আজ জাকার্তাতে আমাদের চতুর্থ দিন। সকালে উঠে হোটেলের লবিতে এসে দাঁড়াতেই হোটেল ম্যানেজার মুখে এক গাল হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “জাকার্তা কেমন লাগছে আপনাদের? আমাদের ড্রাইভার ঠিকমতো ঘোরাচ্ছে তো?'
আমি বেশ খুশি মুখে জবাব দিলাম, 'ভীষণ ভালো লাগছে আপনাদের জাকার্তা। আর ড্রাইভার ছেলেটিও খুব ভালো। আমি ওকে কয়েকটা ইংরেজি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছি।”
ম্যানেজার আমার কথা শুনে হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা আজকে কী করবেন, কিছু প্ল্যান করেছেন?”
আমি নিরাশ গলায় জানালাম, ‘না, সেজন্যই তো সাত সকালে আপনার কাছে আসা। কোথায় যাওয়া যায় বলুন তো?”
ম্যানেজার ভদ্রলোক একটু ভেবে নিয়ে বললেন, “ওল্ড জাকার্তা ঘুরেছেন?”
আমি মাথা নেড়ে ‘না' বলতেই উনি বললেন, “তাহলে আজ আপনারা ওল্ড জাকার্তা ঘুরে আসুন। প্রথমে চায়না টাউন দিয়ে শুরু করুন, তারপর ওল্ড জাকার্তা, যাকে আমরা ওল্ড বাটাভিয়া বা কোটা টুয়া বলে থাকি। ওখানে ডাচ কলোনিয়াল পিরিয়ডের সব ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওখানকার বিল্ডিংগুলো তিনশো বছরেরও বেশি পুরোনো। জায়গাটা আপনাদের ভালো লাগবে।”
—আপনি যখন বলছেন, তখন অবশ্যই যাব।
—ঠিক আছে, আমি ড্রাইভারকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে দেব। তাহলে আপনার গুগল ট্রান্সলেটর নিয়ে হিমশিম খেতে হবে না। ম্যানেজার বেশ রসিক বোঝা গেল। তবে আমি এই কয়েকদিনে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে শিখে গেছি। প্রয়োজন মানুষকে সব কিছু শিখিয়ে দেয়।
হোটেল ম্যানেজারের কথামতো চায়না টাউন দিয়েই শুরু হল আজকের জাকার্তা ভ্রমণ। চায়না টাউন নেই এমন কোনও দেশ হয়তো এই পৃথিবীতে বিরল। ওল্ড জাকার্তার তামান সারি অঞ্চলে অবস্থিত, গ্লোডোককে ইন্দোনেশিয়ার বৃহত্তম চায়না টাউন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ওল্ড বাটাভিয়া সিটির এই অংশটি চিনা বংশোদ্ভূত লোকেদের বাসস্থান এবং ডাচ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে চায়না টাউন বা পেসিনান নামে পরিচিত। তবে আজকাল গ্লোডোক জাকার্তার ইলেকট্রনিক ট্রেডিং সেন্টার হিসেবে বেশি পরিচিত। ডাচ ঔপনিবেশিক আমলে চায়না থেকে অনেক লোক এখানে এসেছিল। তারা সাধারণত চিনির কল আর ছোটোখাটো ব্যবসায় যুক্ত ছিল।