সামপ্রতিক সময়ে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা বুল্লিবাই অ্যাপ তৈরি করে প্রমাণ করে দিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া আদতে কতটা অসুরক্ষিত মহিলাদের পক্ষে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা আপনার ছবি, যা হয়তো আপনার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশার অঙ্গ ছিল, তারই অপব্যবহার এখন অত্যন্ত সহজ অপরাধে রূপান্তরিত হয়েছে। Internet -এ এই অপরাধ মাত্রাছাড়া হয়েছে কারণ এইসব ব্যক্তিগত ছবির নিলাম পর্যন্ত ডাকা হয়েছে অ্যাপ-এর মাধ্যমে।
প্রশ্ন এটাই মধ্যবিত্ত মেধাবী ছাত্রদের এইসব অপকর্মে ইন্ধন কে বা কারা জোগাচ্ছে? Social Media জ্ঞান আহরণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কখনওই ব্যবহৃত হয়নি। উলটে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে অশালীন, অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপের ক্ষেত্র। ট্রোলিং এমন পর্যয়ে পৌঁছেছে যে, এখন ফিল্টারের সাহায্যে এই অশালীন কথাবার্তাকে হাইড করার ব্যবস্থা পর্যন্ত নিতে হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া শুরুতে একটা প্রত্যাশা তৈরি করেছিল যে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ সামাজিক ও ভৌগলিক দূরত্ব মুছে, এখানে এক হতে পারবেন। ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির এক উৎকৃষ্ট প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এই সামাজিক মাধ্যম। নানা দেশ নানা সমাজ নির্বিশেষে মানুষ নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ এক অন্য দিগন্ত খুলে দেবে, যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে, রাষ্ট্রের অপশাসনের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করা যাবে, চাই কি মনের সঙ্গীও খুঁজে নেওয়া যাবে। ধর্ম, জাতি, গাত্রবর্ণ, নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে যৌথসংসার গড়ে উঠবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল দেশ, শহর তো দূরস্থান এখানে মানুষ নিজের অঞ্চলে এমনকী নিজের বাসস্থানেও পরস্পরের বিরোধিতা করতেই ব্যস্ত।
Bulli bai-এ পোস্ট করা ছবিগুলি মূলত চুরি করা হয়েছে নানা সামাজিক মাধ্যম থেকে। সেগুলি প্রায় সবই মুসলিম মহিলাদের ছবি যা কিনা নিলামে চড়ানো হয়েছে। ভাবতে পারেন, এই অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছিল একজন ১৮ বছরের তরুণী ও ২১ ও ২৪ বছরের দুই তরুণ! মাত্র এইটুকু বয়সেই এই ছেলেমেয়েগুলি বুঝে গেছে আন্তর্জালকে ব্যবহার করে কত দ্রুত এমন অপকর্ম করা যায়, কোনও ধর্মের উপর বিষোদগার করা কত সোজা।
স্বনামে হোক বা বেনামে এই Cyber crime করার পর তারা ধরা পড়েছে ঠিকই, কিন্তু সাইবার ক্রাইম-এর এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে এই ঘটনা। যারা বুল্লিবাই অ্যাপ-এর দ্বারা শুধু একটি ধর্মেরই নিয়ন্ত্রণ বলবত করতে চাইল, তারা ভুলে গেছে ইতিহাসে আজ অবধি কখনও শুধু একটিই ধর্ম, একটিই ভাষা, একটিই জাতিকে প্রাধান্য দিয়ে রাজ্য চালনা করা সম্ভব হয়নি। বিরোধিতা সর্বকালীন এক সত্য, যা ছিল আছে, থাকবে। বুদ্ধিমান রাজারা বরং বিরোধীদের সম্মানের আসনেই বসিয়েছেন, যাতে কিছু বিদ্বান ও যোগ্য লোক তার রাজ্যে থাকতে পারে।
হিন্দু-মুসলমান ১০০০ বছর ধরে সঙ্গবদ্ধ ভাবে থেকেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখন সংখ্যায় অল্প হলেও, হিন্দুরা রয়েছে। কিন্তু এ যুগের এই পথভ্রষ্ট তরুণ-তরুণীরা ধর্মীয় সন্ত্রাস তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছিল আন্তর্জালের সাহায্যে এক অসাধু উদ্দশ্য নিয়ে– যার ফল একটাই লাখে লাখে ছড়িয়ে যেত সন্ত্রাসের বীজ। বিধর্মীদের উস্কানি দিতে, ধর্মীয় বিষোদগারের এই রাস্তা কখনওই কাঙ্খিত নয়।
আন্তর্জালের আশীর্বাদ এখন অভিশাপে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। মানুষ মানুষে ভেদাভেদ, বিদ্বেষ, আর ঘৃণা ছড়াতে যা অব্যর্থ। স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে, ধর্মীয় বৈষম্য অশান্তির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ এখন ঘৃণা বর্ষণের ক্ষেত্র হয়েছে। ইন্টারনেট হয়েছে ইন্টারফিয়ারিং-এর মাধ্যম।