ভারতীয় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেড়েছে। উন্নত দেশগুলিতে তামাক সেবন স্থিতিশীল বা কিছুটা হ্রাস পেলেও, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর নতুন ভাবে লক্ষ লক্ষ লোক মারাত্মকভাবে আসক্ত হওয়ার ফলে, ধূমপানের বিষয়টি কপালে ভাঁজ ফেলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩.৪% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধূমপায়ীদের সংখ্যা।
এটা প্রত্যেকেই জানেন যে, ধূমপান করলে হৃদরোগ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে। তবে, ধূমপানের ফলে চোখের বিভিন্ন রোগও হতে পারে। ধূমপান বা তামাক অক্সিডেটিভ ক্ষতি করে এবং রক্তনালী সংকুচিত করে ক্ষতি করে। যে-কোনও ভাবে সিগারেট, বিড়ি এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ধূমপান এড়িয়ে চলা বা ত্যাগ করার পদক্ষেপ নেওয়া, দৃষ্টিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমায়। টিনএজ বা অল্প বয়সিরা দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপানের ফলে,তাদের মস্তিষ্কের উর্বরতা যেমন কমছে, ঠিক তেমন-ই অনেক রোগের শিকার হচ্ছে। হৃদরোগ এবং ফুস্ফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ছাড়াও, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করে ধূমপান। আর এই ধূমপান শুধুমাত্র ধূমপায়ীর ক্ষতি করে না, আশপাশের অন্যান্য লোকেদের উপরও এর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে।
ধূমপায়ীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিগুলি হল :
- এজ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (AMD): অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের AMD (রেটিনা পাতলা হয়ে যাওয়া এবং দুর্বলতা) হওয়ার সম্ভাবনা ৩ থেকে ৪ গুন বেশি
- গ্রেভস ডিজিজ (থাইরয়েড অপথালমোপ্যাথি): থাইরয়েড গ্রন্থির একটি অটোইমিউন রোগ এবং ধূমপান একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ। ধূমপান ত্যাগ করা চিকিৎসার প্রথম ধাপগুলির মধ্যে একটি
- ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: ধূমপানের ফলে ডায়াবেটিসের জটিলতা আরও খারাপ হয় যার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং ম্যাকুলোপ্যাথি
- ড্রাই আই সিনড্রোম: ধূমপায়ীদের মধ্যে অধূমপায়ীদের তুলনায় দ্বিগুন বেশি সাধারণ। ধূমপায়ীরা যারা কন্টাক্ট লেন্স পরেন, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি চারগুন বেড়ে যায়
- ছানি: অধূমপায়ীদের তুলনায় ভারী ধূমপায়ীদের প্রথম দিকে ছানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
- গ্লুকোমা: বয়স্ক ধূমপায়ীদের চোখের চাপ বৃদ্ধি এবং গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে
- অপটিক স্নায়ু সমস্যা: ধূমপান অপটিক স্নায়ুতে রক্ত সরবরাহ হ্রাস করে, যা চোখকে মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এরফলে চোখে কম দেখা, এমনকি অন্ধত্বও হতে পারে
- ইউভাইটিস: ইউভাইটিস (চোখের ভিতরের স্তরের প্রদাহ) অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
- টেম্পোরারি ইস্কেমিক ডিজিজ (TIA): অস্থায়ী দৃষ্টিশক্তি হ্রাস (কয়েক সেকেন্ড থেকে মিনিট স্থায়ী) প্রায়ই ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণের কারণে হয়। এটি সাধারণত টিআইএ বা ‘মিনি-স্ট্রোক’ নামে পরিচিত
- গর্ভাবস্থা এবং ধূমপান: গর্ভাবস্থায় ধূমপান শিশুর অকাল জন্মের সঙ্গে যুক্ত এবং এইভাবে অকাল প্রসবের ফলে (শিশুর রেটিনার অসম্পূর্ণ বিকাশ) রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বেশি বেড়ে যায়
*( দুই চিকিৎসক-ই ‘দিশা আই হসপিটালস’-এর চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ )