শ্লীলতাহানি বিষয়টা অনেকেই কিছুদিন আগে অবধি খুব হালকাভাবে নিতেন কারণ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারাটি জামিনযোগ্য ছিল। অনেকেই জানেন না যে, এই ৩৫৪ ধারার সঙ্গে কিছু উপধারা যুক্ত রয়েছে যেগুলো জামিনযোগ্য নয়। ফলে অপরাধীর প্রতি আইন এখন কঠোর। অফিসকাছারি, স্কুল-কলেজ এমনকী রাস্তাঘাটেও আজকাল ৬ থেকে ৬০ বছর বয়সের কোনও মহিলাই ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত নয়। এই বর্তমান অসুরক্ষিত সমাজের Sexual harassment-এর নিদর্শনস্বরূপ কিছু ছবি আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করছি।

ঘটনা

কঙ্কণা অফিসে প্রতিদিনই খেয়াল করে যে ছলে-বলে-কৌশলে একবার হলেও তার বস মিঃ কপুর তার গায়ে হাত দেন।কঙ্কণা তার চাকরিটা যেদিন ছাড়ল সেদিন তার চরম লাঞ্ছনার আগের পর্যায়ে বিষয়টা থমকে ছিল। বাথরুমের আয়নায় নিজের অবস্থা দেখে ও স্থির করে ফেলেছিল যে ওর কর্তব্য কি!

এরপর কঙ্কণা পুলিশের কাছেও গিয়েছিল। পুলিশ তৎক্ষণাৎ এফআইআর-ও করেছিল। কিন্তু গ্রেফতার হবার এক ঘণ্টার মধ্যে মিঃ কপুর জামিনও পেয়ে যান। কারণ ৩৫৪ ধারাটি তখনও জামিনযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হতো। ফলত মিঃ কপুর এই জঘন্য কাজ করার পরও সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ালেন এবং আরও অনেক কঙ্কণাকে তাঁর শিকার হতে বাধ্য করলেন।

ঘটনা

এক ল্যাবরেটরির লেডি ডাক্তার পুলিশকে জানাল যে তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছে তারই দুই সহকর্মী। বিষয়টির স্বপক্ষে কলকাতা পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেও কোনও প্রমাণ পেল না। মামলাটি প্রথমে ধর্ষণের মামলা হিসাবেই শুরু হয়েছিল কিন্তু অবশেষে যে-ছবি সামনে এল, তাতে মামলাটি শ্লীলতাহানির মামলা বলে পুলিশ তদন্ত শেষ করলেও, মামলাটির মিমাংশা হল না। অর্থাৎ আইনের অপব্যবহারের এক চরম দৃষ্টান্ত হল এই ঘটনা।

আসলে ওই লেডি-ডাক্তারটির পছন্দের তালিকায় ছিল উক্ত দুই সহকর্মীর মধ্যে একজন। মহিলাটি ওই সহকর্মীকে বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং ওই সহকর্মী তাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। মহিলা তখন নাছোড়াবান্দা যে বড়োলোকের ওই ছেলেকে তিনি বিয়ে করবেনই। ছেলেটিকে ব্ল্যাকমেল করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছেলেটির এক বন্ধু তথা সহকর্মী। প্রতিশোধ নিতে মিথ্যে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসাবার চেষ্টা করা হয় সেই ছেলেটিকে ও তার বন্ধুকে। বিষয়টির মধ্যে মিথ্যা অনুধাবন করে উচ্চ আদালত প্রাক্-গ্রেফতারি জামিন মঞ্জুর করেন।

ঘটনা

একদিন অফিস থেকে ফিরে ভবেশবাবু দেখলেন মেয়ে শর্মিষ্ঠার মুখটা কেমন যেন শুকনো লাগছে। ওঁর স্ত্রী কণিকাদেবীর উপর দায়িত্ব পড়ল সত্য উদ্ঘাটনের। কিন্তু সত্য-উদ্ঘাটনের কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে নয়, বের হল শঙ্খচূড়।

শর্মিষ্ঠার রাকেশ নামে এক বয়ফ্রেন্ড জুটেছিল। মেলামেশার থেকে ব্যাপারটা ক্রমশ শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় পরিবর্তিত হয়।এই অবধি না হয় যুগের আধুনিকতা বলে মানা যেত যদি না তাদের প্রতিটা শয্যাদৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়ত।

উপরোক্ত ঘটনাগুলো শ্লীলতাহানিজনিত ঘটনার ক্ষেত্রে আইনের ‘ব্যবহার’ও ‘অপব্যবহার’ হিসাবে দৃষ্টান্তস্বরূপ। যৌন হেনস্থাজনিত কোনও রকম অপরাধের ঘটনা ঘটলে তা কিন্তু আইনের বিভিন্ন ধারার আওতায় আসে—

  • প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেজ অ্যাক্ট।
  • সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অফ উওম্যান অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রহিবিশন অ্যান্ড রিড্রেসাল) অ্যাক্ট৷
  • প্রহিবিশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট।
  • ক্রিমিনাল ল’ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট।

 

ক্রিমিনাল ’ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট

এই আইনের আওতায় এনে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারাকে জামিনযোগ্য থেকে এক জামিন অযোগ্য ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং এর আরও চারটে নতুন উপধারা আনা হয়েছে শ্লীলতাহানির রকমফের অনুসারে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম করাদণ্ড হতে পারে দোষী সাব্যস্ত হলে।

সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অফ উওম্যান অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রহিবিশন অ্যান্ড রিড্রেসাল) অ্যাক্ট

এই আইনটিকে লোকসভা পাশ করেছে নারী স্বাধীনতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে। কাজের জায়গায় মহিলারা বহুভাবে অবস্থার শিকার হয়ে থাকেন। কঙ্কনার মতো বহু মেয়ে আজ বহুলাংশে সুরক্ষিত।উক্ত অপরাধের শিকার হলে থানায় সরাসরি দরখাস্ত করতে হয় এবং তাতে কাজ না হলে জেলা বা মহকুমার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দরখাস্ত করা যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...