দোকানের প্রায় দু’ডজন শাড়ি নামিয়ে ফেলেছে সুমনা। প্রত্যেকটি শাড়ি-ই পছন্দসই। তাই কনফিউশনটা আরও বেশি। দোকানের মেয়েটিও ধৈর্য ধরে একটার পর একটা শাড়ি দেখিয়ে চলেছে। অস্থিরতা চেপে রেখেই, সুমনা সেলসের মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে নিল, এই বছরে নতুন কী শাড়ি উঠেছে? ‘দিদি ফ্যান্সি শাড়ির মধ্যে এবারে ইয়ং মেয়েদের হট্ ফেভারিট সিল্ক এবং জর্জেট। এছাড়াও শিফন, নেট, বাঁধনির উপর গোটা ওয়ার্ক, লহরিয়া, ঘটচোলা, মটকা, লিনেন, কটন শাড়ি তো রয়েইছে। আর আছে সুতির শাড়ি।যেটা খুশি বেছে নিন, মাথায় বেল বা জুঁই ফুলের মালার সঙ্গে আপনাকে বেশ মানাবে।’ এরপর সুমনা ব্যাগভর্তি শাড়ি নিয়ে দোকান থেকে বেরল। অবশ্য শুধু সুমনা-ই নয়,শাড়ি কিনতে গিয়ে এমনটা করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু যদি শাড়ি সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান সঞ্চয় করে কেনাকাটা করতে যান,তাহলে আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না।

নতুন চাহিদা

বাংলার টাঙ্গাইল এবং বালুচরী শাড়িতে এখন নতুন চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশী ঢাকাইয়ের প্রচণ্ড ক্রেজ বরাবরই, এখন ওই ধরনের কাজ টাঙাইলের উপরেও প্রাধান্য পাচ্ছে।

চান্দেরি শাড়ি সবসময়ই সকলের হট্ ফেভারিট কারণ এটি খুব হালকা শাড়ি এবং পরেও আরাম। এছাড়া সিল্কের চাহিদা সারা বছর ধরেই রয়েছে। বাটিকে সিল্ক, আসাম সিল্ক, কাঁথা স্টিচের সিল্ক, ভাগলপুরী সিল্ক, মটকা, কোসা, ঢাকাই জামদানী, নওভারি সিল্ক, পচমপল্লী, বোমকাই, পৈঠানী ইত্যাদি সব শাড়িরই চাহিদা বাড়ে শারদোৎসবের আগে। এবার কলমকারি এবং পটোলা শাড়ি ক্রেতাদের কাছে খুব প্রিয়, কারণ অনেক নতুন ডিজাইন নিয়ে আসা হয়েছে এই শাড়িগুলিতে।

মাহেশ্বরী, জুট সিল্ক, খেশ, ভেঙ্কটগিরি, ওয়াল কলাম, জারদৌসী, প্রিন্টেড সিল্ক তো রয়েইছে, ওপারা ও দোপিয়ন সিল্কেরও ভালোই চাহিদা। জরজেটের উপর বেনারসীর কাজও এখন ফ্যাশনে ইন। এই শাড়িগুলি বেনারসী সিল্ক এর থেকে অনেকটাই হালকা, সুতরাং গরজিয়াস লুকটা বহাল থাকছে অথচ পরেও আরাম। এসব তথ্য পরিবেশন করলেন টাটা পরিবারের এথনিক পোশাকের ব্র্যান্ড ‘তানায়রা’-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার  অম্বুজ নারায়ণ।

যারা গরমের জন্য খুব ভারী বা হেভি কাজ করা শাড়ি অ্যাভয়েড করতে চান, তারা অনায়াসে বেছে নিতে পারেন লিনেন শাড়ি, কোটা শাড়ি অথবা সাউথ কটন, স্বর্ণ কাতান, সিল্ক-কটন ইত্যাদি। তাছাড়াও হ্যান্ডলুম লিনেন শাড়ি সকলেরই পছন্দ এবং এর চাহিদাও তুঙ্গে। তসর বা সিল্কের উপর হ্যান্ডপেইন্ট অনেকে লাইক করেন। সারা শাড়িতে পেইন্ট অথবা পাড় এবং আঁচল। কাঁথা কাজের ডিমান্ড অসম্ভব বেড়েছে এখন। আগের থেকে ডিজাইনেও অনেক রদবদল এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের তাঁতিরা যেভাবে এখন লিনেন শাড়ি তৈরি করছেন এবং তাতে তাঁতের এবং জামদানী ঢাকাইয়ের ডিজাইন দিচ্ছেন, তাতে এই শাড়িটি এখন খুবই পপুলার হয়ে উঠেছে। কাঁথার কাজে একুশ অথবা বাইশ সুতোর কাজের টপ ডিমান্ড রয়েছে। বাইশ রকম রঙের সুতোয় সারা শাড়িতে কাজ, নকশা করা হয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিমান্ড বেড়েছে বিষ্ণুপুরী কিংবা সোনামুখী কাতান সিল্কের। এগুলোর উপর হ্যান্ডপেইন্ট, তেলেঙ্গানার কলমকারি, ব্লক প্রিন্ট, মধুবনী প্রিন্ট ইত্যাদির অসম্ভব চাহিদা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। বিষ্ণুপুরী সিল্কের চাহিদা বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে এর হালকা মেটেরিয়াল এবং উজ্জ্বল রং। এগুলো ছাড়াও ব্যাঙ্গালোর সিল্কের উপর বা বিষ্ণুপুরী কাতানের উপর আড়ি কাজ খুব পপুলারিটি গেন করছে কয়েক বছর ধরেই। সম্পূর্ণ হাতে করা হয় এই কাজ। এছাড়াও আছে গাছি তসর যেগুলি সাধারণ তসরের তুলনায় অনেকটাই দামি। এখন বুটিক থেকে অনলাইন-এও কিনতে পারেন শাড়ি। এতে দোকানের ভিড় ঠেলার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বসেই পাওয়া যাবে পছন্দের শাড়ি।

যারা কলকাতায় শাড়ি কিনতে চান, তাদের জানাই, টাটা পরিবারের এথনিক পোশাকের ব্র্যান্ড ‘তানায়রা’ (Taneira)-র দুটি স্টোর খোলা হয়েছে গড়িয়াহাট অঞ্চলে  এবং সাউথ সিটি মলে। দুটি দোকানেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাকৃতিক, বিশুদ্ধ ও খাঁটি বুনন দিয়ে অত্যন্ত যত্নে তৈরি শাড়ি, ব্লাউজ এবং স্যুট সেট-এর হস্তশিল্পের বিস্তৃত সম্ভার রয়েছে। বৈচিত্র্যময় বস্ত্র এবং কারুশিল্পের বিপুল সম্ভারের মধ্য দিয়ে তানায়রা সারা ভারতকে এক ছাদের নীচে নিয়ে এসেছে। এখানে পাবেন বহু সূক্ষ্ম বেনারসি সিল্ক, দুর্দান্ত নকশা সহ সমৃদ্ধ কাঞ্জিভরম, মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি এবং মহেশ্বরী, বাংলার জামদানি, বিহার ও ওড়িশা থেকে আসা তসর , গুজরাট ও অন্ধ্রপ্রদেশের ইক্কত এবং আরও অনের কিছু। এই উপলক্ষ্যে  তানায়রা (Taneira)-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শ্রী অম্বুজ নারায়ণ জানিয়েছেন, ‘এ শহরের ঐতিহ্য আর ফ্যাশনের পাশাপাশি সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ব্র্যান্ড কলকাতায় দেশের নানা প্রান্তের ঐতিহ্যের শাড়ি, পোশাকের সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছে। আমরা আমাদের দুটি দোকানেই কলকাতার মহিলাদের স্বাগত জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, যেখানে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাছাই করা নিখুঁত ও খাঁটি বুননের শাড়ির সম্ভারে সেজে উঠেছে।’

এই প্রসঙ্গে সংগীতশিল্পী  ইমন চক্রবর্তী  জানিয়েছেন, ‘আমার শিরায় প্রবাহিত হওয়া সংস্কৃতি যা আমার সঙ্গীতকে অনুপ্রাণিত করে এবং আমার গানে সুর যোগ করে, তার সঙ্গে মানানসই এখানকার ঐতিহ্যমাখা সুন্দর শাড়ির সম্ভার।’

মোটকথা, নানারকম শাড়ির মধ্যে থেকে এমন শাড়ি বেছে নিতে হবে আপনাকে, যা পরলেই আপনি সবার নজর কেড়ে নিতে পারবেন সহজেই।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...