প্রতিটি বাড়িতে রান্নাঘরে-র প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। একটি পরিবারে সকলে সুস্থ ও প্রাণচঞ্চল থাকতে হলে পুষ্টিকর খাবারের অবশ্যই দরকার এবং সেটার জন্যই প্রয়োজন হয় পরিষ্কার রান্নাঘরের। এই দায়িত্বে সাধারণত থাকেন বাড়ির গৃহিণীরা,তাই  পাকশালার পরিচ্ছন্নতা যাদের হাতে।

বাড়ির মধ্যে রান্নাঘরই এমন একটি জায়গা যেটা সারা পরিবারকে একই সূত্রে বেঁধে রাখে। সকালে চোখ খোলা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবধি, রান্নাঘরের প্রয়োজন পরিবারের সকলেরই হয় এবং এর দায়িত্বে বেশিরভাগই থাকেন বাড়ির কর্ত্রী। সুতরাং উনি নিজেই করুন অথবা বাড়ির কর্মচারীদের দিয়ে রান্নাঘর রোজ পরিষ্কার করান, পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি ওনারই এক্তিয়ারভুক্ত।

রান্নাঘরে প্রস্তুত প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পরিবারের মানুষজন ও তাদের শরীর-স্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। রান্নাঘরের প্রতিটি বাসন, জিনিসপত্র রাখার তাক, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট্স প্রতিদিন পরিষ্কার করে ঝকঝকে করে রাখা গৃহিণীর বড়ো দায়িত্ব কারণ এর মূলে আছে পরিবারকে সুস্থ রাখা। সুতরাং এটা জানা খুবই প্রয়োজন যে কীভাবে অথবা কোন জিনিসের প্রয়োগ করলে আমার রান্নাঘরকে ঝকঝকে পরিষ্কার করে রাখতে পারব। আরশোলা, মশা, মাছি, পোকামাকড় ইত্যাদি যাতে রান্নাঘরের কোথাও বাসা না গেড়ে বসে, বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাও।

রান্নাঘরের তাক

রান্নাঘরের তাকে আমরা গ্যাস-আভেন, মাইক্রোআভেন, ওটিজি, মিক্সি ইত্যাদি রেখে কাজ করি। এছাড়াও মশলাপাতি, চাল-ডাল ইত্যাদি রান্নাঘরের তাকেই রাখা থাকে। রান্নার তাকেই সবজিকাটা, আটামাখা, রান্নার কাজ করা হয় বলেই তাক নোংরা হয়। এজন্য কাজ শেষ হওয়ার পর, একটা পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে তাক মুছে ফেলতে হবে। সকালে রান্নাঘরের কাজ শেষ হয়ে গেলে গরমজলে লিকুইড সাবান মিশিয়ে অথবা ভিনিগার ঢেলে স্পএ দিয়ে তাক পরিষ্কার করে, তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই চলবে। যদি তাকে, মশলার দাগ ধরে যায় তাহলে বেকিং সোডার সঙ্গে ভিনিগার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাগের উপর রঙ্ম মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে তাক মুছে নিলেই হবে। তাকে নোংরা পড়ে থাকলেই আরশোলা, পিঁপড়ে ইত্যাদিতে রান্নাঘর ভরে যাবে।

গ্যাসআভেন

গ্যাস-আভেন ছাড়া রান্নাঘর কল্পনাই করা যায় না। রান্নাঘরের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর মধ্যে গ্যাস-আভেন সবথেকে প্রয়োজনীয়। খাবার বানাবার সময় আশেপাশে খাবার, মশলাপাতি ইত্যাদি পড়তে থাকে ফলে নোংরা জমা হয়। দুধ-চা পড়লে সময়মতো পরিষ্কার না করে নিলে দাগ চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরমজলে বেকিং সোডা এবং ভিনিগার দিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাগের উপর কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। তারপর হালকা করে রগড়ালেই দাগ উঠে যাবে। গ্যাস-আভেনের বার্নার রোজ লিকুইড সোপ এবং পুরোনো দাঁতের ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। শুকনো, নরম কাপড় দিয়ে আভেন রোজ মুছে নিলে, আভেন ঝকঝক করবে।

বেসিন ড্রেনেজ ব্যবস্থা

রান্নাঘরে সবথেকে তাড়াতাড়ি নোংরা হয় বেসিন। সবজি ধোয়া থেকে শুরু করে এঁটো বাসনপত্র ধোয়া পরিষ্কার করা সবই বেসিনের উপর হয়ে থাকে। বেসিনের কাজ শেষ হলে অল্প লিকুইড সোপ এবং ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে প্লাস্টিকের স্ক্রাব দিয়ে রগড়ে জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই বেসিন ঝকঝক করবে। চিনেমাটির বেসিন হলে সপ্তাহে একবার ব্লিচিং পাউডার বেসিনে মাখিয়ে রাখুন। সকালে নরম স্পএ দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই বেসিন ঝকঝকে হয়ে উঠবে। রান্নাঘরের ড্রেনেজ পাইপ সবসময় পরিষ্কার রাখা খুব দরকার। বেসিনে ধোয়া বাসন থেকে খাদ্যদ্রব্য, ড্রেনেজ পাইপের ভেতরে আটকে যায় আর পরে পচে গিয়ে দুর্গন্ধ বেরোয়। নানারকম পোকামাকড়েরও জন্ম হয়।

সপ্তাহে অন্তত দু’বার ১ কাপ বেকিং সোডা এবং ১ কাপ সাদা ভিনিগার মিশিয়ে পাইপে ঢেলে দিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এরপর  গরম জল ঢেলে দিলে পাইপের সমস্ত নোংরা মুহূর্তে দূর হয়ে যাবে। সবথেকে ভালো হয় যদি রাত্তিরে মিশ্রণটি পাইপে ঢেলে দিয়ে সারা রাত্তির রেখে দেওয়া যায়। সকালে ফুটন্ত জল বেসিনের পাইপে ঢালুন। পাইপ সম্পূর্ণ কীটাণুমুক্ত হয়ে যাবে।

ডাস্টবিন

 ডাস্টবিন সাধারণত রান্নাঘরেই রাখা হয়, বেসিনের নীচে। ঢাকা দেওয়া ডাস্টবিন হলে সবথেকে ভালো হয়। ডাস্টবিনে সরাসরি নোংরা ফেলা উচিত নয়, বোরেক্স পাউডার ছড়িয়ে পলিথিন ব্যাগ লাগিয়ে দিন। ওই ব্যাগের ভিতর নোংরা ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন ডিটারজেন্ট পাউডার ও লিকুইড সোপ মিশিয়ে ডাস্টবিন ভালো করে রগড়ে পরিষ্কার করুন এবং শুকিয়ে নিন। ডাস্টবিন ঝকঝকে পরিষ্কার থাকবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...