আয়নার সামনে বসে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখেন না – এমন নারী খুঁজলেও পাওয়া যাবে না হয়তো। আর খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে যদি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, আপনার সৌন্দর্যের সবচেয়ে বড়ো প্লাস পয়েন্ট আপনার চোখ দুটি – তাহলে বাজিমাত করতে খুব কষ্ট করতে হবে না আপনাকে। আপনার চোখের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে, জীবনের ওঠাপড়া-কে সহজতর করে দেবে আপনার চারপাশের মানুষজন।
তবে চোখদুটি-কে সুন্দর করে তোলাটা খানিকটা নিজের মেক-আপ করার গুণের উপরেও বর্তায়। অর্থাৎ সঠিক মেক-আপ Fashion এর জাদুবলে অনায়াসে চোখের সম্মোহনী শক্তি বাড়িয়ে তোলা যায়। কলকাতার নামি মেক-আপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার, টিপস দিচ্ছেন কী করে মেক-আপের মন্ত্রবলে বাড়াবেন আপনার চোখের সৌন্দর্য।
প্রথমেই জেনে রাখা ভালো যে, চোখের মেক-আপের জন্য কয়েকটি জিনিস অত্যন্ত জরুরি। যেমন আইশ্যাডো ব্রাশ, আই অ্যাপ্লিকেটর, মাসকারা, কাজল পেনসিল, লিকুইড আইলাইনার, কমপ্যাক্ট আর ফাউন্ডেশন ক্রিম। এই উপকরণগুলির সাহায্যে চোখের সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলা যায়। বর্তমানে চোখের মেক-আপের Fashion-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড হল স্মোকি আইজ। পর্যায়ক্রমে সেই লুক আনবেন কীভাবে, জানাচ্ছেন অনিরুদ্ধ।
স্টেপ ১ – আইশ্যাডো নির্বাচন
সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সঠিক আইশ্যাডো নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে নিজের গায়ের রঙের ব্যাপারে সচেতন হওয়া একান্ত জরুরি। সাধারণত স্মোকি লুক-এর জন্য ব্ল্যাক আর গ্রে, রং-দুটিই ব্যবহূত হয়। কিন্তু আধুনিকারা মাত্র দুটি রঙেই আর সীমাবদ্ধ থাকতে চান না – তাই বেগুনি, কফি, ডার্ক পিংক, কপার, ডার্ক গ্রিন, ডার্ক ব্লু আর পার্পল রঙেরও সাহসী ব্যবহার চোখে পড়ছে।
আইশ্যাডোর রং যেমনই বাছুন না কেন, বেসিক শেড লাগানোর আগে নিজের স্কিন টোন, চোখের পাতার রং ইত্যাদি বিবেচনা করা বিশেষ জরুরি। আর সেই সঙ্গে যে-পোশাকটি পরছেন, তার রং সম্পর্কেও সচেতন থাকুন চোখের মেক-আপ শুরুর আগে। স্মোকি লুক-এর জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি রঙের আইশ্যাডোর পরত ব্লেন্ড করা হয়। দুটো রঙের ক্ষেত্রে একটা গাঢ় অন্যটি একটু হালকা-শেড বাছাই ভালো। ধরুন যদি নীল রঙের উপর জোর দিতে চান তাহলে বেস কালার হিসাবে ব্ল্যাক আর গ্রে বাছুন। বিকল্পে বেগুনি, পার্পল বা ডার্ক ব্লু ব্যবহার করতে পারেন। যদি বাদামি রঙের লুক দিতে চান চোখ দুটিতে, তাহলে ব্ল্যাক, গ্রে, কপার বা কফি শেড নির্বাচন করুন আকাঙ্খিত স্মোকি লুক-এর জন্য।
হালফিল সময়ে, সুন্দরীরা দুটি রঙের পরিবর্তে সিঙ্গল কালারেও এক্সপেরিমেন্ট করছেন। এক্ষেত্রে হালকা রঙের আইশ্যাডো বাছাই করা ভালো। স্মোকি লুক-এর জন্য ক্রিম আইশ্যাডোর বদলে পাউডার আইশ্যাডোই ব্যবহার করুন, কারণ ক্রিম শ্যাডো ব্লেন্ড করা মুশকিল।
স্টেপ ২ – আইলাইনার পেনসিল
শ্যাডোর রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইলাইনার পেনসিলের রং নির্বাচন করুন। আজকাল বাজারে পাউডার আইলাইনারও পাওয়া যায়। এর সঙ্গে থাকে একটি স্পঞ্জ টিপ ব্রাশ, যার সাহায্যে লাইনার ব্লেন্ড করা সহজ হয়ে যায়। স্মোকি লুক-এর জন্য লিকুইড আইলাইনার কখনওই ব্যবহার করবেন না।
স্টেপ ৩ – ফাউন্ডেশন লাগানো
সাধারণভাবে মেক-আপ শুরুর প্রথম ধাপ হল সমস্ত শরীরে ফাউন্ডেশন লাগানো। আই মেক-আপের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। অর্থাৎ স্মোকি লুক দেওয়ার আগে ফাউন্ডেশনের একটি হালকা পরত, বন্ধ চোখের উপর ও চোখের পাতার আশেপাশে দিন। এর পর ফাউন্ডেশন দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ফেস পাউডারের হালকা পরত লাগান। এবার আপনার চোখ মেক-আপ করার জন্য উপযুক্ত ক্যানভাস বলে বিবেচিত হবে। ফাউন্ডেশন বেস ভালো হলে, চোখের উপর আইশ্যাডোর পরত কুঞ্চিত হবে না।
স্টেপ ৪ – আইলাইনার
আইলাইনার পেনসিলের সাহায্যে চোখের উপরের পাতায় আর নীচের পাতায় আউটলাইন করে নিন। চিরাচরিত কালো আর ব্রাউন পেনসিলের বিকল্পে, আইশ্যাডোর রঙের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে লাইনারের রং নির্বাচন করতে পারেন। উপরের পাতার গোড়ার অংশ জুড়ে লাইনারের রেখা টানুন ও শেষ অংশটা একটু মোটা করে স্মাজ করে দিন। শেষ অংশে লাইনার পেনসিলের বদলে ডাস্ট লাইনার ব্যবহার করুন স্মাজিং-এর সুবিধার জন্য।
স্টেপ ৫ – আইশ্যাডো
বড়ো চওড়া ব্রাশের সাহায্যে বোজা চোখের উপর শ্যাডোর পরত লাগান। একটু গাঢ় শেড-টি এরপর ছোটো ব্রাশের সাহায্যে লাগিয়ে নিন। বড়ো ব্রাশ ব্যবহারের সময় বোজা চোখের উপর থেকে রেখা টানুন ভ্রূ’র নীচে পর্যন্ত। ডার্ক শেডের আইশ্যাডো শুধুমাত্র লাইনারের রেখা টানা অংশটুকুতেই সীমিত রাখুন। এবার দুটি শ্যাডোকেই আলতো করে ব্লেন্ড করে দিন। এমনভাবে ব্লেন্ড করুন দুটি শেড, যাতে আইলাইনার আর আইশ্যাডো পৃথকভাবে প্রকট না হয়।
স্টেপ ৬ – মাসকারা
মাসকারা লাগানোর আগে চোখের পাতা কার্ল করে নিন। এর ফলে চোখ বড়ো বড়ো দেখাবে। এরপর মাসকারার ২-৩টি পরত লাগান। পরত যেন কোনও এক জায়গায় জমে না থাকে বরং চোখের উপর সমানভাবে চারিয়ে যায়।
জরুরি টিপস
চোখে স্মোকি লুক দিলে, সর্বাঙ্গীন মেক-আপে একটা আলাদা মাত্রা যোগ হয়। আবার উলটো দিক থেকে ভাবলে স্মোকি লুক-টাকে পারফেক্ট করে তোলার জন্য মেক-আপও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। সবচেয়ে জরুরি ধাপ হল সঠিক পন্থায় ফাউন্ডেশন লাগানো। ঠোঁটের মেক-আপ-এরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ঠোঁটের আউটলাইন করার সময় ফ্ল্যাট টোনড লিপলাইন পেনসিল বা লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লিপস্টিক বা লিপগ্লসের রং পিংক বা ক্যারামেল হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
আইব্রোর জন্য আইব্রো পেনসিলই আদর্শ, তবে স্মোকি লুক-এর ক্ষেত্রে পেনসিলের রং একটু গাঢ় হওয়াই ভালো। চিক বোন আপনার সৌন্দর্যের স্ট্রং পয়েন্ট হতে পারে যদি তাতে রোজ কালারের ব্লাশার লাগান। হেয়ারলাইন অবধি এটা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
স্মোকি লুক-এর জন্য জরুরি টিপস
– এই ধরনের লুক, নাইট পার্টির জন্য আদর্শ।
– স্মোকি লুক-এ গ্লিটার কখনও ব্যবহার করবেন না।
– একসঙ্গে সব শেডগুলি লাগাবেন না, বরং একের পর এক পরত দিয়ে ব্লেন্ড করুন।
– মনে রাখবেন ব্লেন্ড করার সময়, শেড যেন আইব্রো বোন অবধি না পৌঁছোয়।
– চোখের পাতার কাছে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করে, ক্রমশ উপরের দিকে হালকা শেডগুলির পরত দিতে থাকুন।
– স্মোকি লুক সার্থক করতে হলে ঠোঁটে নিউড মেক-আপ করুন।