিল। মন্বন্তরের সময় পেটের খিদে নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিল পুরো পরিবারটাই। আর ফিরে যায়নি। ম্যাট্রিক পাশ করে সুকান্তদা চলে এসেছিল দিল্লিতে ছোটোমামার কাছে। অনেক চেষ্টা করে পেয়েছিল একটা চাকরি, সরকারি অফিসে। তারপর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। কল্পনা বউদির কোনও বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। কেন হয়নি– এ প্রশ্নের ভেতর যাব না।

গল্পটা কল্পনা বউদিকে নিয়ে। কারণ ওর জীবনে কোনও সংঘাত ছিল না। সুখ-দুঃখের ওঠা বসা সে তো সকলের জীবনেই থাকে। গল্পের পাতায় অন্য একটি মেয়ে না আসলে হয়তো এটা গল্প হয়ে উঠত না। বোধহয় তার নাম নমিতা, ‘বোধহয়’ এইজন্য বললাম কারণ ওর সাথে আমার আলাপ ছিল না।ঞ্জনামটা শুনেছিলাম কল্পনা বউদির মুখে। আমার মা আমাকে বলেছিল, মেয়েটা ভীষণ অহংকারী ও বাজে কথা বলে, ‘আমার মামা অমুক আমার মেসো তমুক।’

‘কেন তুমি কথা বলেছ ওর সাথে?’ প্রশ্নটা আমি মাকে করলাম। মা আলনায় কাপড় রাখছিল। বলল, ‘ওই তো মীরা মাসির সাথে একদিন এসেছিল আমাদের বাড়িতে। যেমনি দেখতে তেমনি কদর্য মুখের ভাষা। মুখে যেন খই ফুটছে।’

‘সকলেই যে সুন্দর স্বাভাবিক হবে, এটা কেন ভাবো তুমি?’

‘কি জানি বাপু, আমার কিন্তু দেখে ভালো লাগেনি। চালচলনটা কেমন যেন! সাধারণ নয়।’

সন্ধে নামছিল ছাদের রেলিং বেয়ে। আমার আবার নাটকের রিহার্সালে যাবার কথা। জুতো পরতে পরতে বললাম, ‘শুনেছি কল্পনা বউদির সঙ্গে খুব ভাব।’

‘হবে না? সুকান্ত অফিস বেরুলেই, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওদের বিবাহিত জীবনের কথা শোনে।’

‘যাই হোক আমাদের বাড়িতে আসে না, এ নিয়ে ভাবার

কী আছে?’

হঠাৎ একদিন কল্পনা বউদি ডেকে বলল, ‘আমার একটা কাজ করে দিবি?’ মেয়েদের অনুরোধ রাখতে হয়। কেননা সব সময় অপূর্ণ বাসনা প্রাপ্তি খোঁজে মন।

‘কী কাজ?’

‘আমাকে আর নমিতাকে একটু চাঁদনি চকে নিয়ে যাবি?’

‘কেন সেখানে তোমার কী কাজ?’

কল্পনা বউদি বসল আমার পাশে। চোখ দুটো মেঘ সোহাগ বৃষ্টির মতো চকচক করছে। ‘ছেলে বলে বুঝি বড্ড গুমোর। পুলিশের মতো জেরা করছিস।’

‘ঠিক আছে এখন বলো কী কাজ। কেন যেতে চাইছ?’

গলা নামিয়ে বলল, ‘বাবা কিছু টাকা পাঠিয়েছে তাই ভাবছি একটা সোনার হার কিনব। তোর দাদা জানলে খুব বকাবকি করবে। বলবে, বাজে খরচ। তাই তোকে অনুরোধ করছি!’

‘সে না হয় নিয়ে গেলাম। এর মধ্যে আবার নমিতা আসছে

কোথা থেকে?’

ও নাকি কী সব কিনবে। ওর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামী মাসে হবে।

আমার একটু আপত্তি ছিল। একলা সান্নিধ্য পাবার একটা ইচ্ছে মনকে দহন করছিল। তাই বেশ রাগের সুরে বললাম, ‘তার জন্য তো ওর বাড়ির লোকজন আছে?’

‘তা আছে, তবে যখন শুনল আমি যাচ্ছি, তখন বলল, আমাকে সঙ্গে নেবে বউদি? যদি কিছু পছন্দ হয়ে যায়।’

‘আর তুমিও ভালো মেয়ের মতো প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললে। এখন কথাটা যদি পাঁচকান হয় এবং শেষে যদি দাদার কানে যায়?’

‘ও বলেছে, কাউকে বলবে না।’

বাইরে নিমগাছের বিস্তৃত ছায়া। দু একটা নিমফল পড়ছে টুপটাপ।

গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তা কবে যাবে?’

‘ধর সামনের মঙ্গলবার। তোর দাদা অফিস চলে গেলেই। তোর কি সেদিন ক্লাস আছে?’

‘আছে তবে তোমাকে নিয়ে গেলে আর যাব না।’

‘তোর পড়াশোনার ক্ষতি হবে না?’

আমি খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে বললাম, পড়াশোনা করলেই কি সবকিছু পাওয়া যায়? তাছাড়া আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ কল্পনা বউদি আর কিছু বলল না। আমার মন তখন নীল ব্লাউজ ও ডুরে শাড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কোন এক দিগন্তে।

গ্রীষ্মের দুপুর। অল্প ধুলো ওড়া হাওয়া। কিছু গরু মোষ ছায়ায় বসে জাবর কাটছে। হরিয়ানি বিশাল শরীরের মেয়েরা দেয়ালে ঘুঁটে লাগাচ্ছে। কাছেই মণি ডাক্তারের চেম্বারে কিছু লোকের ভিড়। আমি পা দিয়ে একটা ছোটো পাথর ঠেলতে ঠেলতে সুমনার কথা ভাবছিলাম। আমার কলেজে পড়ে। বিজ্ঞাপনের মেয়ের মতো হাসে। যতবার ওর কাছে গেছি ততবারই ও অন্য কারও ইচ্ছার রমণী হয়ে উঠেছে। তাই এখন আমি মন দিয়ে খেলি। যাকে চাই তাকে কাছে টেনে আনি। সংগোপনে সুখ ভোগ করি।

কল্পনা বউদি শাড়ির কুঁচি ঠিক করছিল। বলল, ‘বোস। আমি আর দশ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে যাব।’ আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল,

‘চা খাবি?’

একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললাম, ‘না।’

কল্পনা বউদি একটা টিপ পরল। কাপড়ের ব্যাগে টুকটাক জিনিস ভরল। আবার অনুতাপের সুরে বলল, ‘তোর পড়ার ক্ষতি হবে

না তো?’

‘হলে আর কী করব। তোমার অনুরোধটাও তো রাখতে হবে।’

ঘরে মেঘের আলোছায়া। কল্পনা বউদি ঘাড় ফিরিয়ে বলল, ‘তুই আমার জন্য এত ভাবিস। আমি ভাবতেই পারি না।’

একটু মুচকি হেসে বললাম, ‘তুমি এতদিনে জানলে?’

কল্পনা বউদি কাঁধে একটা ব্যাগ নিল। তার মধ্যে মানিব্যাগ। চপ্পলটা পায়ে গলিয়ে বলল, ‘চল। নমিতার বাড়ির সামনে গিয়ে ওকে

ডেকে নেব।’

আমরা যখন দরিবা পেৌঁছোলাম তখন বেশ বেলা। রাস্তায় গলিতে জনসমুদ্র, চলাই দায়। তার মধ্যে লোকেরা ফুচকা, ভালো ঘিয়ের বড়ো জিলিপি ইত্যাদি খাচ্ছে। কেউ কেউ আবার ভিক্ষে চাইছে। চাঁদনিচকের এই গলিতে প্রচুর গয়নার দোকান। ইতিহাসে পড়েছি মোগল রাজত্বে এখানে চাঁদের আলোয় বাজার বসত। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসত। নমিতার কাঁধেও একটা ব্যাগ। আমরা এক বাঙালির গয়নার দোকানে ঢুকলাম। কল্পনা বউদি দোকানে ঢুকেই বিভিন্ন গলার হার তুলছে আর গলায় পরে দেখছে ওর রূপ কতটা বেড়ে গেল। তবে দামে পোষাচ্ছে না বলে রেখে দিচ্ছে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটির পর একটা হার পছন্দ হল। সুন্দর ছিলেকাটা মাঝখানের লকেট তার মধ্যে ছোট্ট একটা চুনি। টাকা দিয়ে রসিদ নিয়ে আমরা যখন দোকান থেকে বেরোলাম তখন একটা বেজে গেছে। নমিতাও অনেক গয়না দেখল কিন্তু কিনল না। কল্পনা বউদি হারের কাসকেটটা সযত্নে ব্যাগে পুরল। পথে আরও কী সব টুকিটাকি কিনল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বেলা অনেক হয়েছে, চল কোনও রেস্টুরেন্টে বসে খেয়ে নিই।’ আমারও পেটে ছুঁচোর কীর্তন হচ্ছিল। বললাম,

‘সেই ভালো।’

‘এখানে কোনও ভালো রেস্টুরেন্ট আছে?’ কল্পনা বউদি

প্রশ্ন করল।

‘ওই তো এত বড়ো রাস্তার মোড়ে ভিগ রেস্টুরেন্ট। ওখানে ভালো ঘিয়ের ভাতুরা পাওয়া যায়।’

নমিতা বলল, ‘সেই ভালো। একবার ছোটো কাকার সঙ্গে ওখানে খেয়েছি। ভাতুরাগুলো এত বড়ো যে দুটো খাওয়াই যায় না।’

রেড ফোর্টকে সামনে রেখে ভিড় ঠেলে আমরা রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। বয় এসে তিন গ্লাস জল নামিয়ে রাখল সবুজ পাথরের টেবিলে। মাথার ওপর লম্বা ডান্ডাওয়ালা ফ্যান ঘুরছে। স্টেনলেস স্টিলের থালায় খাবার পরিবেশিত হচ্ছে। একথা ওকথার পর হঠাৎ কল্পনা বউদি জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা এখানে কোনও টয়লেট আছে?’

আমি বললাম, ‘চলো তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।’

কল্পনা বউদি নমিতাকে বলল, ‘নমিতা ব্যাগটা ধরঞ্জআমি আসছি।’ নমিতা ব্যাগটা রাখল। খাওয়াদাওয়ার পর আমরা একটা ট্যাক্সি ধরলাম। যেতে যেতে নমিতা বলল, ‘হারটা খুব সুন্দর হয়েছে বউদি। তোমাকে খুব মানাবে।’

‘আমার বাবা রিটায়ার করার পর কিছু থোক টাকা পেয়েছিল। তা থেকে কিছু টাকা দিয়ে বলেছিল, ‘তোর পছন্দমতো একটা হার

কিনে নিস।’

নমিতা ব্যঙ্গের সুরে বলল, ‘তোমার বাবার মতো বাবা কি সকলে পায়?’

‘হিংসে করছিস?’

‘না হিংসে করব কেন। তুমি তোমার বাবার এক মেয়ে। আমার মতো তিন-চারটে বোনের একজন নও।’

‘তুইও পাবি দেখিস। বিয়ের সময় তোর বাবা তোকেও দেবে।’ ট্যাক্সি লোদী রোড ছাড়িয়ে কোটলার দিকে বাঁক নিয়েছে। আকাশে প্রখর সূর্যের আলো। আমার ঘুম ঘুম পাচ্ছিল।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি দাদাকে না জানিয়ে কিনলে। পরবে কী করে?’

কল্পনা বউদি মুচকি হাসল। সে একসময় না হয় বলে দেব। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তুই বুঝবি কী করে?

বুঝলাম অযথা প্রশ্ন করাটা ঠিক হয়নি। ঘড়িতে তিনটে বাজে। এখন বাড়ি গিয়ে কী করব। এত বেলায় কলেজ যাওয়া যায় না।ঞ্জবাড়ি গেলে মার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হবে। সনাতনদা স্কুল মাস্টার। নিশ্চয়ই ফিরেছে এতক্ষণে। ওখানেও যাওয়া যেতে পারে। কিছু আনমনা ভাব নিয়ে নেমে পড়লাম বউদির বাড়ির সামনে। নমিতা আগেই নেমে গেছে।

বাড়িতে এসে বউদি খোঁপা খুলতে খুলতে বলল, ‘ব্যাগ থেকে হারটা একবার বার করতো? কেমন হল আবার দেখি।’

আমি ব্যাগের জিপটা খুলে জিনিসগুলো বার করলাম। কিন্তু কোথায় সেই হারের কাসকেট? ব্যাগে তো গয়নার বাক্স নেই।

‘বউদি কোথায় রেখেছিলে গয়নার বাক্সটা?’

ঘরের মধ্যে ইন্দ্রপতন হল। কল্পনা বউদি ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, ‘সেকি ওটাতো ব্যাগের মধ্যেই ছিল।’ তারপর দুজনে মিলে অনেক খোঁজা হল। না, গয়নার বাক্স পাওয়া

গেল না।

‘এখন কী হবে?’ কল্পনা বউদি অবসন্ন হয়ে বিছানায় বসে পড়ল। অশ্রুভরা চোখ নিয়ে বলল, ‘তোর দাদা জানলে মেরে ফেলবে। অতগুলো টাকার জিনিস। আর বাবাকেই বা

কী বলব?’

‘তোমার ঠিক মনে আছে ওটা

ব্যাগে রেখেছিলে?’

‘আরে সেই জন্যই তো ব্যাগটা নিয়ে গিয়েছিলাম।’

‘যখন দাদার জন্য পাঞ্জাবি কিনছিলে তখন ওটা ব্যাগে ছিল?’

‘হ্যাঁ।’

‘একবার নমিতার বাড়িতে চলো। ব্যাগটা তো কিছুক্ষণের জন্য ওর

কাছে ছিল।’

‘ও যদি কিছু মনে করে?’

আমি এবার কল্পনা বউদির হাত ধরে বললাম, ‘মনে করার কিছু নেই। অতগুলো টাকার জিনিস নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না।’

‘আর এটা তো ঠিক যে একটা জিনিস তো হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না।’

নমিতাকে জিজ্ঞাসা করতেই ও আকাশ থেকে পড়ল। ‘সে কি কাণ্ড? তুমি তো ওটা ব্যাগেই রাখলে আমার সামনে। ব্যাগ

কোথাও খুলেছিলে?’

‘হ্যাঁ দাদার পাঞ্জাবি কেনার সময়।’

‘পড়ে যায়নি তো?’

‘না তখনও ওটা ব্যাগে ছিল।’

নমিতা নিজের ব্যাগটাঞ্জখুলে দেখিয়ে বলল, ‘আমার ব্যাগে কিন্তু কিছু নেই। তুমি আমার ঘরও খুঁজে

দেখতে পারো।’

কল্পনা বউদি অপ্রস্তুত। ‘না না একি কথা বলছ তুমি? আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না।’

নমিতা এবার ঝাঁঝালো সুরে বলল, ‘সন্দেহ করছ কারণ দশ মিনিট ব্যাগটা আমার কাছে ছিল।’

রাগে আমার শরীরও কাঁপছিল। চোরের মায়ের বড়ো গলা। দাঁতে দাঁত চিপে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কি ওটা পড়ে যেতে দেখেছ?’

‘দেখতে পেলে বলতাম না? ইচ্ছে করলে তোমরা পুলিশেও যেতে পারো।’ নমিতা মুখ ফিরিয়ে রইল।

‘না না, সে সব কথা আমরা ভাবছিই না’– আহত কল্পনা বউদির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল।

আমরা বেরিয়ে এসে আসেপাশের জায়গাগুলো খুঁজলাম, না কোথাও নেই।

কল্পনা বউদি আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা ট্যাক্সিতে পড়ে যেতে পারে?’

‘পারে তবে ব্যাগের চেন তো বন্ধ ছিল।’

‘ট্যাক্সির নম্বরটাও তো জানিস না?’

‘না।’

‘তবে কোথায় গেল বল দেখি?’

‘আমার মনে হয় নমিতাই নিয়েছে। পুলিশে একটা এফআইআর করা দরকার। রুলের গুঁতো খেলে ঠিক বলবে।’

‘তবে যদি না পাওয়া যায় লজ্জার একশেষ।’

এই ঘটনার চুপচাপ পরিসমাপ্তি টেনে দিল কল্পনা বউদি। একদিন আমাকে ডেকে পাঠাল। দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তবুও মেঘেদের হুটোপাটি আকাশে। কল্পনা বউদির দুঃখ আমাকে অসহায় করে তুলেছিল। বুঝতেই পারছিলাম না যে আমার কী করা উচিত। বাঙালি বউদের নিজস্বতা বলে কিছু নেই। আগুনের মতো জ্বলে নিষেধের তর্জনী। দাদার ভয়ে এফআইআর করল না কল্পনা বউদি।

ঢুকতেই বলল, ‘বস। মুখের ভেতর ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের ধস। বুকের অনেক যন্ত্রণা ঠেলে বলল, ‘জানিস আজ নমিতা এসেছিল।’

‘কেন?’

‘বিয়ের পর ও সুখে আছে জানাতে।’

‘জানানোর কী আছে?’ আমি আড়চোখে কল্পনা বউদির দিকে তাকালাম।

একটু চুপ থেকে কল্পনা বউদি বলল, ‘দেখলাম, ওর গলায় আমার সেই হারটার মতো একটা হার। নীচে ছোটো চুনির লকেট। ওর শাশুড়ি নাকি ওকে দিয়েছে।’

তখনই বলেছিলাম, ‘পুলিশে চলো। এখন দেখলে তো।’

বউদির চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। ‘জানিস হারটা পাইনি বলে দুঃখ নেই। দুঃখ এই যে আমি বাবার কাছে বলেছিলাম, আমি হারটা রোজ পরি। ভয়ে ভয়ে ছিলাম আমার বাবা যদি তোর দাদাকে বলে দেয়। আজ আর সেই ভয়ও নেই। গত পরশু আমার বাবা মারা গেছে। এখন আর তোর দাদার কাছে হার স্বীকার করতে হবে না।’

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...