অধিকাংশ চিত্রতারকা তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও একই পেশায় নিযুক্ত করতে চান। এরমধ্যে কোনও অন্যায় নেই। চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটানোর আগে, অনেকে তাঁদের সন্তানদের গ্রুমিংও করিয়ে রাখেন। এটাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তারকাদের সন্তান হওয়ার কারণে অনেকে রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে আসেন। বিষয়টির মধ্যে আহামরি কিছু নেই। বরং তারকা-সন্তানরা বাড়তি সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও, সবাই কেন খুব বেশি সাফল্য এবং প্রতিষ্ঠা পাননি কিংবা পাচ্ছেন না, তা-ই হতে পারে আলোচনার বিষয়বস্তু।
প্রথমে আসা যাক ঋষি-পুত্র রণবীর কপুর প্রসঙ্গে। রণবীরের প্রথম ছবি ‘সাওরিয়া’ সাফল্য পায়নি বক্স-অফিসে। জমল না তার ছবি ‘রকস্টার’-ও। অবশ্য এর পর তাঁর কেরিয়ারে দাঁড়ি টানা হয়নি। কিন্তু যার সাতকুলের কেউ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত নন কিংবা যার কোনও গডফাদার নেই, তার প্রথম ছবি যদি সাফল্য না পায়, তাহলে সেই নিউ কামারের পক্ষে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া তারকা-পুত্ররা যেমন প্রথমেই বড়ো ব্যানারে অভিনয় করার সুযোগ পান তাদের মা-বাবার সাহায্যে, জেনারেল নিউ কামার-রা সেই সুযোগ পান না বললেই চলে। এমনকী সাধারণ নবাগতদের প্রথম ছবি সফল হওয়া সত্ত্বেও, পরবর্তী সময়ে স্ট্রাগল চালিয়ে যেতে হয় টিকে থাকার জন্য। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পীদের গডফাদার না থাকলেও তারা ঠিকই জায়গা করে নেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অতএব প্রতিভা, পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা-ই হল প্রতিষ্ঠালাভের আসল চাবিকাঠি। তাই সাধারণ শিল্পীই হোক কিংবা তারকা-পুত্র, ওই বিশেষ গুণগুলির অধিকারী হলে তবেই তারা স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে একথা নিশ্চিত।
এবার আসা যাক প্রেমনাথ-পুত্র প্রেমকিষণ প্রসঙ্গে। ‘দুলহন ওহি জো পিয়া মন ভায়ে’ ছিল প্রেমকিষণের প্রথম ছবি এবং ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু ওই সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি প্রেমকিষণ। প্রথম ছবির পর তার আর কোনও ছবি হিট করেনি এবং নিরুপায় হয়ে ছবির জগৎ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। দেব আনন্দের ছেলে সুনীল আনন্দের অবস্থা ছিল আরও করুণ। ‘আনন্দ অউর আনন্দ’ শীর্ষক প্রথম ছবির পরই পিছু হঠতে হয়েছে তাকে। কারণ, ওই ছবিটি একটুও মন ছুঁতে পারেনি দর্শকদের।
রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে কুমার গৌরবের ফিল্মি কেরিয়ারও খুব ভালো নয়। প্রথম ছবি ‘লভ্ স্টোরি’ বক্স অফিসে সাফল্য পেলেও, তারপরের ছবিগুলি ফ্লপ করে। ফলে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং অবশেষে ছবির জগৎ থেকে বিদায় নিতে হয় তাকেও।
রাজ কাপুরের বড়ো ছেলে রণধীর কাপুরের ‘কাল আজ অউর কাল’ ছবি দিয়ে সৌভাগ্যের সূচনা করতে গিয়েও হয়নি। কারণ বহু চেষ্টা করেও পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে পারেননি তিনি। তবে রাজের দ্বিতীয় পুত্র ঋষি কপুরই একমাত্র লাকি ছিলেন। ‘ববি’ শীর্ষক রোমান্টিক ছবি দিয়ে কেরিয়ারে সাফল্যের সূচনা করেছিলেন তিনি। পরে যদিও তাঁর কয়েকটি ছবি ফ্লপ করে কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার সাফল্য ফিরিয়ে আনেন এবং দীর্ঘদিন তিনি রোমান্টিক হিরো হিসাবে জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে সমর্থ হন। রাজের ছোটো ছেলে রাজীব কপুরেরও ‘রাম তেরি গঙ্গা ম্যায়লি’ ছাড়া আর কোনও স্মরণীয় ছবি নেই। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার প্রতিষ্ঠার আগেই ঘরে ফিরতে হয়েছিল তাকে।
তবে তারকা-পুত্র মানেই যে চূড়ান্ত অসফল হয়েছেন এমন নয়, অনেকে সফল হয়েছেন এবং সাফল্য ধরেও রেখেছেন। এঁদের মধ্যে প্রথমে আসি সুনীলপুত্র সঞ্জয় দত্ত প্রসঙ্গে। সঞ্জয়ের প্রথম ছবি ‘রকি’ তেমন সাফল্য না পেলেও, পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি ছবি তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তবে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন ‘মুন্না ভাই’ ছবিটিতে। এই ছবিটির পর তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ঝড়ের গতিতে।
ঋত্বিক রোশনও খুব লাকি। বাবা রাকেশের ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবিতে আত্মপ্রকাশ করা মাত্রই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তারপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘ওমকারা’ এবং ‘পরিণীতা’ ছবি দুটি শর্মিলা-পুত্র সইফ আলি খান-কেও রাতারাতি জনপ্রিয় করেছে এবং সেই জনপ্রিয়তা বজায় রাখার চেষ্টাও করেছেন তিনি। ধর্মেন্দ্র-পুত্র সানি ও ববি দেওলও নিষ্ঠা সহকারে কাজ করে ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। বিগ বি-র (অমিতাভ) ছেলে অভিষেক বচ্চনও বাবা-র সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় অনেকটাই সফল। প্রসঙ্গত ‘গুরু’ ও ‘পা’ ছবির কথা উল্লেখ করাই যায়। সাম্প্রতিক সময়ে আর-এক প্রতিভাবান তারকা-পুত্রের নাম অবশ্যই করা উচিত। তিনি জাভেদ আখতারের ছেলে ফারহান আখতার। ‘রক অন’ বা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র পরিচালক হিসেবে বেশ কদর পেয়েছেন তিনি। ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’-এ তার অভিনয় মনে রাখার মতো।
আসলে মা-বাবার হাত ধরে ছবির জগতে এসেছেন অনেকেই কিন্তু সাফল্য পেয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন। যেমন অনুপম খেরের ছেলে সিকন্দর, মিঠুনের ছেলে মিমো চক্রবর্তী, জ্যাকি শ্রফের ছেলে টাইগার প্রমুখ তেমন সাফল্য না পেয়ে, ছবির জগৎ থেকে একরকম বিদায় নিয়েছেন বললেই চলে। অতএব বলা যায়, যিনি, যাঁর হাত ধরেই ছবির জগতে আসুন না কেন, প্রতিভা এবং নিষ্ঠা ছাড়া এ জগতে তার ঠাঁই নেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা উচিত, সাম্প্রতিক সময়ের বাণিজ্য-সফল নায়ক শাহিদ কপুরের নাম। পঙ্কজ কাপুরের পুত্র হিসেবে নয়, নিজের প্রতিভার জোরেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে।