অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, অঙ্কোলজি, নিউরোসার্জারি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, রিউমাটোলজি, ইন্টারনাল মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিনের ক্ষেত্রে রোগীদের সঠিক উপায়ে পরিষেবা দিতে পারে পেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ব্যথা উপশমের মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করা চিকিৎসা ক্ষেত্রের পেশাদারদের একটি দল ৯ জুলাই, ১৯৮৪ সালে বারাণসীতে ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর স্টাডি অফ পেইন (ISSP) গঠনের জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। অলাভজনক এবং পেশাদার সংস্থা ISSP-এর জন্মকে চিহ্নিত করার জন্য এই দিনটিকে পেইন ফাউন্ডেশন ডে হিসেবে পালন করা হয় যা পেইন মেডিসিন নিয়ে কর্মরত চিকিৎসা ক্ষেত্রে পেশাদারদের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংস্থা পেইন মেডিসিনে রোগীর যত্ন, সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী উভয় ধরনের ব্যথার সমস্যারই সমাধানের জন্য পেইন ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন, এমন রোগীদের জন্য একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ পেইন ক্লিনিক’ চালু করেছে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা। এই হসপিটাল-এর পেইন ক্লিনিক এক ছাদের নিচে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি অভিজ্ঞ দলকে একত্রিত করছে। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা এবং বিশ্বমানের সুবিধাযুক্ত ক্লিনিকটি রোগীদের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করবে। এই বিষয়ে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার স্পাইন সার্জারি বিভাগের ডিরেক্টর ডা. আবরার আহমেদের মতে, ‘কোভিডের প্রভাবের মধ্যে একটি হল, বিপুল সংখ্যক লোক বাড়ি থেকে কাজ (WFH) করা শুরু করেছেন। কিন্তু মুশকিল হল এই যে, অনেকেই খুব খারাপ ভঙ্গিতে কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার বদভ্যাস তৈরি করে নিয়েছেন। এর ফলে স্থূলতার সমস্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনই পিঠের নিম্ন ভাগে ব্যথার (এলবিপি) ঘটনাও বাড়ছে। তাই,  এলবিপিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে পেইন ক্লিনিকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

অ্যাপোলো অ্যানেস্থেশিয়ার এইচওডি ডা. তন্ময় দাস জানান, ‘আধুনিক ওষুধে পেইন ম্যানেজমেন্টকে আলাদা বিশেষত্ব এবং একটি সুপার স্পেশালিটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পেইন ক্লিনিক এই পরিষেবার মেরুদণ্ড এবং কেন্দ্রবিন্দু। পেইন ম্যানেজমেন্ট-এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রথমে রোগীর ব্যথার পিছনের কারণ খুঁজে বের করেন এবং ব্যথার কারণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান করেন। প্রাথমিকভাবে ওষুধ দিয়ে এবং তারপরে পেইন ম্যানেজমেন্টের ইন্টারভেনশনাল কৌশলকে  মাধ্যম করে চিকিৎসা প্রদান করেন। ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি হল বিশেষ কৌশল, যা সবচেয়ে ন্যূনতম উপায়ে করা হয়। এই আধুনিক পেইন ম্যানেজমেন্টের সাফল্যের হার অনেক বেশি এবং এটি বেশ সুরক্ষিত। তাই এই কৌশল এবং অস্ত্রোপচারের ইন্টারভেনশন্সের তুলনায়, জটিলতার হার অনেক কম যা রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।’

অ্যাপোলো হসপিটালস-এর ইস্টার্ন রিজিয়নের সিইও শ্রী রানা দাশগুপ্ত প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘পেইন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম একটি নতুন, দ্রুত বিকাশমান সুপার স্পেশালিটি। প্রকৃতপক্ষে ISSP-এর লক্ষ্য হল ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিলের দ্বারা একটি সুপার স্পেশালিটি হিসাবে ব্যথার ওষুধের অনুমোদন অর্জন করা। আমরা উপলব্ধি করি যে, অনকোলজি, অর্থোপেডিকস, নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, রিউমাটোলজি, ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে আসা বিভিন্ন রোগীদের উপযুক্ত পেইন ম্যানেজমেন্টের খুব প্রয়োজন। এই পেইন ক্লিনিক পেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি বহুবিভাগীয় পদ্ধতি গ্রহণ করবে, যেখানে রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন এবং সাইকোথেরাপিও পেইন ম্যানেজমেন্টের প্রোটোকলগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্যান্য বিশেষত্ব থেকে নিয়মিত যোগাযোগ এবং ইনপুট থাকবে এবং এই ক্লিনিকটি পেইন ম্যানেজমেন্টের নতুন পদ্ধতির বিকাশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বাস্তবায়নের জন্য গবেষণালব্ধ তথ্য প্রদান করবে।’

অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার ডিএমএস (ডিরেক্টর মেডিক্যাল সার্ভিস) ডাঃ সুরিন্দর সিং ভাটিয়া জানান, ‘একটি বিশেষ পদ্ধতি সব সময়ই ভালো ফলাফল প্রদান করে। এটি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উভয় ক্ষেত্রেই সত্যি। এই পেইন ক্লিনিকটি অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথার পাশাপাশি দ্রুত বিকাশমান ম্যালিগন্যান্সি রোগীদের চিকিৎসা করতে সহায়তা করবে। দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, হিপ আর্থ্রাইটিস, হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিস, নিউরোপ্যাথিক কন্ডিশনস, দীর্ঘস্থায়ী ক্যান্সারের ব্যথা, হারপিস, শিংলস, ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া ইত্যাদি রোগীদের জন্য দুর্দান্ত সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।’

অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতার মেডিক্যাল অনকোলজি-র ডিরেক্টর ডা. পি.এন. মহাপাত্র জানিয়েছেন, ‘ভারতে ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান বোঝা উদ্বেগজনক এবং এই ক্যান্সারের সঙ্গে ব্যথাও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ ক্যান্সারের ব্যথা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে দুর্ভাগ্যবশত ক্যান্সারের ব্যথার প্রায়শই চিকিৎসা করা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যথা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করেন না বা তাদের চিকিৎসার প্রস্তাব দেন না। কখনও আবার রোগীরাও তাদের ব্যথা সম্পর্কে বিশদে কিছু উল্লেখ করতে চান না এবং কেউ-কেউ শুধু ব্যথার ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয় পান। কিন্তু অ্যাপোলোতে আমরা রোগীদেরকে জানাই যে, আপনার ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা আপনার চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ এবং এই পেইন ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করব।’

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...