রোজের প্রয়োজনীয় বাসন বলতে আগে ছিল সেই অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ইত্যাদির তৈরি বাসন। স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন এখন অবসোলেট। কাচের বাসন এখন ইন। রোজের ব্যবহারেই বলুন অথবা পার্টি-শার্টি, সব জায়গাতেই কাচের বাসনের মিষ্টি টুংটাং শব্দের প্রতিধবনি। Modern utensils -এ রান্না করা খাবার রাখা থেকে শুরু করে, সার্ভ করা, অতিথি এলে তাকে খেতে দেওয়া –সবকিছুর জন্যেই ব্যবহার হচ্ছে কাচের বাসন। মাইক্রো-আভেনের জন্যে তৈরি হয়ে গেছে বিশেষ ধরনের কাচের তৈরি বাসন। সুতরাং সুন্দর ডিজাইন, রঙে টেকসই, ফ্যান্সি কাচের বাসন অর্থাৎ Useful utensils এখন চাহিদার শীর্ষে।
আগে কাচের বাসন হতো না, তা-নয়। তখনও কাচের ব্যবহার ছিল কিন্তু বাসনের ভ্যারাইটি ছিল কম। সেই আকারে চ্যাপটা গোল প্লেট, ছোটো গোল বাটি। বড়ো প্লেট বা বাটি হলেও একই গোল শেপ, কোনও তারতম্য চোখে পড়ত না। সার্ভিং বোলস-ও দোকানে গোলাকৃতি ছাড়া পাওয়া যেত না। বড়ো জোর রাইস প্লেট মাঝেমধ্যে ওভাল শেপে দেখতে পাওয়া যেত। এখন বাসনের আকারেও এসেছে নানান বৈচিত্র্য৷
রঙের জগতে প্রবেশ
রঙের কথাই যখন উঠল তখন বলা যেতে পারে, এখন টেবলওয়্যার এবং কাচের বাসনের পুরোনো ধারণা বদলে দেওয়ার মূলে রয়েছে রঙের বাহারি রূপ। সাদা কাচের পাত্রের বদলে, বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ব্রাইট কালারস-এর সমারোহ। লাল, অরেঞ্জ, ব্লু, সবুজ, কালো ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের বাহারি ডিজাইনের ক্রকারি এখন সবজায়গায় অ্যাভেলেবল। এগুলি শুধুমাত্র যে, বাড়িতে খাবার টেবিলের শোভা বাড়াবে তা-নয়, যে-কোনও উৎসব অনুষ্ঠানেও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে।
কাচের বাসনের ডিজাইনেও একটা বড়োসড়ো পরিবর্তন হয়েছে। টিপিকাল ফুল, পাতা, বর্ডারের বদলে নানারকম মডার্ন আর্টের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এমনকী আর্টিস্টদের আঁকাও আজকাল ডিজাইনার ক্রকারির শোভাবর্ধন করছে।
কাচের গেলাসের আগে স্ট্যানডার্ড সাইজ ছিল ২০০ মিলি। এখন বিভিন্ন আকার ডিজাইন এবং বিভিন্নরকম কাচে তৈরি গেলাস পাওয়া যায়। আগে কাচ বলতে সি-থ্রু কাচই ব্যবহার হতো কিন্তু এখন বোন-চায়নার গ্লাস এবং একেবারে কাচের মতো দেখতে প্লাস্টিকের গ্লাসও পাওয়া যায়। এগুলি দেখতেও সুন্দর এবং স্টেনপ্রুফ। সাইজ এবং আকারও ভিন্ন। পাতলা, লম্বা, মোটা, স্কোয়্যার, ছোটো -সব সাইজেরই গেলাস রয়েছে তবে উৎসব অনুষ্ঠানে ছোটো গেলাসই ব্যবহার করা ভালো কারণ জল এবং ঠান্ডা পানীয় নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচবে।
চায়ের কাপ এবং কফি মাগ্-এর ভ্যারাইটি দেখে দোকানে তাক লেগে যায়। দোকানে গিয়ে এত ধরনের ডিজাইন দেখে কনফিউজড্ হতে হয় যে, কোনটা কিনলে ভালো হবে। প্রত্যেকটাই পছন্দসই।
কাচের বাসনপত্র কেনার সময় কয়েকটি বিষয় মনে রাখা উচিত–
- কাচের বাসন কেনার সময় সবসময় খেয়াল রাখবেন, কোন ধরনের ডিজাইন বাজারে চলছে। সেইমতো বাসন পছন্দ করুন।
- সময়ের চাহিদা আনুসারে নানা ধরনের বাসন মার্কেটে পাওয়া যায়। এখন মাইক্রো-আভেন, ডিশওয়াশার প্রুফ বাসনের সঙ্গে সঙ্গে একইবাসনে রান্না করা ও সার্ভ করার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে আলাদা করে অনেক বাসন কেনার ঝামেলা থাকে না। একটাই বাসনে অনেকগুলো কাজ একসঙ্গেই করতে পারা যায়।
- বাসন কেনার আগে দেখে নেওয়া দরকার হয় বাসনটা কতটা টেকসই। বাড়িতে বাচ্চার সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে কাচ অথবা বোনচায়না-র বাসন না কিনে প্লাস্টিক অথবা মেলামাইনের আনব্রেকেবল বাসনই কেনা উচিত। এগুলি ব্যবহার করাও যেমন সহজ তেমনি পরিষ্কার করাও কোনও মুশকিল কাজ নয়। সহজে ভাঙারও কোনও ভয় থাকে না।
- বাসন যদি স্টেনপ্রুফ না হয়, তাহলে কেনারই কোনও অর্থ থাকে না। বাসনপত্রে দাগ অত্যন্ত খারাপ লাগে দেখতে। স্টেনপ্রুফ বাসন বহুদিন পর্যন্ত নতুন থাকে যেহেতু এতে কোনওরকম দাগ ধরে না। কাচ এবং সেরামিক্স-এর ক্রকারি-তে দাগ ধরার ভয় না থাকলেও প্লাস্টিক এবং মেলামাইনের বাসন যদি অপরিষ্কার অবস্থায় ফেলে রাখা হয়, তাহলে হলুদের দাগ ধরে যায় যা কখনওই ওঠানো সম্ভব হয় না। এছাড়াও এতে খুব তাড়াতাড়ি স্ক্র্যাচ-মার্কসও পড়ে।
- বাজারে এখন স্টেনপ্রুফ বাসন সহজেই সবজায়গায় পাওয়া যায়। যদিও এগুলির দাম সাধারণ বাসনের তুলনায় একটু বেশি তবুও এগুলির ডিউরেবিলিটি প্রচণ্ড। বহু বছরের ব্যবহারের পরেও বাসনের ঔজ্জ্বল্য এতটুকুও ম্লান হয় না।
- বাড়ির দৈনিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই প্রয়োজনমতো নির্বাচন করুন সঠিক বাসন সঠিক কাজের জন্য।