জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক

সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে গাড়ি ঢুকলেই নাকে আসবে একটা অদ্ভুত বন্য গন্ধ। এ জঙ্গলের নামটাই শিহর তোলে। যে-বিখ্যাত শিকারির নাম জুড়ে রয়েছে এই বনস্থলীর সঙ্গে– তিনি কত কিশোরের ফ্যান্টাসির ইন্ধন জুগিয়েছেন, তার গোনাগুনতি নেই।

Jim Corbett National Park, উত্তরাখণ্ডের সুপরিচিত এক বনভূমি, যা দেশের প্রথম জাতীয় উদ্যান হওয়ার শিরোপা ও ঐতিহ্য বহন করে। ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর অন্তর্গত ভারতের ৮-টি টাইগার রিজার্ভ-এর এটি অন্যতম। ১৯৩৫-এ করবেট জাতীয় উদ্যানের জন্ম। নাম ছিল তদানীন্তন গভর্নর স্যার ম্যালকম হেইলির নামে ‘হেইলি ন্যাশনাল পার্ক।’১৯৫৭ সালে পশুবিদ জিম করবেটের স্মৃতিস্বরূপ নাম রাখা হয় করবেট ন্যাশনাল পার্ক।

সাধারণত যেসব জঙ্গলকে ন্যাশনাল পার্ক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তার একটা বড়ো কারণ এইসব জঙ্গলে নির্বিচারে পশুশিকার হওয়ার ফলে বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেওয়া। প্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই তৈরি হয় জাতীয় উদ্যান। করবেট ন্যাশনাল পার্কের গল্পটাও খানিকটা এরকমই। ১৮২০ সালের আশপাশের সময়টাতে এই জঙ্গলে ব্রিটিশ শিকারিদের হাতে অগুনতি বাঘ হত্যা হতে থাকে। কাঠের জন্য গাছকাটাও চলতে থাকে নির্বিচারে। এর ফলে জঙ্গলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। শেষে মেজর রামসের দৃঢ় পদক্ষেপে এই উদ্যান সংরক্ষণের কথা ভাবা হল। লাইসেন্স ছাড়া গাছ কাটা যাবে না এমন নিষেধাজ্ঞাও জারি হল। ১৯০৭ সাল নাগাদ মেজর স্মিথিজ, জিম করবেটের সঙ্গে প্রস্তাবিত ন্যাশনাল পার্কের সম্ভাব্য সীমার পরিমাপ নিয়ে আলোচনা করেন এবং অবশেষে সরকারি উদ্যোগে ১৯৫২-য়় জঙ্গলটি পায় জাতীয় উদ্যানের শিরোপা।

সত্তরের দশকে এ জঙ্গলে যেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার, ১৯ শতকের শেষে এসে তা মাত্র ৪ হাজারে এসে ঠেকেছিল।গত বছরের হিসাব অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা এই জঙ্গলে মাত্র ২৫২৷ পরিস্থিতি বিচার করে ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ শুরু করার সংকল্প নেওয়া হয় এবং করবেট টাইগার রিজার্ভ হিসাবে চিহ্নিত হয়।

করবেট পার্ক বাঘ, লেপার্ড, হাতি, বনবেড়াল, বুনো শুয়োর, ভাল্লুক, নানাপ্রজাতির বানর ও হনুমান, নেউল, ফিশিং ক্যাট, গন্ধ গকুল, উদবিড়ালি প্রভৃতি প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র। এছাড়াও স্পটেড ডিয়ার, চিতল, কাঁকর ও হগ ডিয়ার এমন চারটি প্রজাতির হরিণেরও দেখা মেলে এই জঙ্গলে।

Elephant in Jim Corbett National Part

হাতির পাল চোখে পড়াও বিস্ময়ের নয় কারণ এ জঙ্গলে হাতির এমনই আধিক্য, যে মনে হতে পারে গোটা জঙ্গলটাই বুঝি হাতিদের দখলে। কালাগড় ড্যাম তৈরি হওয়ার ফলে হাতিদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এইভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা হাতিদের না-পসন্দ ছিল। শেষে তারা নিজেরাই ভিন্ন একটি রাস্তা খুঁজে নেয় জঙ্গলে বিনা বাধায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য। ড্যাম সংলগ্ন ঝিলে কুমির ও জঙ্গলের বৃক্ষ শাখায় দেশিবিদেশি নানা পাখির খেলা। শিবালিক রেঞ্জের অন্তর্গত এই জঙ্গলে নানা ধরনের গাছের সমাগম, যার মধ্যে শাল, হলুদ, রোহিণী ও করিপাক অন্যতম।

করবেটে ৫০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী পশু ও ৫৮০ প্রজাতির পাখির বাস। পাখিদের মধ্যে বার হেডেড গুজ, স্যান্ড পাইপার, গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রোভ, করমোরেন্ট, হোয়াগটেল, ইগ্রেট প্রভৃতির দেখা মেলে।

থাকার জন্য করবেট পার্কের ভিতরে ও বাইরে প্রচুর হোটেল ও লজ রয়েছে। তবে পার্কের ভিতরে বন বিভাগের লজ-টি থাকার পক্ষে অসাধারণ। জঙ্গলে পায়ে হেঁটে ঘোরা নিষেধ। মাচায় চড়ে গোটা জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। জিপ বা হাতিতে চড়ে Jungle Safari করা যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...