( এক )
আরশির সামনে বেদানার রসে ভরা গেলাসটা ঠক করে নামাতেই বিভাবরীর চোখে পড়ল শ্রীয়ের কঠিন মুখটা। চোখের কোণ দিয়ে দেখলেন, আরশি এক চুমুক দিয়ে গেলাসটা নামিয়ে রাখল। বিভাবরী উঠে গিয়ে বিট নুনের কৌটোটা নিয়ে এলেন। বেদানার রসে এক চিমটি বিটনুন মিশিয়ে দিয়ে গেলাসটা আরশির হাতে তুলে দিলেন। আরশি বাধ্য মেয়ের মতো এক চুমুকে গেলাসটা শেষ করে নামিয়ে রেখে অল্প হাসল।
বড়ো বিষণ্ণ সে হাসি। এমনটা তো হবার কথা ছিল না! আরশি আর শ্রী দুই বোন একে অন্যকে চোখে হারায়। আর তাই জন্যই আরশি এত বড়ো পদক্ষেপটা নিতে পেরেছে। কিন্তু শ্রী! সে এত বদলে গেল কেন? চশমার কাচ মুছতে মুছতে বিভাবরী বাগানের দিকে চেয়ে থাকেন।
গেট খোলার শব্দ হয়, মালতীর ছেলেটা এসেছে। হাতের ঠোঙাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এই নাও ঠাকুমা, কাঁচা তেঁতুল।
শ্রী এসে দাঁড়িয়েছে, তেঁতুল কেন রে?
তা আমি কী জানি! মামাবাবু অফিস যাবার সময় বলল গাছ থেকে পেড়ে দিয়ে আসতে। আমাকে একটা দশ টাকার কয়েনও দিয়েছে। মালতীর ছেলে সাদা দাঁত ঝিকিয়ে হাসে।
শ্রীর মুখে কালির পোঁচ। দুম দুম করে পা ফেলে সে ভিতরে চলে যায়। বিভাবরী ঠোঙাটা নিয়ে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন।
( দুই )
স্নিগ্ধ এত জোরে বাইক চালিও না, আমার ভয় করে।
তীব্র হাওয়ায় আরশির আকুতি উড়ে গেল। স্নিগ্ধ বাইকের স্পিড আরও বাড়িয়ে দিল। ব্রিজের উপর দিয়ে বাইকটা উড়ে যাচ্ছিল যেন, নীচে দামোদর নদী তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে আরশির ভয় আরও বেড়ে গেল। আরশির সাদা ওড়নাটা পাখির ডানার মতো দুপাশে উড়ছিল।
লুকিং গ্লাস দিয়ে আরশির ভয় পাওয়া মুখটা দেখতে দেখতে স্নিগ্ধ চিৎকার করে ওঠে, তোমার উড়তে ইচ্ছা করে না আরশি? পাখির মতো ডানা মেলে?
এই স্নিগ্ধকে চিনতে পারে না আরশি। গম্ভীর প্রফেসর স্নিগ্ধময় মিত্র আর এই স্নিগ্ধ আকাশ পাতাল তফাৎ। হঠাৎ একটা ধাক্কা, বাইকটা ছিটকে পড়ে রাস্তায়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে, রক্তের মধ্যে স্নিগ্ধ ছটফট করতে করতে স্থির হয়ে গেল। স্নিগ্ধর নাম ধরে চিৎকার করে উঠল আরশি।