বিয়ের পর সমাজে, স্বামীর পরিবারে মেয়েরা নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা করে। পরিবর্তন আসে women’s lifestyle-এ। একটা পরিবারে বউ হয়ে আসতেই, সেখানে তৈরি হয় নানাজনের নানা চাহিদা। প্রথমেই মানিয়ে নিতে হয় স্বামীর বাহ্যিক চরিত্র এবং মানসিকতার সঙ্গে। স্বামীর পরিবারের আদবকায়দা, রীতি রেওয়াজ সবকিছুই শিখে নেওয়ার কর্তব্য কিন্তু নতুন বউ-এর। তবেই সে পতিগৃহে হতে পারবে পুরোদস্তুর সদস্য। বিয়ের পর একজন অপরিচিত হিসেবেই সংসারে ঢুকে পড়তে হয়, যেখানে অন্যান্য সদস্যরা কিন্তু ততদিনে ওই পরিবারে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন।

একটি সংস্কৃত শ্লোকে গৃহিণীদের চরিত্র কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়, সেটা বিশ্লেষণ করে সুন্দর একটি বিবরণ রয়েছে। ‘বাড়ির কর্ত্রী স্বামীর প্রতি হূদয়বান হবেন, স্বামীর ভাই-বোনেদের প্রতি সম্ভ্রমযুক্ত শ্রদ্ধা থাকবে, শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি বিনম্র সম্মান এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের প্রতি আবেগপূর্ণ অনুভূতি থাকবে, বাড়ির কর্মচারীদের প্রতি দয়ার প্রতিমূর্তি হবেন, স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীদের প্রতি সদা হাস্যমধুর ব্যবহার করবেন , এছাড়াও স্বামীর বন্ধুদের প্রতি সৌজন্যবিশিষ্ট নম্রতা আর সবশেষে শত্রুর প্রতি ঘৃণাই গৃহস্থ নারীর ভূষণ।’

ভারতীয় নারীর কাছে তার বাড়িই সবথেকে আদরের। স্বামীর আনন্দে সে খুশি, স্বামীর দুঃখে দুঃখী। স্বামীর অসুখবিসুখে সে সেবার প্রতিমূর্তি আবার বিপদের মুহূর্তে সবথেকে ভালো সমাধানকারী। স্বামীর ঘর-সংসারকে সুন্দরভাবে চালিত করার শক্তির আধার নারী। স্ত্রী-এর নিকটত্ব স্বামীকে স্থির রাখে, মনে সাহস ও শক্তি জোগায়। স্ত্রী’র কাছ থেকে স্বামী পায় পরিবার, সন্তান এক পূর্ণ তৃপ্তি যা তাকে করে এক সম্পূর্ণ পুরুষ।

সময় বদলেছে। আজকের নারী স্বাধীনচেতা এবং স্বনির্ভর। এখনকার নারীরা আর আগের নারীদের মতো পরনির্ভর নয়। Women’s lifestyle-এ এসেছে এক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন উপহার হিসেবে, নারীর প্রাপ্য আনন্দের অধিকার তাকে দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টিরিওটাইপ জীবনধারা অনেক বদলে গেছে। এর কিছুটা কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে আমাদের সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে। শুধুমাত্র শহরেই নয়, গ্রাম-গঞ্জের মেয়েরাও ঘরের মায়া ত্যাগ করে বাইরে বেরিয়ে আসছে কাজের জন্য।

পরিবর্তনের ঢল

বাড়ির বউদের প্রতি যে-ধারণা এতদিন প্রচলিত ছিল, আধুনিক সময়ে তা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। এই প্রজন্মের গৃহবধূদের উপর আজ নতুন ধরনের দায়িত্ব এসে পড়েছে। আজ বেশিরভাগ মেয়েই শিক্ষিত অথবা উচ্চশিক্ষিত। তাই বিয়ের পর নতুন পরিবারে এসেও তার থাকে ন্যায্য অধিকার। বাড়ির যে-কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতেও তার মতামতের একটা প্রাধান্য থাকে। কর্মক্ষেত্রে এবং সোশ্যাল লাইফেও মেয়েদের গুরুত্ব বেড়েছে। পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের বাইরের দায়িত্বও সামঞ্জস্য রেখে পালন করা খুব একটা সোজা নয়। আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার দৌলতে সময় এবং এনার্জি বাঁচাবার ঘরোয়া জিনিস আজ প্রত্যেকের গৃহজীবনে প্রভাব বিস্তার করছে। বাড়িতে সারাদিন ব্যস্ত থাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। মেশিনের সাহায্যে কাজ তাড়াতাড়ি হচ্ছে। এছাড়াও বাড়ির কাজের জন্য পরিচারক, পরিচারিকা নিয়োগ করে, বাড়ির বাইরে সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব গ্রহণ করাটাই বাড়ির বউরা বেশি পছন্দ করছে।

যে-কোনও আধুনিক পরিবারে দৈনন্দিন গৃহকর্মের ভার শুধুমাত্র স্বামী অথবা স্ত্রীর উপরে ন্যস্ত থাকে না। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও দায়িত্বভার সমানভাবে ভাগ করে নেন। কোনও সদস্যকে নিয়মমাফিক কোনও কাজ করতেই হবে এমন বাঁধাধরা আইডিয়া এখন কেউ বিশ্বাস করেন না। যার যেটা সুবিধা হচ্ছে মিলেমিশে কাজটা করে নিতে পারলেই হল। এখন অনেক পরিবারেই বিশেষ বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানে বাড়ির বউকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, যেগুলিতে আগে বাড়িতে পুরুষরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকতেন। আবার বাড়ির অনেক কাজেই পুরুষদের সাহায্যের হাত এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে যেখানে একসময় একচ্ছত্র রাজত্ব চালিয়ে এসেছেন মেয়েরা।

প্রযুক্তিবিদ্যা এবং তার সরাসরি প্রভাব আজ নারীর ব্যক্তিত্বকে বলিষ্ঠ করে এক নতুন পরিচিতি দিতে সাহায্য করছে এবং women’s lifestyle-এ বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। মেয়েদের মনে মানসিক সন্তুষ্টি এসেছে। এই হাই-টেক যুগে কম্পিউটার রিলেটেড অনেক কাজ রয়েছে যেগুলি বাড়ির বউরা বাড়িতে বসেই করছেন এবং অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। বাড়ির বউদের জন্যই বিশেষভাবে এই কাজগুলি তৈরি হয়েছে। বাচ্চার সারাদিনের দেখাশোনা করার দায়িত্ব আগে পুরোপুরি মায়েদের হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষত নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে বাড়ির বউকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সুতরাং এখন পরিবারে সকলেই, সুবিধামতো বাচ্চার দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিচ্ছেন। স্ত্রী-এর সঙ্গে পরিবারের কোনও সদস্যের যদি কোথাও মনোমালিন্যও ঘটতে দেখেন স্বামী, তাহলে সুনিপুণ দক্ষতায় বিবেচকের মতো তা মিটিয়ে ফেলতেও তিনি সফল হন। এক্ষেত্রে কোনও পক্ষেরই হয়ে, তিনি পক্ষপাতিত্ব করেন না।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...