মেয়েদের একচ্ছত্র আধিপত্যের জায়গা হল বাড়ির রান্নাঘর। সব গৃহিণীই রসনায় পরিতৃপ্ত রাখতে চান পুরো পরিবারকে। সময়ের সীমিত পরিসরে আজ পুরুষরাও এগিয়ে এসেছেন সাহায্যের হাত বাড়াতে। দৈনন্দিন জীবনে রান্নাঘরের টুকিটাকি বিষয়ের Kitchen Management খেয়াল রাখতে পারলেই সহজ হয়ে যায় রন্ধন সংক্রান্ত অনেক কাজই। অল্প সময়ে পরিপাটি করে টাটকা খাবার পরিবেশন এবং তার সঙ্গে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা রান্নাঘরে নতুন স্বাদের ছোঁয়া আনা নিঃসন্দেহে একজন সু-গৃহিণীর কাজ। এরই কিছু টিপস রইল আপনাদের সাহায্যার্থে।

খাবার জিনিস সবসময় টাটকা রাখুন

–    সবজি কাটার জন্য কাঠের চপার বোর্ড ব্যবহার করা উচিত। প্লাস্টিকের ব্যবহার কখনও করবেন না। প্লাস্টিকের উপর সবজি কাটলে প্লাস্টিকের টুকরো সবজির সঙ্গে খাবারে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

–    বেশ কয়েকদিন পনির টাটকা রাখার জন্য ওটি ব্লটিং পেপারে মুড়ে ফ্রিজারে রেখে দিন।

–    সবজি কিছুদিন টাটকা রাখার জন্য খবরের কাগজে মুড়িয়ে ফ্রিজে রেখে দিন।

–    কাঁচা সবজি যদি মনে হয় শুকিয়ে গেছে তাহলে ঠাণ্ডা জলে অল্প লেবুর রস চিপে, কাঁচা সবজিগুলি ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তুলে নিলেই দেখবেন অনেকটা ফ্রেশ হয়ে গেছে।

–    বাড়িতে ফ্রিজ না থাকলে দুধ রাখা মুশকিল। কিন্তু আপনি যদি সোডিয়াম বাইকার্বনেট দিয়ে দুধটা ফুটিয়ে রাখেন তাহলে দুধ বাইরে রাখলেও কাটবে না।

–    বিস্কুট ফ্রেশ রাখার জন্য, যে-কৌটোতে বিস্কুট রাখবেন তার ভিতরে নীচের অংশে ব্লটিং পেপার লাগিয়ে রাখুন। বিস্কুট ফ্রেশ ও মুচমুচে থাকবে।

–    কড়াইশুঁটি টাটকা রাখার জন্য, খোসা ছাড়িয়ে দানাগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগে করে মুখটা বেঁধে ফ্রিজারে রাখুন। বহুদিন পর্যন্ত টাটকা থাকবে।

–    কাঁচা ফল, পাকাবার জন্য খবরের কাগজে মুড়ে ২-৩ দিনের জন্য কোনও গরম জায়গায় রেখে দিন। ফলটি পেকেও যাবে অথচ টাটকাও থাকবে।

স্মার্ট Kitchen Management ( রান্নার পদ্ধতি )-এ সময় বাঁচান

–    রায়তায় নতুন স্বাদ আনার জন্য এতে ক্রিম মেশাতে পারেন।

–    রুটি নরম করার জন্য, আটা মাখার সময় ভাতের মাড় মেশান।

–    ভাত ঝরঝরে করার জন্যে, রান্নার সময় কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ফুটন্ত চালে মিশিয়ে দিন।

–    পনির না ভেজে, আপনি প্রথমে গরমজলে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রেখে তারপর তুলে নিন। তারপর টুকরো করে কেটে সবজিতে দিন। ভাজার মতোই সুস্বাদু লাগবে। এছাড়া সবজিতেও তেল অল্প লাগবে।

–    অল্প সময়ে সুস্বাদু ভাত রান্না করার জন্য, ফুটন্ত ভাতের জলে অল্প শুকনো পুদিনাপাতা দিন। এতে ভাত দেখতেও ভালো লাগবে এবং সুস্বাদুও হবে।

–    বাসি সিঙাড়া টাটকা পরিবেশন করতে হলে, ফ্রিজারে রেখে দিন। পরিবেশনের ২ ঘণ্টা আগে বার করে রাখুন ফ্রিজার থেকে। তারপর কম টেম্পারেচারে মাইক্রোওয়েভে বেক করে নিন। সিঙাড়া দেখতে এবং স্বাদেও টাটকা মনে হবে।

–    গরমজলে ৫-১০ মিনিট লেবু ভিজিয়ে রাখলে, চিপে রস বার করতে অসুবিধা হবে না।

–    আলু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করার জন্য, রান্না করার ১০ মিনিট আগে থেকে জলে ভিজিয়ে রাখুন।

–    বেশি পেকে যাওয়া টম্যাটো ফ্রেশ করবার জন্য রাতভর ঠান্ডা জলে নুন মিশিয়ে রেখে দিন। সকালে দেখবেন টম্যাটো ফ্রেশ লাগবে দেখতে।

–    ডালে জল বেশি হয়ে গেলে ওটা ফেলে দেবেন না। অন্যান্য সবজির গ্রেভি বানাবার জন্য ডালের জল ব্যবহার করে নিন।

–    মশলাদার সবজি তৈরি করবার জন্য, সবজিতে আচারের তেল দিতে পারেন। আচারের তেল দিয়ে ফোড়ন দিন।

–    ড্রাইফ্রুটস সহজে কাটবার জন্যে আধঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। গরমজলে ছুরিটা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। তারপর গরম ছুরি দিয়ে ড্রাইফ্রুটসগুলি কাটুন।

–    রসুনের খোসা ছাড়াবার সবথেকে সোজা উপায় হল, রসুনকে ১০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। সহজেই খোসা ছেড়ে যাবে।

–    ডিম সেদ্ধ করার আগে ঠান্ডা জলে নুন মিশিয়ে আধঘণ্টা ডিমটা ভিজিয়ে রাখুন। এর ফলে ডিম সেদ্ধ হওয়ার পর সহজেই ডিমের খোসা ছাড়ানো যাবে।

–    অল্প জাফরান, পরিমাণে অনেকটা দুধে ব্যবহার করতে হলে প্রথমে জাফরানটা অল্প আঁচে গরম করে নিন। এরপর ওটা পুরো দুধে মিশিয়ে নিলে, পুরো দুধটাতেই জাফরানের গন্ধ হবে। মাইক্রোওয়েভে বসিয়েও জাফরান গরম করে নিতে পারেন।

কিচেন ইন্টিরিয়র টিপস

–    রান্নাঘরে সবসময় জলের প্রয়োজন বেশি হয়। এইজন্য রান্নাঘরের ফ্লোরিং, রাফ টাইলস দিয়ে করালে পা পিছলানোর ভয় থাকবে না।

–    কিচেনে, ডিজাইনার আলোর বদলে অপেক্ষাকৃত বেশি আলো দেয় এমন লাইট ব্যবহার করুন। কাজ করতে সুবিধা হবে।

–    বৈদ্যুতিক আলোর বিল কম করার জন্য সিএফএল আলো ব্যবহার করুন। এটি জোরদার আলো দেয় উপরন্তু ইলেকট্রিকের বিলের অঙ্কও কম হবে।

–    কিচেনে খালি জায়গার প্রয়োজন সবথেকে বেশি। যদি কিচেন ছোটো হয় তাহলে অনাবশ্যক জিনিসে জায়গা না ভরিয়ে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই রান্নাঘর সাজিয়ে তুলুন।

–    বাড়িতে বাচ্চারা যদি ছোটো হয়, তাহলে রান্নাঘরে কাচের বাসনের বদলে স্টিলের বাসন ব্যবহার করলেই ভালো হয়।

–    কিচেনে জায়গা কম হলে, স্টোর করবার জন্যে এমন কন্টেনার ব্যবহার করুন যাতে ১টার বেশি জিনিস রাখতে পারবেন। আলাদা আলাদা জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা কন্টেনার ব্যবহার না করতে হলে রান্নাঘরে জায়গারও অনেকখানি সাশ্রয় হবে।

কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স ও বাসনপত্র রাখুন ঝকঝকে

–    তামার বাসন অথবা অন্যান্য কিচেন অ্যাক্সেসরিজ ঝকঝকে করে তোলার জন্য শুকনো হলুদ পাউডার এবং নুন একসঙ্গে মিশিয়ে বাসনের উপর রগড়ে নিন। এবার হলুদ মেশানো জল দিয়ে ওগুলি ধুয়ে ফেলুন। বাসন ঝকঝক করবে।

–    মিক্সার অথবা গ্রাইন্ডারে কিছু গুঁড়ো করতে হলে ওর ভিতর প্লাস্টিক-এর চামচই ব্যবহার করা উচিত।

–    রান্নাঘরের কোণগুলি পরিষ্কার করতে হলে, হালকা গরমজলে বোরিক পাউডার মিশিয়ে ওই জায়গায় ছড়িয়ে রাখুন। খানিকক্ষণ রেখে তারপর পরিষ্কার করে নিন।

–    মিক্সার অথবা গ্রাইন্ডারের ব্লেডের ধার কম হয়ে গেলে ওর মধ্যে খাবার নুন দিয়ে একবার চালিয়ে নিন। ব্লেডে আবার ধার বেড়ে যাবে।

–    মিক্সার ও গ্রাইন্ডার পরিষ্কার করার জন্য নাইলনের ব্রাশ ব্যবহার করুন।

–    বাসন পরিষ্কার এবং ঝকঝকে রাখার জন্য ঈষদুষ্ণ জলে সামান্য ভিনিগার ঢেলে বাসনগুলি ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ বাদে জল থেকে বার করে ভালো করে ধুয়ে নিলেই দেখবেন বাসন ঝকঝক করছে এবং কোনও গন্ধও থাকবে না।

–    কাচের বাসন পরিষ্কার রাখার জন্য হালকা গরমজলে নুন মিশিয়ে, কাচের বাসন ওর মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ ডোবাবার পর তুলে নিয়ে পরিষ্কার জলে ধুয়ে ফেলুন। বাসন পরিষ্কার হয়ে যাবে।

–    মাইক্রোআভেন-এর ভিতর হালকা ভিজে কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। জল দিয়ে ভিতরটা ধোবেন না।

–    পরিষ্কার পানীয় জলের জন্য মাঝেমধ্যেই ফিলটার পরিষ্কার করান।

–    রুম ফ্লেশনার ফ্রিজের ভিতর স্প্রে করবেন না তাতে খাবারে গন্ধ চলে আসবে। ফ্রিজ পরিষ্কার রাখার জন্য হালকা গরম জলে খাবার সোডা মিশিয়ে নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে মুছে নিন। ভিতরটা ঝকঝক করবে এবং দুর্গন্ধও দূর হবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...