শুনলাম ‘পরি’। কিন্তু এমনটা শোনার কথা নয়! প্রসঙ্গটা ছিল বেড়াতে যাওয়া, মানে ভ্রমণ। টেলিফোন বাহিত হয়ে যে কথাটা আমার কানে ঢুকেছিল, সেটা তো আগেই বলেছি। কিন্তু পরি কেন? পরি তো কোনও বেড়াবার জায়গা নয়। একজন মেয়ের নাম। হ্যাঁ, আমার পরিচিত। শুধু পরিচিত? তার চেয়ে হয়তো একটু বেশি, কিন্তু না, আর নয়। পরি যেখানে ছিল, সেখানেই থাক। এ ব্যাপারে আর একটি কথাও না। আমি একটু বোকা! কিন্তু এতটা বোকা নই যে, নিজেই নিজের হৃদয় খুঁড়ে বেদনাকে বেশ পরিপাটি করে জাগিয়ে তুলব। একেই বোধহয় ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া বলে।
কথা তো হচ্ছিল বেড়াতে যাওয়া নিয়ে, সেখানে এসব কী? আসলে ও-প্রান্তে যা বলতে চেয়েছিল, সেটা এখন জানলাম পুরী। ওহ পুরী, তাও আবার সেখানে বেড়াতে যাওয়া। বুঝলাম ওই জন্যই আমার কানে ঢুকেও ঢোকেনি কেন? আমার হাসি পাচ্ছিল। আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষের কম জায়গা তো ঘোরা হয়নি। শুধু পুরীটা ব্যাগের এক কোণে কেমন করে যে পড়েছিল, বুঝতেই পারিনি। বুঝলাম আর দেরি করা উচিৎ নয়। সুতরাং ফাইনাল। সেই উপলক্ষ্যে কৃষ্ণনগর গেলাম। আমাদের দলের বাকি সদস্যরা ইতিমধ্যেই কৃষ্ণনগর চলে এসেছে। রাতের ট্রেন— গরিবরথ, হাওড়া থেকে ছাড়বে।
বাড়ি জমজমাট। ভালোই লাগছিল। বিকেলের দিকে ঘূর্ণিতে গেলাম। কখন যে দু'ঘণ্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। মনে হল, ঘূর্ণি যারা না দেখেছে, তারা মাটির তৈরি অসাধারণ শিল্প-সৌকর্য দেখা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ২০০ বছর ধরে মূর্তি তৈরির কাজ করছে ঘূর্ণির শিল্পীরা। কীভাবে বানায়! এ প্রশ্ন প্রত্যেকের মনে না আসাটাই অস্বাভাবিক। থাক, ঘূর্ণির ইতিহাস না হয় পরে কোথাও বলা যাবে। এখন পুরী, শুধুই পুরী।
আমরা কৃষ্ণনগর থেকে ভাড়া করা গাড়িতে চেপে সবাই যথাসময়ে হাওড়া স্টেশনে এলাম। এক্সপ্রেস ট্রেনও সময়মতো হাওড়া থেকে ছেড়ে দিল। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই রুটি আর চিকেনকারি দিয়ে ডিনার। শেষ পাতে অবশ্যই কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া। শুরুতে ছিল সরভাজা, এখন সরপুরিয়া। সরভাজার টেস্ট একটু কড়া, খাঁটি গাওয়া ঘি দিয়ে ভাজা। আর সরপুরিয়া কিছুটা সন্দেশের মতো। হালকা পাকে তৈরি। এবার শোয়ার ব্যবস্থা।