আপনার যদি নিজস্ব আইডিয়া, নতুন কিছু ক্রিয়েট করার ক্ষমতা এবং স্টাইল সেন্স থাকে, তাহলে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর কেরিয়ারে আপনি অবশ্যই অনেকটা দূর পৌঁছোতে পারবেন।

এই ইন্ডাস্ট্রি একদিকে যেমন ক্রিয়েটিভ মনকে পরিপূর্ণ রাখতে পারবে তেমনি ব্যক্তিবিশেষের প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে রেখে গ্ল্যামার, খ্যাতি এবং সাকসেস-কে ধরতেও সক্ষম হবে। আর এই কেরিয়ারে আপনি সফল হতে পারলে আপনার আর্থিক সাফল্যও কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু আপনাকেও দিতে হবে আপনার নিজস্বতা কারণ ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে পরিচালনা করার ক্ষমতাও (ম্যানেজারিয়াল স্কিল্স) বিশেষ ভাবে দরকার এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে।

প্রতি মুহূর্তে এই ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে চলেছে নতুনের খোঁজে। এক্সপোর্ট হাউস, Fashion ডিজাইনারদের কাজের জায়গা, দক্ষ শ্রমিক, ডায়ার, উইভার সকলেই নিজের নিজের জায়গায় শ্রেষ্ঠ। সকলের সঙ্গেই সমান আন্তরিকতা রেখে তবেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব এই কেরিয়ারে প্রমাণ করা সম্ভব। সারা বিশ্বে ফ্যাশন ডিজাইনিং রোজই নতুন দিগন্তে ডানা মেলে এগিয়ে যাচ্ছে আরও কিছুটা দূরত্বে। তৈরি করছে বিশ্ব জুড়ে গ্রাহক।

‘ফ্যাশন ডিজাইনিং’-কে কেরিয়ার বানাতে হলে প্রথমেই দরকার দুই ধরনের যোগ্যতা। স্বাভাবিক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা। নিজস্ব ভাবনা, ফ্যাশন সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা, রং, কাপড়ের টেক্সচার, চেহারা অনুযায়ী স্টাইল, পোশাকের আকারের একটা ছবি মনে মনে তৈরি করে ফেলা ইত্যাদি স্বাভাবিক গুণগুলির প্রয়োজন রয়েছে। এর সঙ্গেই বাড়াতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা।

কোনও ভালো রেপুটেড এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইন্সটিটিউট থেকে কোয়ালিফিকেশন অর্জন করা যেতে পারে। ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হওয়া যেতে পারে ক্লাস টুয়েলভ পাস করার পর। এছাড়াও স্পেশালাইজিং করারও ব্যবস্থা রয়েছে এই ধরনের ইনস্টিটিউটগুলিতে।

প্রথমেই বুঝতে হবে ‘ফ্যাশন ডিজাইনিং’-এর কেরিয়ার আপনার জন্য যোগ্য কিনা। ট্যালেন্ট থাকা এই কেরিয়ারে খুবই প্রয়োজন। নিজস্ব স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধ থাকা খুবই জরুরি এবং রং, বিভিন্ন শেড, টেক্সচার, আইডিয়া স্কেচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনও রয়েছে। কোনও ব্যক্তিকে আরও সুন্দর কীভাবে করা যেতে পারে সেই ইচ্ছাও মনের মধ্যে থাকা দরকার।

নতুন ডিজাইন, প্যাটার্ন, পোশাকের আদল, অ্যাক্সেসারিজ ইত্যাদি মনের মধ্যে ভিসুয়ালাইজ করার ক্ষমতা দরকার। ফেব্রিক এবং বিভিন্ন অ্যাক্সেসারিজকে আপনার মন থেকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই বুঝবেন এই শিল্পে আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। সাধারণত পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকার মতো খরচা হয় বছরে কোনও নামি ইন্সটিটিউট থেকে এই কোর্স করাতে হলে। অনেক ইন্সটিটিউট যোগ্যতা অনুযায়ী স্কলারশিপেরও ব্যবস্থা করে।

ইন্সটিটিউটগুলির ওভারঅল ট্রেনিং প্রোগ্রামের মধ্যে থাকে ইলাসট্রেশন টেকনিক, ডিজাইন প্রসেস, ডিজাইন কনসেপ্ট, ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, উইভিং-এর বিভিন্ন ধরন, বিভিন্ন রং, রঙের অ্যাপ্লিকেশন, ট্রেন্ড, ফ্যাশন থিওরি, ড্রাফটিং টেকনিক, আধুনিক ড্রেপিং স্টাইল সূচিশিল্প, ভিসুয়াল মার্চেন্ডাইজিং, রিটেল মার্কেট তৈরি, অ্যাপারেল মার্কেটিং-এর উপর জ্ঞান, আর্ট পোর্টফোলিও, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি আরও অনেক বিষয়।

ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর ট্রেনিং এর পর দু’বছর, যে-কোনও গারমেন্ট স্টোরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। এরপর নিজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নতুন ফার্ম শুরু করে ব্যাবসায় নেমে পড়া সম্ভব। যে-কোনও আপ-কামিং ডিজাইনারের জন্য মার্কেটের এক্সপোজার খুবই প্রয়োজন। স্যাম্পল অ্যানালিসিস থেকে ড্রাফটিং এবং ডিজাইন কনসেপ্ট পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন, সম্ভাব্য খরিদ্দারদের সঙ্গে সরাসরি ইন্টার‍্যাকশন এবং দক্ষ কারিগরদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলে এই কাজে সাফল্য তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। এটাও জেনে রাখা উচিত কোন জায়গা থেকে কোন পোশাকের জন্য কোন ফেব্রিক অথবা মেটেরিয়াল নেওয়া হবে।

Fashion ডিজাইনিং কোর্স শেষ করার পর নিজের ব্যাবসা শুরু করার বিকল্পস্বরূপ এক্সপোর্ট হাউজগুলিতে, জামাকাপড়ের স্টোরে, টেক্সটাইল মিল-এ, চামড়ার কোম্পানি, বুটিকে, জুয়েলারি দোকানে, মিডিয়ায় অথবা ফ্যাশন-শো অর্গানাইজ করার মতো পেশাতেও যাওয়া যায় কারণ এইসব জায়গাতেও ফ্যাশন ডিজাইনারদের একটা বিশাল চাহিদা রয়েছে।

চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম প্রথম পনেরো হাজার টাকা থেকে শুরু করে কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয় হতে পারে। অভিজ্ঞতা যত বাড়বে, কাজের দক্ষতাও তত বৃদ্ধি পাবে। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয়ও চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা হতে পারে। আর একবার যদি ডিজাইনার মহলে আপনি খ্যাতি অর্জন করে নিতে পারেন তাহলে পুরো পৃথিবী আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসতে পারে। দরকার হচ্ছে পরিশ্রম এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির লেটেস্ট ট্রেন্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা।

ভারতে ফ্যাশন ডিজাইন-এর উপর কাজ করার বিরাট একটা মার্কেট তৈরি হয়েছে। পোশাকের কোম্পানিগুলিতে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফ্যাশন ডিজাইনার, টেক্সটাইল ডিজাইনার, মডেল, রিটেলার, বায়ার এবং মার্চেন্ডাইজারের কাজই হচ্ছে তাদের ক্লায়েন্টদের খুঁটিনাটি চাহিদার বিশেষ খেয়াল রাখা।

ভারতীয় ডিজাইনাররা এখন বিদেশেও নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছেন। ফলে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটেও ফ্যাশন ডিজাইনিং স্টুডেন্টদের চাহিদা বেড়ে চলেছে। ঋতু বেরি, ঋতু কুমার, রোহিত বাল, সত্য পল, তরুণ তাহিলিয়ানি, সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় আজ বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনার। ‘ইন্ডিয়া ফ্যাশন উইক’ এখন ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন ইভেন্টের মর্যাদা পেয়েছে। বিদেশি স্টোরগুলি থেকে বায়ার-রা এখানে আসছেন ব্যাবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

পুরোনো যুগ বদলেছে। ভারতীয় নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে সমানে তাল রেখে এগোচ্ছে। কর্পোরেট জগতেও মেয়েদের আনাগোনা বেড়েছে। ডিজাইনার পোশাক, গয়না, অ্যাক্সেসারির নতুন নতুন চাহিদা বাড়ছে। মেয়েরা সুন্দর পোশাকে সজ্জিতা হয়ে নিজেদের প্রেজেন্ট করছেন সুন্দরভাবে। ভারতের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি আজ অগ্রগতির মুখে। চারিদিকে মেগা মল গজিয়ে উঠছে। ফ্যাশনের বাজারে দরকার হচ্ছে রোজ হাজার হাজার কাজ জানা ট্রেনড প্রফেশনাল-দের। ডিজাইন, ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন, টেকনোলজিতে প্রয়োজন হচ্ছে নতুন মুখের। সুতরাং কেরিয়ার হিসেবে, Fashion ডিজাইনিং-এ কেরিয়ার গঠন করতে পারলে আর চিন্তা নেই।

–    ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর ক্ষেত্রে এত অপারচুনিটি রয়েছে যেগুলির সঠিক সদ্ব্যবহার করতে পারলে, আপনার সাফল্য কেউ আটকাতে পারবে না।

–    এই ব্যাবসায় এতটাই গ্ল্যামার এবং খ্যাতি জড়িত রয়েছে যে, ধনী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই কর্মসূত্রে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এই পয়েন্টে পৌঁছোবার জন্য চাই প্রচণ্ড পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।

–    ফ্যাশন ডিজাইনারদের প্রয়োজন প্রচুর অভিজ্ঞতার। তাই এই পেশায় আসার প্রথমদিকে যে-কোনও নামি ফ্যাশন ডিজাইন ফার্মে সহকর্মী রূপে যুক্ত থেকে কাজ শেখা উচিত।

–    নিজের Fashion স্টুডিও খুলতে গেলে প্রয়োজন প্রচুর অর্থের অথবা এমন কোনও ইনভেস্টর খুঁজতে পারেন যিনি আপনার স্টুডিও-তে অর্থ ঢালতে প্রস্তুত।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...