বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির দাপট। কলেজ থেকে বেরিয়ে এলোমেলো হাওয়ায় ছাতা না খুলেই বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ, অনিন্দিতাকে মনে করিয়ে দিল বাড়ির রাস্তার মোড়ে গরম তেলেভাজার ছোট্ট দোকানটার কথা। চনচনে খিদেটা অনিন্দিতাকে ভুলিয়ে দিল মা-এর সতর্কবার্তা।
রাস্তার দোকানটা থেকে কিনে নিল আলুর চপ, বেগুনি। জানে বাড়িতে ফ্রিজে মা রেখে গেছেন সেদ্ধ করা আলু আর ব্রেড। মা, চারদিনের জন্য অফিসের কাজে শহরের বাইরে গিয়েছেন। বাড়িতে ফিরেই সেদ্ধ আলু আর ব্রেড দিয়ে ঝটপট একটা স্ন্যাক্স বানিয়ে ফেলল অনিন্দিতা। বাড়িতে কেউ নেই, তাই একাই ক্ষুধানিবৃত্তি করতে বাইরে কেনা চপ এবং বাড়িতে বানানো স্ন্যাক্স, চা-সহযোগে খেয়ে নিল।
কিন্তু বেশিক্ষণ রিল্যাক্স-মুডে থাকতে পারল না। একটা চিনচিনে ব্যথা তলপেটে শুরু হয়ে গেছে অনিন্দিতার। প্রথমে ভাবল প্রচণ্ড খিদের মুখে অনেকক্ষণ থাকাতে পেটে গ্যাস ফর্ম করেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকায় অনিন্দিতা আর অপেক্ষা না করে পাড়ার ডাক্তারের দ্বারস্থ হল। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন ঘাবড়াবার কোনও কারণ নেই। ওষুধ খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ওষুধের নামও লিখে দিলেন।
এরকম ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে প্রত্যেক বাড়িতে। ফ্রিজে খাবার তুলে রেখে ভুলে যাই। বেশিদিনের রান্না করা খাবার অথবা আটা ময়দার তৈরি জিনিস যদি ফ্রিজে রাখা হয় তাহলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। স্বাদেও বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সেদ্ধ করা আলু ফ্রিজে রাখলেও, আলুর ভিতরের জলীয় ভাব, তাড়াতাড়ি আলু খারাপ করে দেয়। এই আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।
ব্রেডের ক্ষেত্রেও এই একই সমস্যা দেখা যায়। বর্ষাকালে বাসি ব্রেড খেলে শরীরের ক্ষতি হতে বাধ্য। বাসি ব্রেডে ফাংগাস জন্ম নেয় এবং পেটের জন্য এটা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার জন্য অনেকেই ফাংগাস পরিষ্কার করে ব্রেডটা খেয়ে নেন। এর ফলে ডায়ারিয়া, আমাশার মতো পেটের রোগে ভুগতে হয়। বাইরের তৈরি খাবারও বর্ষাকালে খেলে শরীরের বেশি ক্ষতি করে। বর্ষার সময় দূষিত জল খেয়ে এমনিতেই নানারকম রোগের কবলে পড়তে হয়, তার উপর যদি খাবারদাবার এবং পানীয়ের ক্ষেত্রে অসাবধানতা থাকে তাহলে শরীরে রোগ বাসা বাঁধবেই, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা চলে।
শহরের পরিচিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানালেন, ‘বর্ষাকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। খাওয়াদাওয়াতেও সংযম দেখানো উচিত। এই সময় পোশাকেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। শরীর ঢাকা জামাকাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। রেনকোট এবং পায়ে গামবুট থাকলে বর্ষার জমে থাকা নোংরা জলে শরীর ভিজবে না। কোল্ড এবং ফ্লু-এর মতো বর্ষাকালীন রোগের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে সুবিধা হবে। খাওয়াদাওয়ার Monsoon Diet-এর ক্ষেত্রেও সঠিক পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজনীয়। কাটা সবজি, রান্না করা খাবার এবং আঢাকা খাবার ফ্রিজে বেশিদিন রাখতে নেই। রান্না করা খাবার অবশ্যই সব সময় ঢেকে রাখা উচিত। একবার ফ্রিজ থেকে বার করে খাবার গরম করার পর সেটা সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলা দরকার। দ্বিতীয়বার একই জিনিস আবার ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করলে পেটে সংক্রমণ হওয়ার ভয় থেকেই যায়।’
পুরোনো দিনের মানুষরা হয়তো এই কারণেই টাটকা খাবার খাওয়ার উপর জোর দিতেন। ফ্রিজে রেখে খাবার বাসি করা, তাঁদের পছন্দ ছিল না। আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা, সবকিছুর উপরেই প্রভাব বিস্তার করে। বর্ষা ঋতুতে যেহেতু রোদের দেখা মেলা ভার এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেড়ে যায়, এই কারণে জীবাণুর প্রভাব শরীরে বেশি পড়ে। খাওয়াদাওয়ার প্রতি রুচিও অনেক বদলে যায়। বর্ষাকালের কথা মাথায় রেখেই ডায়েটিশিয়ানরা বলেছেন, ‘সুস্থ, চনমনে শরীরের জন্য বর্ষা ঋতুতে উচিত, প্ল্যান মাফিক ডায়েট Monsoon Diet মেনে চলা। সঠিক ডায়েট মানলে লিভার দুর্বল হবে না, হজমশক্তি ঠিক থাকবে, সংক্রমণ হবে না উপরন্তু পেটও সুরক্ষিত থাকবে। এর ফলে শরীর তরতাজা ও ফিট থাকবে।’