নুনের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য-তালিকায় নুন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। ভারতবর্ষে প্রতিদিন একজন ব্যক্তি ১৫ গ্রাম নুন, খাবারের সঙ্গে সেবন করে। নিউট্রিশনিস্টরা দৈনন্দিন একজন ব্যক্তিকে ৪ গ্রাম নুন খাবার পরামর্শ দেন। আমাদের শরীরের বিকাশের জন্য সোডিয়াম একটি খুবই জরুরি তত্ত্ব। অথচ এই সোডিয়ামই যখন শরীরে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয় তখন নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন– অ্যাজমা, বুকে জ্বালা ভাব, হাড়ের রোগ, ফোলা ভাব, রক্তচাপ বৃদ্ধি ইত্যাদি। এই সব রোগের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে খাবারে right quantity of salt প্রয়োগ করা উচিত। আসুন necessity of salt in healthy diet সম্পর্কে জেনে নিই৷
শরীরে নুন কম হয়ে গেলে পেশির সংকোচন ঘটে ফলে ক্র্যাম্প ধরে, মাথা ঘোরে, পা ফুলে যেতে পারে এবং বয়স বাড়লে জটিল স্নায়ুরোগের শিকার হওয়াও অসম্ভব নয়। যারা নুন খুব কম খায়, তাদের জল খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে ফলে এদের ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের শিকার হওয়া খুব স্বাভাবিক।
নুন অনেক প্রকারের হয়। বাড়িতে আমরা বেশিরভাগই প্যাকেট করা আয়োডাইজড নুন ব্যবহার করে থাকি। বাজারে নানা ধরনের নুন পাওয়া যায় কিন্তু তার উপকারিতা অথবা অপকারিতা না জেনে সেগুলি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় নয়।
নুনের বৈচিত্র্য
সামুদ্রিক লবণ– সাধারণ নুনের মতো এটিও আমাদের খাবার জন্য উপযুক্ত। এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়োডিনের মতো উপাদান প্রাকৃতিক রূপে ভরপুর পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে। এই নুন অন্যান্য নুনের থেকে, প্রকারে ও স্বাদে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণ নুনের থেকে এই নুনে খনিজ পদার্থের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। সমুদ্রের গন্ধও এই নুনে বিদ্যমান থাকে।
অপরিষ্কৃত পাহাড়ি লবণ — এই নুনে নানা রকমের খনিজ পদার্থ রয়েছে। কিন্তু এটি দেখতে এবং স্বাদে অন্যান্য নুনের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়াও এটি খাদ্যবস্তুতে স্বাদ ও গন্ধের জন্য ব্যাবহার করা হয় না। স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহৃত আলু, মাংস, সি-ফুড অথবা পোলট্রি ফুডে এই নুন ব্যবহার হয়ে থাকে।
বিটনুন– এটি বিশেষভাবে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়াবার জন্য প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এটির খুব বেশি ব্যবহারে জয়েন্ট-এ ব্যথা, রক্তশূন্যতা, ক্লান্তি এবং রক্তনালিতে অবরোধ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কয়েকটি পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, গর্ভাবস্থায় যে নারীরা বিটনুন বেশি খান, তাদের সন্তান দুর্বল হয়ে জন্মায়। এছাড়া যে-কোনও অসুখ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এই নতুন প্রজন্মের মধ্যে থাকে না।
কম ও বেশির পার্থক্য
স্ট্যানডার্ড ফুড এজেন্সি অনুসারে, ১০০ গ্রাম খাবারে ১.৫ গ্রাম নুন যদি দেওয়া হয় তাহলে এটা প্রয়োজনের থেকে বেশি। আর যদি ০.৩ গ্রাম নুন দেওয়া হয় সেটা প্রয়োজনের থেকে অনেকটাই কম।
‘রেডি টু কুক’ খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা সোডিয়ামের মাত্রাকে ২.৩৫ গুন বাড়িয়ে ওই খাবারে নুনের মাত্রা জেনে নেওয়া সম্ভব। যদি প্যাকেটের গায়ে সোডিয়ামের মাত্রা লেখা থাকে ৩ গ্রাম, তাহলে ওতে নুনের পরিমাণ হবে ৭.৫ গ্রাম।