আজকের যুবসম্প্রদায়ের কাছে খবরের গুরুত্ব কতটা? খবরের কাগজ বা অন্য গণমাধ্যমেরই বা গুরুত্ব কতটা? বস্তুত গণমাধ্যম একটি রাজনৈতিক চেতনা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা তৈরি করবে যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে এটাই অভিপ্রেত। কিন্তু আজকাল সংবাদ পরিবেশন থেকে সংবাদ চয়ন সবই যেন বিপদজনক ভাবে বদলে গেছে।
আজকাল কি যথেষ্ট পরিমাণে তেমন সংবাদ পরিবেশিত হয় যা এই ইযং জেনারেশনের আর্থিক মন-কে ইন্ধন জোগাবে? তাদের প্রজ্ঞা ও জিগিষাকে জাগিয়ে তুলবে। না বরং পুরোটাই যেন পেজ থ্রি সেলিব্রিটিদের গুরুত্ব দিয়ে খবর পরিবেশনের এক বিপণি কৌশল। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ঘটা ছোটোখাটো ঘটনাকেও সংবাদ বানিয়ে পরিবেশন করতে সিদ্ধহস্ত এইসব মিডিয়া। এইসব খবর জেনে কি সত্যিই ঋদ্ধ হবে যুবসমাজ?
অভিনেতা-অভিনেত্রী তথা স্টারদের একটা আলাদা চার্ম আছে। তাদের এক ঝলক দেখার জন্য ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। ফিল্ম দেখুন, ধারাবাহিক দেখুন, তারকাদের কাজের মূল্যায়ন করুন কিন্তু তাদের জীবনশৈলীকে আপনার জীবনের অঙ্গ করবেন না।
আফশোসের বিষয় হচ্ছে আজকাল নামজাদা স্কুল থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েদেরও নিজেদের ব্যক্তিত্ব, নিজেদের মৌলিক চিন্তা-ভাবনা গড়ে ওঠে না। তারা মদ্যপান, ব্র্যান্ডেড পোশাক-আশাক, স্টারদের জীবনশৈলী, কস্টলি টুর, বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যেতে পারেন অথচ কোনও রাজনৈতিক বোধ, সমাজচেতনা কিছুই তাদের গড়ে ওঠে না। বস্তবের মাটির সঙ্গে কোনও সংযোগই নেই আজকের প্রজন্মের। তাঁরা না নিজের মাতৃভাষাটা ভালো ভাবে বলতে পারেন, আর না ইংরেজিটা রপ্ত করতে পেরেছেন।এটাই Youth and Indian society -র আদত ছবি৷
বিশেষ করে ইন্টারনেট ও গেমিংয়ে আসক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও যুব সম্প্রদায়৷ পাবজি-ফ্রি ফায়ার, ফেসবুক, ইন্টারনেট, মেসেঞ্জার, রিলস-এই এখন তাদের ব্যস্ত সময় কাটে। বিভিন্ন দোকান, মোড়ে ও শহরের অলি-গলিতে ব্রডব্যান্ড লাইন, ফ্রি ওয়াই-ফাই, বিভিন্ন ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়। অভিভাবক, এলাকার মুরুব্বি, শিক্ষক, বড়ো ভাই কারও কথায় তারা কর্ণপাত করে না। সেই সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের এ ব্যস্ততা। দুপুরে কোনোরকমে স্নানটা করে, কেউ খেয়ে আবার কেউ না খেয়েই বসে পড়ে গেম-এর আসরে।Extreme internet addiction তাই লাভের বদলে ক্ষতিই করছে৷
এই কারণেই এদের ভুল বোঝাতে, পথভ্রষ্ট করতে কিছু মানুষ সুযোগ পেয়ে গেছে। ধর্ম এবং রাজনীতি থেকে যে বড়ো মুনাফা করা সম্ভব, তা এই দুষ্টচক্র জেনে গেছে। যুবসমাজকে খঞ্জ বানিয়ে রাখতে তাই এরা সদাসচেষ্ট। রোজগারহীন, লক্ষ্যহীন যুবকদের জ্ঞানের পরিধি যত কম হয়, ততই সুবিধা এই মুনাফাবাজদের।
গরিবরাও তাদের সমস্যার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। কিন্তু ধনীদের সমস্যা কম, ফলে ধারণাও কম। এই বিত্তশালী সম্প্রদায়ের যুবসমাজকে দুর্বল করে রাখাই রাজনৈতিক অসাধু ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য। যাতে তারা বেকারিত্ব নিয়ে ভ্রষ্টাচার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন কিংবা প্রতিবাদ না করতে পারে।