ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করে। মন যদি চায় ত্বক হোক কোমল মসৃণ, সঙ্গে ত্বক হাইড্রেটেডও রাখতে চান তাহলে কিছু কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। কিন্তু অনেক সময় নানা অসাবধানতার কারণে, সময়ের অভাবে অথবা বিউটি প্রোডাক্টস-এর সঠিক ব্যবহার না করার ফলে, ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। এর কারণেই ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, প্রাণহীন।
এই পরিস্থিতিতে আমরা যতই Beauty Products-এর সাহায্যে ত্বকে Moisture ধরে রাখার চেষ্টা করি না কেন, ময়েশ্চার ততক্ষণই ধরে রাখা সম্ভব হয়, যতক্ষণ ত্বকে ক্রিমের প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকে। সুতরাং ত্বকের পরিপূর্ণ যত্নের জন্য ত্বকের ময়েশ্চার বজায় রাখা একান্ত জরুরি, যাতে ত্বক থাকে প্রাণোজ্জ্বল।
ত্বকে ময়েশ্চারারের প্রয়োজনীয়তা
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা মানে ত্বকের প্রতিটি পরতে সঠিক পুষ্টির জোগান দেওয়া। ত্বকে পর্যাপ্ত মাত্রায় ময়েশ্চার থাকলে ত্বক নিজেকে নিজেই রিপেয়ার করে নিতে সক্ষম হয়। Moisture ত্বকের জন্য সুরক্ষাকবচের কাজ করে। যথেষ্ট পরিমাণে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারলে ড্রাইনেস, এজিং, সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ ত্বকের কোনওরকম ক্ষতি করতে পারে না।
বহু কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবথেকে বড়ো কারণ হল শুষ্ক ত্বক। ত্বকের সবথেকে উপরের পরত যেটাকে আমরা এপিডার্মিস বলি, তারও একটি বাইরের পরত থাকে, স্ট্রেটম কোরনিয়াম। সেটি ত্বকের ময়েশ্চারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করে। স্ট্রেটম কোরনিয়াম-এর এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার দুটি প্রধান সহায়ক তত্ত্ব হল, কেরাটিন এবং ফসফোলিপিডস।
সঠিক ময়েশ্চারাইজার বাছার নিয়ম
ময়েশ্চারাইজারে ৩ ধরনের উপাদান থাকে, তাদের আলাদা আলাদা কাজ। সেগুলি জেনে রাখা আবশ্যক
- হুমেকট্যান্টস ত্বকের ভিতরের পরত থেকে এবং বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে, ত্বকের উপরের পরত যাকে এপিডার্মিস বলা হয়, তাতে ময়েশ্চার বজায় রাখতে সাহায্য করে। হুমেকট্যান্টস-এ, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক (Hyaluronic Acid) অ্যাসিড এবং প্রোপাইলিন গ্লুকোজ উপস্থিত থাকে
- শিয়া বাটার, কোকো বাটার-এর মতো এমোলিযে্টস ত্বকের উপরি পরত এপিডার্মিস-এ ক্র্যাকস সারিয়ে তুলতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে
- এক্সক্লুসিভ এজেন্টস-এর মধ্যে পেট্রোলাতুম, অ্যালকোহল, ল্যানোলিন থাকার ফলে ত্বকের উপরের পরতে সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে, ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
খেয়াল রাখুন
ময়েশ্চারাইজার বাছার সময় তাতে থাকা উপাদানে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, আসুন জেনে নিই:
গ্লিসারিন: মযে্চরাইজারে গ্লিসারিন হল একটি উপকারী উপাদান। এটি বাতাস এবং ত্বকের নীচের পরত থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার কাজ করে।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (Hyaluronic Acid): হুমেকট্যান্টস উপাদানে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড একটি বিশেষ তত্ত্ব, যেটি অধিকাংশ ভালো এবং ব্র্যান্ডেড ময়েশ্চারাইজারে পাওয়া যায়। এছাড়াও স্বাভাবিক নিয়মে এটি ত্বকেও থাকে, যার ফলে ত্বকে জলের মাত্রা এই অ্যাসিডই মেনটেইন করে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে শুরু করে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে বেশি আসার কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং যদি আপনি বয়স্ক হন কিংবা বাড়ির বাইরে যাওয়া-আসা বেশি করতে হয়, তাহলে এমন ময়েশ্চারাইজার বাছুন যেটি হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। কারণ বয়স বাড়লেও এটি ত্বক কোমল এবং মসৃণ রাখে।
শিয়া বাটার: এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান। শিয়া গাছের মধ্যে এটি পাওয়া যায়। এটি এক ধরনের এমোলিযে্টস যেটি ত্বককে সফ্ট ও স্মুদ করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের Moisture বজায় রাখতেও সাহায্য করে। শিয়া বাটার ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারিয়ে তুলে স্কিন টোন ইমপ্রুভ করে এবং ইযং লুক ধরে রাখতেও সহায়তা করে। এছাড়াও মুখে র্যাশ, লালচে ভাব অথবা ফোলা ও জ্বালা ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
পেট্রোলাতুম: এটি একটি বিশেষ উপাদান যেটি ত্বকে সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। ত্বকের আর্দ্র ভাব ধরে রাখতে স্নানের পর পেট্রোলাতুম-যুক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগানো আবশ্যক।
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রিচ: অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার বাছুন কারণ এটি ত্বকের মৃত কোশ সরিয়ে ত্বক করে কোমল এবং বলিরেখা থেকেও ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।
ময়েশ্চারাইজার লাগাবার সময়
- স্নানের পর ত্বক একটু ভিজে থাকা অবস্থাতেই ময়েশ্চারাইজার লাগান, তাতে পরিণাম আরও ভালো হবে
- ত্বক যদি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয় তাহলে অ্যাসিড এবং গন্ধছাড়া ময়েশ্চারাইজার বাছুন
- সবসময় ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার এবং প্রসাধনী ব্যবহার করবেন
- ত্বকে খুব গরমজল লাগাবেন না কারণ তাতে ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের ঘাটতি দেখা যায়
- শরীর হাইড্রেট রাখার জন্য সারাদিনে ১০-১২ গেলাস জল অবশ্যই পান করবেন, সঙ্গে পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলাটাও জরুরি
- সারাদিনে অন্তত দুবার ময়েশ্চারাইজার লাগানো বাঞ্ছনীয়
- যদি মনে হয় ত্বক বেশি ড্রাই হয়ে পড়ছে তাহলে আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল ত্বকে লাগান।
তৈলাক্ত ত্বকেও প্রয়োজন ময়েশ্চারাইজার
অনেকেই মনে করেন তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগের কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু যেমনি শুষ্ক ত্বকের প্রয়োজন হাইড্রেশন-এর তেমনি অয়েলি স্কিন-এর জন্যও এর প্রয়োজন আছে। কারণ ধুলোমাটি, দূষণ, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রে-এর কারণে ত্বক আর্দ্রতা হারিযে ফেলে এবং ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে এমন ময়েশ্চারাইজার ত্বকের জন্য বাছা উচিত যেটি সিলিকন বেসড, কারণ এটি ত্বককে গ্রিজি না করেই হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে।