জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অবশ্যই বিয়ে। কারণ, জন্ম থেকে মৃত্যু এই সফরপথে সবচেয়ে বেশি সময় জুড়ে থাকে দাম্পত্য জীবনযাপন। সাধারণত, শিক্ষাপর্বের পরে কর্মজীবনের নিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার পর, বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন এই প্রজন্মের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। আর যেহেতু পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটা সরু সুতোর উপর অবস্থান করে দাম্পত্য, তাই ভারসাম্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ভারসাম্য কতটা বজায় থাকবে কিংবা আদৌ থাকবে কিনা তা স্বামী-স্ত্রীর স্বভাব চরিত্র, মনন-মানসিকতা এবং আরও অনেক বিষয়ে উপর নির্ভর করবে। কোনও মানুষই হয়তো ১০০ শতাংশ পারফেক্ট হন না এটাই বাস্তব। কিন্তু ভালোর থেকে খারাপের পাল্লা ভারী হলেই বিপত্তি ঘটার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।
মনে রাখবেন, কোনও দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া মোটেই সুখকর নয়। কারণ, যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের সঙ্গে নানা ভাবে জড়িয়ে থাকেন পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রা। আর যদি সন্তান জন্মলাভের পরে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নির্দোষ সন্তান। কাজেই, বিচ্ছেদে শুধু মন ভাঙে না, নানা ভাবে অপূরণীয় ক্ষতি হয়, এমনকী অনেকসময় জীবনহানিও ঘটে যায়।
একটা সময় ছিল যখন সন্তানের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মা-বাবার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র তরুণ-তরুণীরা এখন বেশিরভাগই মা-বাবার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে বাধ্য নন সবসময়। বরং, সিংহভাগ তরুণ-তরুণী বিয়ের ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেন এখন। কিন্তু যৌবনের উন্মাদনা, অতিরিক্ত আবেগ, বোধবুদ্ধির অপূর্ণতা, ভালোমন্দের তফাত ঠিক মতো বুঝতে না পারা, অদূরদর্শিতা কিংবা হঠকারিতা প্রভৃতি কারণে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অনেকেই। আর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে যদি একবার কেউ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, তাহলে সেই ভুলের জন্য আজীবন মাশুল গুনতে হয় তাকে।
অনেকে ভেবে নেন, প্রেমের বিয়েতে পরস্পরের সম্পর্কে ভালো ভাবে জানা হয়ে যায়, তাই বিয়ের পরে বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা কম। না, সবসময় এই ভাবনা সঠিক হয় না। কারণ, প্রেমের বিয়েতে অতিরিক্ত আবেগ থাকে। আর অতিরিক্ত আবেগ বাস্তব থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এর ফলে, জেগে ঘুমোন অনেকে। অর্থাৎ, হবু জীবনসঙ্গীর দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, তা চোখে পড়ে না। এ অনেকটা ওই জলে পোঁতা বাঁকা কাঠিকে সোজা দেখতে লাগার মতো বিষয়। অনেকে তো আবার শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য কিংবা ফিগার দেখে আকৃষ্ট হয়ে প্রেমে পড়েন এবং বিয়ে করে নেন। কিন্তু আপাতসুন্দর বাঘসিংহ যখন দাঁতনখ বসিয়ে দেয় শরীরে, তখন সেই হিংস্র রূপ দেখে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে অনুশোচনা করে কোনও সুফল পাওয়া যায় না। অতএব, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আর বিয়ের আগে অর্থাৎ কোর্টশিপ পর্বে জীবনসঙ্গীর সম্পর্কে কীভাবে এবং কোন কোন বিষয়ে জানলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হবে, জেনে নিন সেই বিষয়ে—
সাক্ষাৎপর্ব
প্রাথমিক পছন্দ এবং বিয়ের কথা এগোনোর পর, দুজনের একান্ত সাক্ষাতের প্রযোজনীয়তার কথা জানান হবু সঙ্গীকে। তিনি রাজি থাকলে কোনও উদ্যান কিংবা রেস্তোরাঁয় দেখা করুন। আর এখান থেকেই শুরু করুন অবজার্ভেশন। যেমন সঠিক সময়ে তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য পৌঁছোচ্ছেন কিনা, অর্থাৎ তিনি পাংচুয়াল কিনা কিংবা কথা রাখার ক্ষেত্রে কতটা তিনি সিরিয়াস ইত্যাদি।
এরপর নজর রাখুন দেখা করার পর তার প্রতিক্রিয়া কেমন। তিনি আপনার জন্য কোনও উপহার এনেছেন কিনা প্রথম একান্ত সাক্ষাতে এটা দেখা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই আপনি যদি তাকে কোনও উপহার দেন তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি কী ভমিকা নিচ্ছেন, এটা দেখাও জরুরি। তিনি কেমন পোশাক পরেছেন কিংবা আপনার পরা পোশাকের বিষয়ে কোনও তারিফ বা মন্তব্য করছেন কিনা তাও দেখা উচিত। অর্থাৎ, এর থেকে কিছুটা আন্দাজ করা যাবে, তিনি কতটা সিনসিয়ার আপনার বিষয়ে এরপর কথা বলা কিংবা আচার আচরণে তিনি বিনম্রভাব দেখাচ্ছেন কিনা, সেটাও পরখ করুন। এমনকী, রেস্তোরাঁয় খাবার অর্ডার করার আগে খাবারের বিষয়ে তিনি আপনার পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কিনা কিংবা লক্ষ্য রাখুন খাবারের দাম মেটানোর সময় তিনি কতটা আন্তরিক।
আসলে এইসব ছোটো ছোটো বিষয় থেকে একজনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা আন্দাজ করা যায়। তবে একবার মুখোমুখি হওয়ার পরই সবকিছু জেনেবুঝে গেছেন এমন ভেবে নেবেন না। কাউকে ঠিকমতো বুঝতে হলে অন্তত পাঁচ থেকে সাতবার একসঙ্গে কিছুটা সময় ব্যয় করা অত্যন্ত জরুরি বিয়ের আগে। কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা বিয়ের আগে জানতে বুঝতে হলে পাঁচ-সাতবার দেখা করে কথা বলা প্রযোজন। কেন-না, এক অপরিচিত মানুষকে প্রথম একান্ত সাক্ষাতে সবকিছু জিজ্ঞেস করা যায় না কিংবা শোভনীয়ও নয়। যাইহোক, এবার জেনে নিন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোন কোন বিষয়ে জেনে নেবেন হবু সঙ্গীর থেকে কিংবা খোঁজখবর নেবেন তার সম্পর্কে।