হবু সঙ্গী যদি তার মান্থলি উপর্জনের প্রমাণ নিজে থেকে দেন তাহলে ভালো, নয়তো একটা অন্য পথ বেছে নিন। যদি আপনি নিজে উপার্জন করেন তাহলে আপনার উপার্জনের প্রমাণ হবু সঙ্গীকে দেখান। আর এরপর তার কী প্রতিক্রিয়া দেখুন। আসলে, জীবনের ভালোমন্দের বিষয়টি যেহেতু টাকাপয়সার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল, তাই উপার্জনের পরিমাণ জেনে নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে কিছুটা বাস্তববাদী হলে ভবিষ্যতে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
অবশ্য শুধু উপার্জনের পরিমাণই নয়, কীভাবে বিয়ের খরচ মেটাবেন কিংবা বিবাহ পরবর্তী সময়ে কীভাবে দুজনে মিলে আর্থিক পরিস্থিতি সামলাবেন, সেই বিষয়ে আলোচনা করে রাখুন। এতে হবু জীবনসঙ্গীর মানসিকতার অনেকটাই আন্দাজ করতে পারবেন। তবে সাক্ষাত্পর্বের শুরুতেই টাকাপয়সা নিয়ে আলোচনা না করে, প্রথমে ছোটোবেলার কথা বলে কিংবা নানারকম মজার অভিজ্ঞতার কথা বলে জড়তা কাটিয়ে উঠুন। এরপর বন্ধুত্ব বাড়লে প্রযোজনে উভয়ে কর্মক্ষেত্রে দেখা করতে পারেন। এতে পরস্পরের কর্মজগত সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে এবং ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। আর পরিস্থিতি বুঝে সাংসারিক খরচ এবং সঞ্চয়ে বিষয়ে আলোচনা করে রাখুন।
পরিবার ও বাসস্থান
জীবনের বেশিরভাগ সময়টা যেখানে এবং যাদের সঙ্গে কাটাতে হবে, সেই বিষয়ে বিয়ের আগে সবকিছু জেনে রাখা ভালো। অর্থাত্ স্থাযী বাসস্থান আছে কিনা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কেমন, এগুলো দেখে নেওয়া জরুরি। অনেকে ভাড়াবাড়িতে কিংবা অফিস কোয়ার্টারে বসবাস করেন। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে স্থাযী বাসস্থানের কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা জেনে রাখা আবশ্যক। শুধু তাই নয়, অস্থাযী বাসস্থানে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, তাও ভেবে দেখা উচিত বিয়ের আগেই। আর হবু সঙ্গী যদি অনাবাসী ভারতীয় হন, তাহলে বিয়ের পর যেখানে থাকতে হবে সেই পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম জেনেবুঝে নেওয়া মঙ্গলজনক।
পরস্পরের চাহিদা
চাহিদা বা চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি দাম্পত্য জীবনে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই বিষয়টিতে ভারসাম্য না থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। আয় বুঝে যদি ব্যয় না করা হয়, অর্থাৎ চাহিদা মেটাতে গিয়ে যদি লাগামছাড়া ব্যয় হয় তাহলে অশান্তি সৃষ্টি হতে বাধ্য।
অবশ্য শুধু আর্থিক চাহিদাই নয়, মানসিক এবং শারীরিক চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও দাম্পত্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কেউ হয়তো একটু বেশি ইমোশনাল, তাই তিনি সবকিছু কিছুটা আবেগ দিয়ে বিচার করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অন্যজনের যদি একফোঁটাও আবেগ না থাকে তাহলে তিনি সঙ্গীকে খুশি করতে পারবেন না। কেউ হয়তো খাওয়াদাওয়ার অপরিহার্যতার মতো শারীরিক সম্পর্ককেও সমান গুরুত্ব দেন। কিন্তু সেই শরীরি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যজনের যদি অতিরিক্ত অনীহা থাকে তাহলে একসময় ঝামেলা বাধতে বাধ্য। কাজেই, শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনা করে রাখা উচিত।
অনেকে তো আবার বিয়ের আগে হবু সঙ্গীর শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টিও যাচাই করে নেন। কারণ অনেক ভালো ফিগারের সঙ্গীও শারীরিক সুখ দিতে অক্ষম থাকেন নানা কারণে। অনেকে আবার উভকামীও হন, যা জীবনসঙ্গীর কাছে যন্ত্রণাদায়কও হতে পারে। তাই এই বিষয়ে যাচাই করে রাখা ভালো।
সেইসঙ্গে, বিয়ের আগের ভাঙা প্রেম কিংবা কোনও শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকলে তা ভুলে গিয়ে হবু সঙ্গীকে আপন করে নিয়ে তার চাহিদা পূরণ করতে পারবেন কিনা তাও ভেবে দেখা উচিত। পরস্পরের সখ-আহ্লাদ পূরণ কিংবা প্রতিভা বিকাশের চাহিদা পূরণ করার বিষয়ে আগাম আলোচনা করে রাখা উচিত।
কন্যাসন্তান হলে খুশি থাকবেন কিনা সঙ্গী, তাও আগে থেকে জেনেবুঝে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এমনকী খাওয়া শোওয়া এবং বেড়াতে যাওয়ার বিষয়ে পরস্পরের পছন্দ এবং ইচ্ছের কথা আলোচনা করে রাখা ভালো। কে কেমন খাবার পছন্দ করেন, কতটা সময় বিশ্রাম নেন এই বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু হনিমুনে বাড়ির বাইরে বেড়াতে যাওয়াই নয়, সারাজীবন পরস্পরের বেড়ানোর চাহিদা একইরকম না থাকলেও অশান্তি তৈরি হতে পারে।
বন্ধুবান্ধব নিয়ে হইচই করার ইচ্ছেও যদি উভয়ে না থাকে, তাহলেও দাম্পত্য সুখের হবে না। কিংবা অতিরিক্ত নেশাখোর সঙ্গীকেও মেনে নিতে পারেন না অনেকে। অতএব, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তারপর বিয়ে করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নিন। কারও শপিং-এর চাহিদা বেশি থাকে এবং সেই চাহিদা যদি সঙ্গী পূরণ করতে না পারেন তাহলেও দাম্পত্য অশান্তি শুরু হয়ে যেতে পারে। অতএব, পরস্পরের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য থাকবে কিনা কিংবা তা পূরণ না হলেও মেনে নেবেন কিনা সেই বিষয়ে ভেবে তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
মোটকথা, দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে হলে বিয়ের আগে পরস্পরকে যতটা জেনেবুঝে নেওয়া দরকার, তা করতেই হবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হবু জীবনসঙ্গী যদি বিদেশে বসবাসকারী হন, তাহলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন। খোঁজখবর নিয়ে যতটা সম্ভব দেখে নিন, তার আর কোনও বিয়ে আছে কিনা। কারণ, বিদেশি সঙ্গী পাওয়ার লোভে প্রতারিত হওয়া কাম্য নয়।